X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কিমকে আলোচনার টেবিলে বসানোর কৃতিত্ব কি ট্রাম্পের?

ফাহমিদা উর্ণি
২৭ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:২৮আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:৫৮
image

কোরীয় সম্মেলনকে ঘিরে উত্তর ও দক্ষিণের আলোচনা শুরুর পরপরই চলতি বছর জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড  ট্রাম্প এর কৃতিত্ব দাবি করেছিলেন। দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট মুনও ট্রাম্পের দাবির সঙ্গে একমত হয়েছিলেন। এর প্রায় তিন মাস পর মার্চের শেষ নাগাদ উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে দুই কোরিয়ার বৈঠকের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেওয়ার পাশাপাশি কিম-মুন বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও তারিখ জানানো হয়। আজ সেই বৈঠকের পর এখন প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্প সত্যিই এর কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন কিনা। বিশ্লেষকরা ট্রাম্পকে দুই কোরিয়ার সংলাপের একক কৃতিত্ব দিতে নারাজ। তারা বলছেন, আদতে যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার টেবিলে আনতেই দক্ষিণ কোরিয়া ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দেওয়ার কৌশল নিয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সংলাপের বাস্তবতা তৈরিতে মূল ভূমিকা আদতে সিউলেরই। বিশ্লেষকদের অপর একটি অংশ চীনকেও এর কৃতিত্ব দিতে চান। তাদের মতে, বেইজিংয়ের নিষেধাজ্ঞায় উত্তর কোরিয়া বৈঠকের চাপ অনুভব করেছে।

মুন, ট্রাম্প ও কিম
জানুয়ারিতে নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তায় উত্তর কোরিয়া দক্ষিণের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনে রাজি হয়। এর কয়েকদিনের মাথায় শীতকালীন অলিম্পিকে যোগ দিতে সম্মত হয় পিয়ংইয়ং। জানুয়ারির আগ পর্যন্ত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দুই কোরিয়ার চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এটা ছিল নাটকীয় পরিবর্তন। শীতকালীন অলিম্পিকে কিম পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বোন কিম ইয়ো জংকে পাঠান। বোনের সঙ্গে দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্টকে উত্তর কোরিয়া সফরের আমন্ত্রণপত্রও পাঠান। যা উভয় দেশের সম্পর্ককে স্বাভাবিকতায় নিয়ে আসে। একইভাবে দক্ষিণ কোরীয় দূতের মাধ্যমে ট্রাম্পকেও আমন্ত্রণ পাঠান কিম। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রনেতারা বৈঠকে বসার সুযোগ তৈরি হয়।

শীতকালীন অলিম্পিক প্রশ্নে দুই কোরিয়ার সমঝোতার কয়েকদিন পর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি টুইট করেন। টুইটে বলা হয়: ‘সকল ব্যর্থ ‘বিশেষজ্ঞ’ যুক্তিকে সরিয়ে কেউ কি সত্যিই বিশ্বাস করবে যে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যে আলোচনা চলছে তা আমি দৃঢ় না থাকলে হতো না। আমি শক্ত না থাকলে, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের সামগ্রিক সক্ষমতা ব্যবহারের অঙ্গীকার না করলে এমনটা হতো না। যাই হোক, আলোচনাটাই বড় কথা!’

এর কয়েকদিন পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনও ট্রাম্পকে কৃতিত্বের দাবিদার বলে উল্লেখ করেন। মুন প্রকাশ্যে বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বড় ধরনের কৃতিত্বের দাবিদার। তিনি বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা ও চাপের ফলাফল এটি।

২০০৬ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা উত্তর কোরিয়ার  ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার ওপর ৯ দফা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাস করে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত। কয়েক বছর ধরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হলো। ২০০৬ সালে প্রাথমিকভাবে জাতিসংঘ যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা ছিল ভারি অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ, ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এবং বিলাসবহুল মালামাল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আওতা বিস্তৃত হয়। এ সময়ের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার তেল আমদানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, লোহা, কৃষিজাত পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত উত্তর কোরীয় নাগরিকদের বিতাড়িত করারও দাবি জানানো হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর কোরিয়ার ৫০ জাহাজ ও সামুদ্রিক পরিবহন কোম্পানির ওপর অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন এই অবরোধকে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশল বলে অভিহিত করেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মিত্র দেশ চীনও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সম্মতি দেওয়ায় চাপের মুখে পড়ে পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার মোট বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি চীনের সঙ্গে হয়ে থাকে। অতীতে দেখা গেছে, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা যখন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দিতো তখন তাতে চীন খুব কমই সমর্থন দিতো। কিন্তু গত বছর নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পক্ষে সম্মতি দেয় চীন। চাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ গবেষক জন নিলসন রাইট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, সামরিকভাবে নিজেদের সক্ষমতার যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছেন কিম। তিনি এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। সে কারণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কিমকে অস্ত্র সমৃদ্ধকরণ থেকে ঠেকানো না গেলেও, নতুন পদক্ষেপ কিমের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাহত করতে পারে।

কিম ও মুন
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার লক্ষ্য কী তা সুস্পষ্ট নয়। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণেই আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত হয়েছেন কিম। আসান ইন্সটিটিউটের গবেষক কিম বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বৈঠককে উত্তর কোরিয়া দেখছে ‘ওয়াশিংটনকে শান্ত করার এবং নিষেধাজ্ঞার মতো ইস্যুগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার একমাত্র পথ’ হিসেবে।

অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ভারজিনি গরজেলচোজিক মনে করেন, আলোচনার জন্য দক্ষিণ কোরীয়দেরই কৃতিত্ব বেশি। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরীয়দেরই কৃতিত্বটা বেশি দেওয়া উচিত। কারণ, তারাই প্রকৃতপক্ষে নিশ্চিত করতে চেয়েছে, উত্তর কোরীয়রা অলিম্পিকে আসুক এবং সে অলিম্পিক খুব দ্রুত আয়োজন করা হোক।’

তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া কেন ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিচ্ছে? অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ভারজিনি গরজেলচোজিক বলেন, ‘মার্কিনিদের আলোচনার টেবিলে আনতে দক্ষিণ কোরিয়া কৌশলে কাজ করছে। কারণ, দুই কোরিয়া কিছু ক্ষেত্রে আমেরিকান নীতি দ্বারা বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন।’

উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে জুং (১৯৯৯-২০০৩) এবং রোহ মুন হিউন (২০০৩-২০০৮) উত্তর কোরিয়ার প্রতি সানশাইন পলিসি গ্রহণ করেছিলেন। মুন জায়ে ইনের আগে সাবেক এই দুই প্রেসিডেন্টই উত্তর কোরিয়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ২০০০ এবং ২০০৭ সালে এসব আন্তঃকোরীয় সম্মেলন হয়েছিল। কিম দায়ে জুং তার প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের আগের দুই প্রেসিডেন্ট হলেন লি মিয়ুং বাক এবং পার্ক জিউন হাই। ২০০৮-২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা লি মিয়ুং বাক উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। এরপর ২০১৩-২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পার্ক জিউন হাই। তিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের শুরুতে ওই কৌশলটির সমাপ্তি ঘটে। ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুন জায়ে ইন। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যা কিছু প্রয়োজন’ করবেন।

/বিএ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে সিরিজ ভূমিকম্প
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী