ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরের কাঠুয়ায় আট বছরের শিশুকে সাতদিন আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ শেষে খুনের ঘটনায় করা মামলার শুনানি আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
কাঠুয়ার ওই সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা নিয়ে দুইটি পিটিশন ইতিমধ্যে জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। একটি করা হয় বিভৎসতার শিকার শিশুটির বাবার পক্ষ থেকে। পিটিশনে তিনি আদালতের কাছে মামলাটি জম্মু কাশ্মীরের সেশন কোর্ট থেকে সরিয়ে চন্ডীগড়ে স্থানান্তরের আর্জি জানান।
তার আশঙ্কা, জম্মুতে মামলাটি শান্তিপূর্ণভাবে চলতে দেওয়া হবে না। অপরদিকে অভিযুক্তদের তরফেও একটি পিটিশন জমা করা হয়। সেখানে এই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
এদিন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রার বেঞ্চ জানান, ৭ মে এ দুই পিটিশনের শুনানি হবে। তবে মামলায় ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটলে এবং এতটুকুও ন্যায় বিচার না পাওয়ার আভাস পেলে সেখান থেকে মামলাটি সরিয়ে চন্ডীগড়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে সতর্ক করে দেন আদালত।
২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি কাশ্মিরের কাঠুয়ার উপত্যকায় ঘোড়া চরানোর সময় অপহৃত হয় আসিফা। দশ দিন পর তাকে বাড়ির কাছেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ১০ এপ্রিল ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র জনসম্মুখে আনা হলে বিচার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে সারা ভারত। আদালতে দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, ওই শিশুকে অপহরণের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও দেবীস্থান মন্দিদের হেফাজতকারী সানজি রাম তার ভাগ্নে ও একজন পুলিশ সদস্যকে নির্দেশ দেয়। নির্দেশ বাস্তবায়নের পর সাত দিন ধরে মন্দিরে আটকে রেখে একদল হিন্দু পুরুষ ধর্ষণ করে আসিফাকে। পরে মাথায় পাথর মেরে ও গলা টিপে হত্যা করা হয় তাকে। আসিফাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটজনকে অভিযুক্ত করেছে ভারতের আদালত।
মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায় অপরাধের শিকার ওই শিশুর ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে অভিযুক্তরা। বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, বিভৎসতার শিকার শিশুটিকে আটক রাখা হয়েছিল, চেতনানাশক দেওয়া হয়েছিল আর শ্বাসরোধের কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছিল।
ময়নাতদন্তে শিশুটিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তদন্তে নেমে আটজনকে গ্রেফতার করে জম্মু কাশ্মীরের পুলিশ। পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ কাঠুয়া জেলা আদালতে দুটি পৃথক চার্জশিট জমা করে। এতে বলা হয়েছে, অপহরণের পর ড্রাগ দিয়ে আচ্ছন্ন করে একটি মন্দিরের ভেতর একে একে অভিযুক্তরা ধর্ষণ করে। আটদিন ধরে এই নির্যাতন চলার পর শিশুটিকে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়। সংবাদমাধ্যমের সুবাদে বর্বরোচিত এ ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিবাদ-সমালোচনার মুখে ভারতের মন্ত্রিসভা আইন সংশোধন করে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বিধান করে। সূত্র: কলকাতা ২৪, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।