মানুষের অভ্যন্তরে জন্ম নেওয়া কৃত্রিম অহমবোধকে পুড়িয়ে সহজাত প্রবণতাসম্পন্ন মানুষের উত্থান ঘোষণার উৎসব বার্নিং ম্যান-এর প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি হার্ভে মারা গেছেন। শনিবার (২৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে নিজ বাসভবনে তার জীবনাবসান হয়। বার্নিং ম্যান সংগঠনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি খবরটি জানিয়েছে।
প্রতি বছর বার্নিং ম্যানের বার্ষিক আয়োজনে অংশ নিতে নেভাদার ব্ল্যাক রক ডেজার্টে ভিড় করেন ৭০ হাজার মানুষ। এখানে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া নানা শিল্প স্থাপনা এবং কাঠের তৈরি বড় বড় মানব আকৃতিকে নিয়ে আসা হয়। অনুষ্ঠান শেষে সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুনে মানুষের দেহের আকৃতির কাঠের মূর্তিকে পোড়ানোর মধ্য দিয়ে আদতে পোড়ানো হয় মানুষের ‘অহম’ কিংবা ‘আত্মরতি’ কিংবা ‘আমিত্ব’। সবমিলে বর্ণ-লিঙ্গ-শ্রেণিসহ নানান ধারার বৈষম্যে স্থিতিশীল থাকা সমাজের হয়ে উঠা মানুষের প্রতিকৃতিকে পুড়িয়ে সত্যিকারের সহজাত প্রবণতাসম্পন্ন মানুষের উত্থান ঘোষণা করা এই বার্নিং ম্যানের উদ্দেশ্য।
বার্নিং ম্যান সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ওই উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা ৭০ বছর বয়সী ল্যারি হার্ভের জীবনাবসান হয়েছে। এ মাসের শুরুর দিকে তিনি স্ট্রোক করেছিলেন। শনিবার সকালে নিজের বাড়িতেই মৃত্যু হয়েছে হার্ভের। বার্নিং ম্যানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়ান গুডেল লিখেছেন: ‘ল্যারিকে কখনোই মাপা যায়নি। তাকে মাপকাঠি দিয়ে মাপা যায় না। তিনি যেভাবে জীবন কাটাতেন তার মধ্য দিয়ে মাপকাঠিকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন এক নান্দনিক মালি, একজন দার্শনিক, একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, এক বুদ্ধির ঝলক, একজন লেখক, এক অনুপ্রেরণা, একজন উদ্যোক্তা, একজন পরামর্শক এবং একদিক থেকে একজন ট্যাক্সি চালক ও একজন বাইক মেসেঞ্জার।’
ল্যারি হার্ভে সম্পর্কে মারিয়ান গুডেল আরও লিখেছেন: ‘আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তার অনুপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে অনুভব করব। কিন্তু তিনি যে ধরনের স্পৃহার মানুষ ছিলেন, সত্যিকার অর্থে তাকে আমরা কখনও মন থেকে সরাতে পারব না।’
১৯৮৬ সালের জুনে বার্নিং ম্যান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় হার্ভে এবং তার বন্ধু জেরি গুডেল উত্তরায়ন সংক্রান্তি পালনের জন্য সান ফ্রান্সিসকোর বেকার বিচে কাঠের তৈরি একটি মানবাকৃতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে এটি উৎসবে পরিণত হলো। ১৯৯০ সালে নেভাদার ব্ল্যাক রক ডেজার্টে প্রথমবারের মতো উৎসবটি উদযাপন করা হয়। শিগগিরই এ আয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বপরিচিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হলো। ২০১৫ সাল নাগাদ বার্নিং ম্যান প্রকল্পের বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছিল। এর মধ্য থেকে ৩ কোটি ৪ লাখ ডলার অনুষ্ঠান পরিচালনা বাবদ ব্যয় করা হয়।