X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘কাশ্মির: দ্য কেস ফর ফ্রিডম’ বইতে কী লিখেছেন অরুন্ধতী ও তারিক আলি

বিদেশ ডেস্ক
০৮ মে ২০১৮, ১৯:০৪আপডেট : ০৯ মে ২০১৮, ০৯:৩৪

কাশ্মিরে যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে তখনই আবার এই ইস্যুতে সামনে এলেন ভারতের বুকারজয়ী লেখিকা অরুন্ধতী রায়। ‘কাশ্মির: দ্য কেস ফর ফ্রিডম’ শীর্ষক বইটিতে তার সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক তারিক আলি, ভারতীয় ঔপন্যাসিক পঙ্কজ মিশরা, নৃবিজ্ঞানী ও মানবাধিকার কর্মী অঞ্জনা চ্যাটার্জি ও হিলাল ভাট। আর ছিল ষোড়শ শতকের কাশ্মিরি কবি হাব্বাহ খাতুনের কিছু কবিতা। ‘কাশ্মির: দ্য কেস ফর ফ্রিডম’ বইতে কী লিখেছেন অরুন্ধতী ও তারিক আলি

গত কয়েক বছর ধরে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে বসবাসরত স্থানীয় যুবকদের সশস্ত্র জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। অতীতে স্কুল থেকে ঝরে পড়া তরুণ-যুবক ও স্বল্প শিক্ষিতরা সশস্ত্র সংগঠনে জড়িত হলেও সম্প্রতি এই প্রবণতায় যোগ দিচ্ছে উচ্চ শিক্ষিতরা। অভ্যন্তরীণভাবে গড়ে ওঠা জঙ্গিবাদ ও সংশ্লিষ্টদের তৎপরতায় সেখানে বাড়ছে উদ্বেগ ।

কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত। কেউ কেউ আবার কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। ইতিহাস পরিক্রমায় ক্রমেই সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইসলামিকরণ হয়েছে। এখন সেখানকার বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল মুজাহিদিন সবচেয়ে সক্রিয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য কাশ্মিরের জাতিমুক্তি আন্দোলনকে জঙ্গিবাদী তৎপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করে।

২০১৮ সালের প্রথম চার মাসেই কাশ্মিরে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে। সরকারি হিসাব মতে, নিহতদের মধ্যে ৫৫ জন জঙ্গি, ২০ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ২৫ জন বেসামরিক লোক। নিহত ৫৫ জঙ্গির মধ্যে ২৭ জনই স্থানীয় বাসিন্দা। এর আগে ২০১৭ সালে ভারতীয় বাহিনীর অভিযানে ২১৮ জন জঙ্গি নিহত হয়েছিলেন।

কাশ্মির নিয়ে প্রকাশিত বইটিতে অরুন্ধতী বলেছেন, ‘কোনও সরকারের কি সেনাবাহিনী দিয়ে জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অধিকার আছে? ভারত কাশ্মিরকে স্বাধীন করতে চায়, একইভাবে ভারত থেকে স্বাধীন হতে চায় কাশ্মির।’

কাশ্মিরে অনেকদিন ধরেই ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, সাংস্কৃতিক উদ্ভাবন, রাজনৈতিক প্রতিরোধ চলে আসছে। বিপরীতে ছিল সামন্ততান্ত্রিক ঔপনিবেশিক আগ্রাসন। বইটিতে কাশ্মিরের চলমান ঘটনাপ্রবাহ ও অতীত ইতিহাস নিয়ে কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই আলোচনা করা হয়েছে প্রতিরোধের ধরণ নিয়ে।

প্রথমদিকে সেক্যুলার জাতীয়তাবাদ ঘরানায় থাকা এই আন্দোলন পরে ইসলামি রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে। এরপর আবারও ফিরে যায় সেক্যুলার জাতীয়তাবাদে। ১৯৪০ এর দশক ও ১৯৮০ এর দশকের শুরুর দিকে শেখ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী বাহিনীই কাশ্মিরে আন্দোলন চলমান রেখেছিল। কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন ছিল তাদের দাবি। তবে গণতান্ত্রিক ওই আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর জম্মু কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্টের মতো কয়েকটি গোষ্ঠী জাতীয়তাবাদী এই জোট থেকে আলাদা হয়ে যায়; শুরু করে গেরিলা অভিযান। অন্যদিকে পাকিস্তানে সে সময় গেরিলা প্রশিক্ষণ চলছিল। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন মোকাবেলায় গেরিলা সেনা সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল তারা। আর তাদের অর্থায়ন করছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বইটিতে অন্তর্ভুক্ত হিলাল ভাটের প্রবন্ধে সাধারণ কাশ্মিরিদের ওপর রাজনৈতিক এই পরিস্থিতির প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। ৯০ দশকের শেষ দিকে ইসলামি গোষ্ঠীগুলো তাদের জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে। কাশ্মিরি আদর্শ থেকেও বিচ্যুতি ঘটে তাদের। এছাড়া ভারতীয় বাহিনীর আগ্রাসনের মুখে সাধারণ মানুষকে দুর্দশা থেকে বাঁচাতেও ব্যর্থ হয়েছিল তারা।

গত দশক ধরে কাশ্মিরে চলা আন্দোলনকে ভারত সরকারের নীতির বিরুদ্ধে একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিরোধ হিসেবেই দেখানো হয়েছে, যা কাশ্মিরকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ আরেকটি যুদ্ধেক্ষেত্র আখ্যা দিয়ে চালানো প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তুলে ধরা প্রকৃত বাস্তবতা।

অঞ্জনা চ্যাটার্জি বলেছেন, ‘কাশ্মির যেন এক বন্দি শিবির। সেখানে প্রতিরোধ বা বিদ্রোহের সম্ভাবনা নেই।’ কাশ্মির নিয়ে এমন মন্তব্যের কারণে অঞ্জনা ও তার স্বামী রিচার্ড শাপিরো ভারতীয় সরকারের রোষানলে পড়েন। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব ইন্টেগ্রাল স্টাডিজ থেকে চাকরি হারিয়েছেন ‍দুইজনই। রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে তাদের ওপর এই দুর্দশা নেমে আসে।

অঞ্জনা বলেছেন, ভারতীয় সরকারের নীতিগত বিশ্বাস এখন এমন যে ভারত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে। এই ঝুঁকিকে সামনে এনে সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে তারা। অথচ মূল্যায়নটিই মনগড়া। এটা মূলত হিন্দু উগ্রবাদ, নব্য উদারনীতিবাদ ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের মিশেল। এদের যৌথ প্রভাবেই ধীরে গড়ে উঠেছে জনগণের প্রতিরোধ।

সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মির শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আনা হয়েছে। বোর্ডের প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তকে উর্দু হরফ ‘জা’কে পরিচয় করিয়ে দিতে লেখা হয়েছে, ‘জা’তে জালিম। সেখানে নীল রঙের পোশাক পরা একজন মানুষের ছবি দেখানো হয়েছে, যে  হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বইটির সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে শান্তি বিনষ্টের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র, মানহানি এবং উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। কারণ ছবির ওই নীল রঙের জামা পরা লোকটিকে দেখে পুলিশ মনে হয়।

‘বিতর্কিত’ বিষয়ের ওপর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির কারণে ইংরেজির অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ ভাটকে জেলও খাটতে হয়েছে।

যদি সশস্ত্র বিদ্রোহ, গণবিক্ষোভ ও রাজনৈতিক কৌশল ব্যর্থ হয় তবে স্বাধীনতা আসবে কোন প্রক্রিয়ায়, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি স্বাধীন কাশ্মিরের জন্য লেখা অরুন্ধতীদের বইটিতে। কাশ্মিরের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি অনেকটা ফিলিস্তিনের মতো। যেখানে স্থানীয়রা দখলদারীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না। প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্রগুলো যুক্ত হলেও খুব বেশি লাভ হয় না।

ফিলিস্তিনিদের যেমন প্রতিবেশী দেশগুলোতে বন্ধু আছে, কাশ্মিরিদেরও ভারত ও পাকিস্তানে মিত্র রয়েছে। তাদের দখলের কোনও ইচ্ছা নেই। বরং এই সংকট কাটলে তাদের লাভ হবে। পাকিস্তান ও ভারত সেনাবাহিনীর পেছনে এত অর্থ খরচ না করে যদি দারিদ্র বিমোচনে বরাদ্দ করত তাহলে পরিস্থিতির আরও বেশি উন্নতি হতো। ভারত ও পাকিস্তানের শ্রমজীবীদের একই শত্রু—তাদের নিজেদের রাষ্ট্র। তাই তাদের যৌথ সংগ্রামই পারবে কাশ্মিরে দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে। সমালোচনা করার সামান্য সুযোগ রয়েছে—আরব বসন্তকে কোনও স্পষ্ট যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা না হলেও বইটি জুড়ে এর প্রভাব লক্ষণীয়ভাবে চোখে পড়ে।

/এমএইচ/এএমএ/
সম্পর্কিত
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
লোকসভা নির্বাচন: প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট আজ
সর্বশেষ খবর
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী