X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কঙ্গোতে নতুন তিন ইবোলা রোগী শনাক্ত, বাড়ছে ঝুঁকি

বিদেশ ডেস্ক
১৯ মে ২০১৮, ১৭:৫১আপডেট : ১৯ মে ২০১৮, ১৮:০৭

মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর(ডি.আর কঙ্গো) বানদাকা শহরে নতুন তিন ইবোলা রোগী শনাক্ত হয়েছে। দশ লাখ মানুষের শহরটিতে গত সপ্তাহে এই ভাইরাসে আক্রান্তকে এক রোগীকে শনাক্ত করার পর  শুক্রবার সেখানে নতুন করে ৩ আক্রান্তকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, শহরাঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে ঝুঁকি বাড়ছে। ইবোলা সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করছেন রেডক্রস কর্মী
ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি দুই ধরনের রক্তক্ষরণের শিকার হন। বাহ্যিক রক্তক্ষরণের চেয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ঝুঁকিপূর্ণ। এমন হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ মৃত্যুবরণ করে। সম্প্রতি কঙ্গোতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ২৩ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি ৪৪ জন আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পা্ওয়া যায়। শুক্রবার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বৈঠকে অবশ্য একে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ঘোষণা করা হয়নি।  তবে কঙ্গোকে উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করা হয়। সতর্ক করে দেওয়া হয় প্রতিবেশি নয়টি দেশকে। ওই বৈঠক  থেকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

এক সপ্তাহ আগে কঙ্গোর উত্তরপূর্ব দূরবর্তী অঞ্চলে ইবোলা সংক্রমণের কথা ঘোষণা করা হয়। এরপরই বানদাকা শহরে এই রোগীদের সন্ধান পাওয়া যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। ডিআর কঙ্গোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওলে ইলুঙ্গা কালেঙ্গা জানিয়েছেন, নতুন করে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ার পর এখন দেশটিতে ১৭ জন শনাক্ত হওয়া ইবোলা রোগী আছে। মারা গেছে একজন সম্ভাব্য আক্রান্ত আছে ২১ জন আর সন্দেহভাজন আছে ৫ জন। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অন্তত পাঁচশো মানুষকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন, যারা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন করে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ায় ইবোলার পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকায় কয়েক বছর আগে এই টিকায় সফলতা পাওয়ায় কঙ্গোতেও এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে আক্রান্তদের অনুমতি সাপেক্ষে এই টিকা দেওয়া শুরু হবে। সরকার এবং দাতা সংস্থাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী এরই মধ্যে কঙ্গোতে চার হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে এছাড়া আরও বেশ কিছু ডোজ পৌঁছানোর পথে রয়েছে। এসব টিকা ব্যাপকভাবে ঠাণ্ডায় রাখার দরকার হলেও দুর্বল অবকঠামোর দেশ কঙ্গোতে তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মধ্য আফ্রিকার দারিদ্র পীড়িতি দেশ কঙ্গো। ফাইল ছবি

এর আগেও কয়েক দফা কঙ্গোতে ইবোলা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তবে তার সবগুলোই ছিল গ্রামীণ এলাকায়। দুইবার রাজধানী কিনসাসায় এর অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও দ্রুত এর সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হয়েছিল। কিনসাসার ২৩ বছরের ছাত্র গ্রেস ইকোফো এএফপি-কে বলেছেন, এখনও যদিও তা ঘটলেও আমি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছি। ঈশ্বর আমাদের এই ধরণের ঘটনা থেকে রক্ষা করুক। বানদাকার ৫২ বছর বয়সী শিক্ষক জেন মোপোনো বলেছেন, স্কুলের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য শিক্ষার্থীদের একে অপরের সঙ্গে হাত মেলানো বা চুম্বন এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মোপোনো প্রার্থনা করেন, যেন এই মহামারী তাদের দেশে ছড়িয়ে না পড়ে।

বছর চারেক আগে পশ্চিম আফ্রিকায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইবোলা সংক্রমণের ঘটনায় ১১ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।  সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা করে থাকেন অনেকে। গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ড. রবার্ট স্টিফেন। তিনি বলেন, তাদের সংস্থা এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে বলেই তার বিশ্বাস। তবে যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।

১৯৭৬ সালে প্রথম শনাক্ত হওয়ার এর এই নিয়ে নবমবারের মতো কঙ্গোয় ইবোলা সংক্রমণের ঘটনা ঘটলো। বানর এবং বাদুড়ের মতো বণ্য প্রাণী থেকে প্রথম এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়। দেহ থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন ধরণের রসের (রক্ত, লালা) মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রামিত হয়। ইবোলার উল্লেখযোগ্য কোনও চিকিৎসা নেই। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, ডায়রিয়া, বমি পেশীতে ব্যাথা, অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক রক্তক্ষরণ। ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঘটনায় এই ভাইরাস প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে তা নির্ভর করে এর চাপের ওপরে।

বিকল্প সংবাদমাধ্যম কাউন্টার পাঞ্চ-কে ২০১৪ সালে একটি সাক্ষাৎকার দেন বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য-অধিকার কর্মী অ্যালিসন পোলক। The Origin of Ebola Crisis শিরোনামে তারেক আলীর সঙ্গের সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইবোলা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ তাই ইবোলার প্রাণঘাতি বৈশিষ্ট্য নয়, কারণটা দারিদ্র্যজনিত সঙ্কট। বস্তুত ইবোলা মোকাবেলায় প্রথমত দরকার দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ। দ্বিতীয়ত দরকার শনাক্তকৃত রোগীকে কমিউনিটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে চিকিৎসা সেবা দেয়া। তবে পশ্চিম আফ্রিকার আক্রান্ত দেশগুলোর বাস্তবতায় আলাদা করে আক্রান্তদের রাখবার জায়গার অভাব এবং  চিকিৎসা সরঞ্জাম আর ডাক্তারের অপ্রতূলতার কারণেই ইবোলা হয়ে উঠেছে মারণঘাতি।

 

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
আটলান্টিক মহাসাগরে পাওয়া ৯ মরদেহের পরিচয় নিয়ে যা বললো ব্রাজিল
ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত ৯, উদ্ধার ২২
বিনিয়োগ ও সামাজিক ব্যয়ের প্রতিশ্রুতিতে তৃতীয় মেয়াদ শুরু সিসির
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া