X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইসরায়েলের অভ্যন্তরেই শাণিত হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের পক্ষের কণ্ঠস্বর

বিদেশ ডেস্ক
১৯ মে ২০১৮, ২২:৫১আপডেট : ২০ মে ২০১৮, ০০:১০

সুদীর্ঘকালের জায়নবাদী বিদ্বেষপ্রসূত প্রচারণায় এখনও ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতা সমর্থন করেন সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তারা মনে করে হামাস সমর্থিত বিক্ষোভকারীরা সীমান্তের বেড়া ভেঙে তাদের ওপর সন্ত্রাস চালাতে তৎপর। তা ঠেকাতেই গুলিবর্ষণ করে তাদের সেনাবাহিনী। তবে এই মনোভাবই সেখানকার একমাত্র বাস্তবতা নয়।  রয়েছে বিরুদ্ধবাদ, বিরুদ্ধ মত আর বিরুদ্ধ কণ্ঠস্বর। গাজায় সোমবারের (১৪ মে)  ইসরায়েলি গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে জোরালো হয়ে উঠেছে সেই বিরুদ্ধবাদের কণ্ঠস্বর। বিরোধিতার জমিনে দাঁড়িয়ে রাজনীতিবিদ আর মানবাধিকারকর্মীদের একাংশ বলছে, বছরের পর বছর ধরে গাজার ওপর আরোপিত ইসরায়েলের অবরোধ ও সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অলাভজনক আমেরিকান বার্তা সংস্থা দ্য মিডিয়া লাইন নিজ জনগোষ্ঠীর মতের বাইরে দাঁড়ানো এইসব বিরোধী কণ্ঠস্বরের কথা তুলে এনেছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরেই শাণিত হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের পক্ষের কণ্ঠস্বর
ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল নামের রাষ্ট্র। ১৯৭৬ সালের ৩০ মার্চ ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ইহুদি বসতি নির্মাণের প্রতিবাদ করায় ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। পরের বছর থেকেই ৩০ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পরবর্তী ছয় সপ্তাহকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। এবারের কর্মসূচির শেষ ২ দিনে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ জোরালো হয়ে উঠলে ৬০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। আহত হয় ২৭০০ মুক্তিকামী। নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

নিজ দেশের এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন ইসরায়েলি সংসদ নেসেটের সদস্য মোসি রাজ। বামপন্থি দল মেরেৎজ থেকে নির্বাচিত নেসেট সদস্য মোসি রাজ দ্য মিডিয়া লাইনকে বলেন, গাজা উপত্যকায় বছরের পর বছর ধরে চলা অবরোধের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ সাধারণ প্রতিক্রিয়া। এটা সত্য যে এটাই একমাত্র সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নয় তবে ইসরায়েলের আচরণের এটা যৌক্তিক ফলাফল। রাজ মনে করছেন, সীমান্তের সেনা সদস্যদের অবশ্যই এমন সব পদ্ধতি প্রয়োগের নির্দেশ দিতে হবে যা প্রাণঘাতী নয়। ব্যবহার করার মতো অন্য সরঞ্জামও আছে বলে মত দিয়েছেন তিনি। নির্বিচারি গুলি বর্ষণের বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন, 'নিজের অথবা অন্য সেনাদের জীবন সরাসরি ঝুঁকির মুখে পড়ার আগে তাদের গুলি চালানো উচিত না।' প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের ন্যায্যতা তৈরি করার মতো পরিস্থিতি কখন সৃষ্টি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে রাজ বলেন, 'হ্যাঁ, যদি সশস্ত্র যোদ্ধারা সীমান্ত বেড়ার কাছে আসে তখন কোনও বিকল্প থাকে না।  তবে আমার মনে হয় না এটা গাজায় গুলি চালানোর সাধারণ কারণ।'

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ওপর স্থল, নৌ, ও আকাশ অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। এই অবরোধের কারণে ২০ লক্ষাধিক মানুষের আবাসভূমি চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে গাজা। ইসরায়েলের আইনপ্রণেতা মোসি রাজ মনে করেন সামগ্রিকভাবে গাজা সংকটের কোনও সামরিক সমাধান নেই। এর পরিবর্তে গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি এবং ইসরায়েলে তাদের কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) দেওয়া উচিত বলে মনে করেন রাজ।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে, তাদের হস্তক্ষেপের নীতিই সঠিক আর প্রয়োজনীয়। ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকায় রিজার্ভ বাহিনীর এক সদস্য ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, আমি বলতে চাই যে আমি যা দেখেছি আর শুনেছি তাতে আমাদের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু আর আহত হওয়া ঠেকাতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে রাজনৈতিক একটিভিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী মাইকেল স্ফার্ট সীমান্তের ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের ওপরে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন যদি আমি ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিবৃতি মেনে নেই তাহলে এটা পরিস্কার যে তাদের নীতি অনুযায়ী কেবল যাদের নীতি চ্যালেঞ্জকারী বিবেচনা করা হবে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অনুমোদন রয়েছে। মিডিয়া লাইনকে তিনি বলেন, এই নীতির মধ্যে কোন পূর্ব শর্ত নেই যে জীবনের ওপর সরাসরি হুমকি আসতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনে কেবল তেমন ধরনের হুমকির বেলায় গুলি চালানো বৈধ।

হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে নিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে গাজার মানবিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সীমাবদ্ধতাকেও সামনে আনেন স্ফার্ট। তিনি বলেন, ইসরায়েলি মূলধারার রাজনৈতিক দলগুললো পরিস্থিতির খারাপ অবস্থা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন নয়।  ইসরায়েলি সরকার গাজা উপত্যকায় দারিদ্র্যতা বিমোচনের এক দশকের দীর্ঘসূত্রিত প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানায়। সে কারণে ইসরায়েলিরা মনে করে সব গাজাবাসীরা মানুষ নয়, তারা সন্ত্রাসী।

 উল্লেখ্য, ইহুদি ধর্মের নামে, ‘জায়নবাদ’ নামের মতবাদের মধ্য দিয়েই ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসরায়েল রাষ্ট্র। জায়নবাদ ইহুদি ধর্মের দর্শন নয়, এটি একটি রাজনৈতিক মতবাদ; অলীক রূপকথায় যে মতবাদের শরীর গড়ে উঠেছে। জায়নবাদের ভাষ্য, জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত পবিত্র নগরীতে স্রষ্টা তাদের অধিকার ফিরিয়ে নিতে বলেছিল! ইতিহাসে নজর ফেরালে দেখা যায়, ১৮ শতক থেকে জায়নবাদ নামের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা তাদের বর্ণবাদী ধারণার বিস্তার ঘটিয়ে দখল হওয়া ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম দেন। জায়নবাদের মাধ্যমে তখন থেকে আজ পর্যন্ত ইহুদি জনগণের মনে ফিলিস্তিনবিরোধী বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। সেই বিদ্বেষী প্রচারণা সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসরায়েলিকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি বৈরি করে তুললেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও রয়েছে সেখানে।

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না