দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক পুলিশি নিরাপত্তা দাবি করেছেন। ঠিক কার দিক থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন তা স্পষ্ট না হলেও বার্তা সংস্থা রয়টার্স উল্লেখ করেছে, গত দুদিন ধরে মালয়েশিয়ার জনগণ নাজিবের বাসভবন থেকে বিলাস পণ্য জব্দের ভিডিও দেখেছেন টিভি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মালয় মেইল লিখেছে, পুলিশের কাছে দেওয়া আর্জিটিতে ‘সাক্ষী সুরক্ষার’ কথা উল্লেখ করে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সুনির্দিষ্টভাবে হুমকি দেওয়ার’ প্রেক্ষিতেই তিনি নিরাপত্তা চাইছেন। গত ৯ তারিখে অনুষ্ঠিত মালয়েশিয়ার নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর নাজিব ও তার স্ত্রী রোসমাহ মানসুরের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) নাজিবের বাসভবনে পুলিশ অভিযান চালায়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানিয়ে ছিলেন, রাতে হওয়া ওই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন কয়েক ডজন সশস্ত্র পুলিশ সদস্য। তল্লাশি অভিযান চলে প্রায় ৬ ঘণ্টা। অভিযান শেষে তারা নাজিবের বাসভবন থেকে বেশ কয়েকটি বড় ব্যাগ বের করে নিয়ে ট্রাকে তোলেন। নাজিব রাজাকের আইনজীবী হারপাল সিং গ্রিওয়াল বলেছেন, ‘তল্লাশি অভিযানটি খুব সম্ভবত মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত। তবে এটা এমন বিশেষ কিছু নয়। দুই তিনটা ব্যাগই নিয়েছে তারা।’ ওই আইনজীবীই নিশ্চিত করেছেন, ব্যাগগুলোর সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও নিয়ে গেছে পুলিশ। নাজিবকে গ্রেফতার করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের এমন কোনও কিছু করার লক্ষণ দেখা যায়নি।’ অবশ্য সিএনএন জানিয়েছে, পুলিশ ৭২টি ব্যাগভর্তি নগদ অর্থ ও গহনা জব্দ করেছে। প্রায় ৩০০ বাক্সভর্তি হাতব্যাগও ছিল জব্দ করা মালামালের মধ্যে।
নির্বাচনের আগেই নাজিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রবল হয়ে উঠেছিল মালয়েশিয়ায়। 'ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ' (ওয়ানএমডিবি) নামের সরকারি তহবিল থেকে নিজের ও অনুসারীদের ব্যক্তিগত হিসাবে অর্থ সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, অর্থ নিয়েছেন ‘মালয়েশিয়ার এক নম্বর কর্মকর্তা।’ ওই তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সবাই নাজিব রাজাকের দিকে আঙুল তোলেন। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি তার সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করেছিলেন। গত নির্বাচনে জিতে ৯২ বছর বয়সে আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়া মাহাথির মোহাম্মদ বুধবার জানিয়েছেন, বরখাস্ত হওয়া আব্দুল গনি প্যাটেল ২০১৫ সালের ওই সময়ে নাজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
নাজিব ও তার স্ত্রী রবিবার কুয়ালালামপুর ছেড়ে পাহাং প্রদেশে গিয়েছিলেন। নাজিব পাহাংইয়েরই স্থানীয়। সেখান থেকে ফেরার সময় তিনি পুলিশি নিরাপত্তা চেয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এমনিতেই নাজিবের বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা থাকে। আর তিনি নিজেও পুলিশি প্রহরায় চলাফেরা করেন। রবিবার তার মুখপাত্র সংবাদমাধ্যম বার্নামাকে বলেছেন, ‘১৪তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকা নাজিব তার নিজের ও পরিবারের পুলিশি নিরাপত্তার আবেদন করেছেন।’