X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত আর বাংলাদেশেও ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের শঙ্কা

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
২১ মে ২০১৮, ২৩:১৯আপডেট : ২২ মে ২০১৮, ০০:২০

ইরানের ওপর আবারও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল করায় বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে তেহরানের চলমান যৌথ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পর তাদের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের সঙ্গে থাকা ভারতের থাকা ১৩০০ কোটি ডলারের চুক্তির প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে বাড়তে থাকা বাণিজ্য সম্পর্কে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতেও ইরানের সঙ্গে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত চুক্তিতেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। ভারত আর বাংলাদেশেও ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের শঙ্কা

২০১৫ সালের জুনে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬ জাতিগোষ্ঠীর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।  গত ৮ মে ইরানের বিরুদ্ধে সমঝোতা ক্ষুণ্নের অভিযোগ তুলে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জয়েন্ট কমপ্রিহেন্সিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চুক্তি কার্যকর রাখতে প্রতি তিন মাস পরপর দেশটির প্রেসিডেন্টের সম্মতি দরকার। ১২ মে পরবর্তী তিন মাসের জন্য এই চুক্তিতে ট্রাম্প স্বাক্ষর না করায় যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে সমঝোতা ভেস্তে গেছে।

এরপর সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছেন ইরানের ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ওয়াশিংটনে এক ভাষণে তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার পর নিজেদের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখতে হিমশিম খাবে ইরান।

২০১৬ সালে পরমাণু চুক্তির পর ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি করে ইরান। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় আটকে থাকা ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয় তারা। সে অনুযায়ী হয়তো ইরান-বাংলাদেশ চুক্তি কিংবা ইরান-ভারত চুক্তি বৈশ্বিকভাবে ততটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়। তবে তার মানে এই নয় যে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দ্রুত অর্থনৈতিক বর্ধনশীল দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে তারা লাভবান হয়। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে ভারতের সঙ্গে ইরানের চুক্তির অংক ১৩০০ কোটি ডলার। ইরান বছরে ভারতে ৮০০ কোটি ডলারের জ্বালানি তেল রফতানি করে। আর ভারত রফতানি করে এর এক তৃতীয়াংশ। ফলে আদতে লাভ হয় ইরানের। ভারতের রফতানির বেশিরভাগ অংশ জুড়েই থাকে কৃষিপণ্য, বিশেষ করে বাসমতি চাল। তাই বছরে ৬০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য যেকোনও অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় এখন ইরানে বিনিয়োগ করা ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ইরানের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আকার সে অনুযায়ী ছোট। তবে এখানেও ইরানের লাভই অনেক বেশি। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও।

২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩৮.৯ মিলিয়ন ডলার থেকে রফতানি বাড়িয়ে ৭৫ মিলিয়ন ডলারে নিয়ে আসে। আমদানিও বৃদ্ধি পায়। এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২৫০ মিলিয়ন ডলার। ইরান তাই স্বাভাবিকভাবেই চাইবে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে। দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সহায়তা করেছে ইরান। এই চুক্তিতে আদতে লাভ হয়েছে বাংলাদেশেরই। আর বাংলাদেশ থেকে বিশাল পরিমাণে পাট ও পাটজাত দ্রব্য কিনতে আগ্রহী ইরান।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ভারত বেশ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। কূটনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত তারা। দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, তারা বিষয়টির ওপর গভীরভাবে নজর রাখছে।

এছাড়া ছাবাহার বন্দরকে কেন্দ্র করে ভারত, আফগানিস্তান ও ইরানের ত্রিপাক্ষিক চুক্তির কারণেও এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে ভারতের ওপর। এই প্রকল্প স্থগিত হয়ে গেলে লাভবান হবে পাকিস্তান ও চীন। তাদের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্প এগিয়ে যাবে। ফলে বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তুষ্টি।

ইরানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় ১২টি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সম্প্রতি ভারতে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ভারতে সফরের সময় আরও ৯টি চুক্তি চূড়ান্ত করে।

২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা ‍উঠে যাওয়ার পর ইরানের কাছ থেকে আরও তেল আমদানি করে ভারত। নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এড়াতে ইরান ও ভারত হয়তো রিয়াল ও রুপির বদলে মার্কিন ডলার ব্যবসায়িক মুদ্রা করতে পারে। এছাড়া গম, চাল ও ওষুধ নিয়েও হতে পারে বাণিজ্য।

জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে। ফলে ইরান বাণিজ্যের জন্য ইউরোও ব্যবহার করতে পারে। এতে করে লাভবান হবে চীন ও রাশিয়া। ব্রিকস ও এসসিও সদস্য রাষ্ট্রগুরোও লাভবান হবে। মার্কিন ডলারের প্রভাব কমিয়ে ইউয়ান, রুবল ও রুপির প্রভাব বাড়বে বৈশ্বিকভাবে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পারছে, তা হলো কোনও দেশের ওপর দীর্ঘসময় ধরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি রাখলে সেটা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। রাশিয়া ও ইরান দুই দেশই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকলেও সেটা সামাল দেওয়াও সম্ভব তাদের।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামরিক জোটই এখন চীনের নেতৃত্বে এশীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে আফ্রিকা ও এশিয়ার সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে পরিস্থিতির পরিবর্তন আসতে পারে।

 

/এমএইচ/জেজে/
সম্পর্কিত
লোকসভা নির্বাচন: প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট আজ
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন