X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নিধনে শামিল হয়েছে আরসাও: অ্যামনেস্টি

বিদেশ ডেস্ক
২৩ মে ২০১৮, ০৪:২৩আপডেট : ২৩ মে ২০১৮, ২২:০৫

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রাখাইনের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিও (আরসা) রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে শামিল হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা তদন্তে  যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি এই প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে।  আরসা সদস্যদের বিরুদ্ধে রাখাইনের দুটি গ্রামে অন্তত ৯৯ জন হিন্দু রোহিঙ্গাকে হত্যার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাখাইনে হিন্দু মরদেহের গণকবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়ে হত্যাকাণ্ডের জন্য আরসাকে দায়ী করেছিল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। গত চার মাস ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা সংগঠনটি সে সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। অ্যামনেস্টি বলছে, আরসার আতঙ্কজনক এই আক্রমণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞকে সার্বিকভাবে অনুসরণ করেছে। রোহিঙ্গা নিধনে শামিল হয়েছে আরসাও: অ্যামনেস্টি
গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। তবে মিয়ানমার বরাবর এই অভিযোগ অস্বীকার করে খুন ধর্ষণের দায় আরসার ওপর চাপিয়ে আসছে। সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রথম দিকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এলেও গত ৩১ জানুয়ারির পর থেকে রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে আরসা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সেনা অভিযান শুরুর মধ্যেই সম্ভাব্য এক বা দুটি ঘটনাতেই প্রায় ৯৯ জন হিন্দু রোহিঙ্গাকে হত্যা করে আরসা। সংস্থাটি বলছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গারা নিশ্চিত করেছে উত্তরাঞ্চলীয় মংডু শহরের আশপাশের গ্রামে হিন্দু জনগোষ্ঠীর এসব রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে আরসা। পুলিশি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার দিনগুলোতেই এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অ্যামনেস্টি বলছে, অন্যান্য এলাকাতেও স্বল্প পরিসরে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যায় জড়িত রয়েছে আরসা।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, আরসা সদস্যরা গত বছরের ২৬ আগস্ট রাখাইনের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম আহ নাউক খা মং সেইকে আক্রমণ চালায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৃশংস ও কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে আরসা সদস্যরা হিন্দু নারী, শিশু ও পুরুষদের আটক করে। গ্রামের বাইরে নিয়ে গলা কেটে হত্যার আগে তাদের ওপর নির্যাতনও চালানো হয়। বেঁচে যাওয়া হিন্দুরা অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, তারা হয় নিজের স্বজনদের হত্যা করতে দেখেছেন না হয় তাদের চিৎকার শুনেছেন।

আহ নাউক খা মং সেইকের এক নারী বলেছেন, তারা যে সময় মানুষদের গলা কাটছিল তখন আমাদের সেদিকে না তাকাতে বলা হয়েছিল। তাদের হাতে ছোরা ছিল। এছাড়া তাদের হাতে কোদাল আর লোহার রডও ছিল। আমরা ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে থেকে অল্প বিস্তর দেখতে পাচ্ছিলাম...আমার চাচা, বাবা, ভাই সবার গলা কাটা হয়েছিল। আরসা সদস্যদের বিরুদ্ধে ২০ জন পুরুষ, ১০ নারী ২৩ শিশুকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে ১৪ জনের বয়স আট বছরের নিচে। হিন্দুদের গণকবরের সন্ধানের পর সেখানে সাংবাদিকদের নিয়ে যায় মিয়ানমার

অ্যামনেস্টি বলছে, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে চারটি গণকবর থেকে ৪৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে পাশের ইয়ে বাউক কিয়ার গ্রামে আরসার হাতে নিহত হওয়া অপর ৪৬ হিন্দু রোহিঙ্গার মরদেহের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। ইয়ে বাউক কিয়ার গ্রামে এসব রোহিঙ্গার হত্যাকাণ্ড একই দিনে সংঘটিত হয়েছিল বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। আর এই সংখ্যা নিয়ে মোট হত্যাকাণ্ডের শিকারের সংখ্যা ৯৯ হয়েছে বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হলে নিধনযজ্ঞের অভিযোগ ওঠে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নেপিদোর সরকার ঘোষণা করে রাখাইনে চারটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে তারা। হত্যার শিকার হওয়া এসব রোহিঙ্গা হিন্দু বলে জানায় মিয়ানমার। দাবি করে আরসা সদস্যরা তাদের হত্যা করেছে।

সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় ওই গণকবরে। তবে ইয়ে বাউক কিয়ার ও আহ নাউক খা মং সেইক গ্রামে আসলে কি ঘটেছিল তা তদন্ত করতে  স্বাধীন মানবাধিকার গবেষকদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি।

মিয়ানমার সরকার তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে ব্যাপক আকারে হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নের খবর সামনে আসতে থাকায় তাদের দাবি বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্তিয়েরস–এমএসএফ)-এর দাবি, গত বছরের ২৫ আগস্ট সহিংসতা ছড়ানোর পরবর্তী এক মাসেই প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল। সাম্প্রতিক রিপোর্ট প্রকাশের আগেও অ্যামনেস্টি মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাবিরোধী কাঠামোবদ্ধ প্রচারণার অভিযোগ তুলেছে।

আরসা নেতা আতা উল্লাহ

গণকবরের সন্ধানের খবর সামনে আসার পর এতে কোনও ধরনের সংশ্লিষ্টার কথা অস্বীকার করেছিল মিয়ানমার। তবে গত ৩১ জানুয়ারি সর্বশেষ বিবৃতির পর চার মাস ধরে রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে সশস্ত্র এই সংগঠনটি। তাদের এই নীরবতায় তাদের অস্তিত্ব নিয়ে এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

অ্যামনেস্টি বলছে, আরসার আতঙ্কজনক এই আক্রমণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞকে সার্বিকভাবে অনুসরণ করেছে।

অ্যামনেস্টি বলছে, আরসার স্পষ্টত এই নৃশংসতা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। আমরা বেঁচে যাওয়া যেসব মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের ওপর এই ঘটনা অবিশ্বাস্য ছাপ রেখে গেছে। উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর  মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে এই নৃশংসতার প্রতিটি ঘটনারও স্বচ্ছ বিচার হওয়া উচিত।

 

/জেজে/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ মাওবাদী নিহত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ