২০২৪ সালে দেশব্যাপী আদমশুমারি করতে যাচ্ছে মিয়ানমার। এর আগে ২০১৯ সালে অন্তবর্তীকালীন একটি জনশুমারি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী সচিব আয়ে লুইনকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বার্মিজ সংবাদমাধ্যম ইলেভেন। গতবার ২০১৪ সালে করা আদমশুমারিতে ঠাঁই হয়নি স্থানীয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। এরপর ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এখনও রাখাইনে রয়েছেন এ সম্প্রদায়ের ৭৯ হাজার মানুষ। তবে এবারের শুমারিতেও তাদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও আশাব্যাঞ্জক কোনও আভাস পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারের জনসংখ্যা দফতর প্রতি পাঁচ বছর পর পর জনগণের তথ্য সংগ্রহ করে। তবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে সঠিক তথ্য অনেক সময়ই সংগ্রহ করতে পারে না সরকারি দফতরগুলো। আয়ে লুইন বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বরে সবগুলো তথ্য একত্রিত করবে জনসংখ্যা দফতর। কিন্তু ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এই কাজ করা হবে না। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত এই তথ্যগুলো একত্রিত করা হবে। দেশজুড়ে এমন চার হাজারেরও বেশি ব্লক রয়েছে। এই প্রকল্পে শিক্ষকদের সবাইকে একটি ট্যাব দেওয়া হবে। সব তথ্য একটি সার্ভারে আপলোড হবে। এতে করে তথ্য সংরক্ষণ সহজ ও দ্রুত হবে অনেক।
মিয়ানমারে প্রথম আদমশুমারি হয় ২০১৪ সালে। এর আগে দেশটিতে সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। সশস্ত্র সংঘাতের কারণে অনেক অঞ্চলের মানুষই এতে বাদ পড়ে। তাই ২০১৪ সালের আদমশুমারিকে ঘিরে তৈরি হয় অনেক প্রত্যাশা।
২০১৪ সালের ফলাফল অনুযায়ী, দেশটির জনসংখ্যা পাঁচ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে ১৩৫টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উল্লেখ করা হয়। ১৩৫টি সম্প্রদায় মূলত আটটি জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে কাচিন, কায়াহ, কায়িন, শিন, বামার, মোন, রাখাইন ও শান। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতি আছে। তবে রাখাইন প্রদেশের মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা এবং কাচিন প্রদেশের জাতিগত বিদ্রোহীদের আদমশুমারিতে সে সময় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়ার ব্যাপারে দেশটির সরকার দাবি করে, তারা বাঙালি এবং বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে গেছে। রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি না দিয়ে নির্যাতন চালাতে থাকে সরকারি বাহিনী।
গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
২০১৭ সালে বাংলা ট্রিবিউন আয়োজিত এক বৈঠকিতে শিক্ষক ও গবেষক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘মিয়ানমার তাদের স্বীকার করে না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেবে না বলেই আদমশুমারি থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব দেয়নি। এর পুরোটাই পরিকল্পিত।’
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি সরকারি ও আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে গত ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছে, এখন রাখাইনের তিনটি শহরে অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৩৮ জন।