X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন অভিযোগের কাঠগড়ায় ফেসবুক

বিদেশ ডেস্ক
০৫ জুন ২০১৮, ২০:০০আপডেট : ০৬ জুন ২০১৮, ০৯:০৭

ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকার মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি গ্রাহকের তথ্য চুরির ঘটনায় ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে নতুন অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাইক্রোসফট ও স্যামসাংসহ বিভিন্ন বড় বড় ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকেও ফেসবুকে থাকা গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে জানিয়েছে, কমপক্ষে ৬০টি ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে চুক্তির আওতায় গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করছে ফেসবুক। ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক তথ্যে প্রবেশ করতে পারে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ফেসবুক। এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরই সাবেক কয়েকজন প্রযুক্তিবিদ গ্রাহক তথ্যে ডিভাইস নির্মাতাদের নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতায় স্তম্ভিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে এতে আইন লঙ্ঘনের মতো কিছু ঘটছে বলে মনে করছেন না ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ ফেসবুকের দাবিকে যথাযথ মনে করছেন। তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা, ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যের ওপর ডিভাইস নির্মাতাদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে মনে করছেন ঝুঁকিপূর্ণ। ফেসবুক জানিয়েছে, ডিভাইস নির্মাতারা কোনও গ্রাহকের তথ্য অপব্যবহার করেছে বলে তাদের জানা নেই।

নতুন অভিযোগের কাঠগড়ায় ফেসবুক গত মার্চ মাসে রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকার বিরুদ্ধে ফেসবুকের কয়েক কোটি গ্রাহকের তথ্যের অপব্যবহারের খবর প্রকাশ হয়। এ নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে। ঘটনার পর ফেসবুক কর্মকর্তারা গ্রাহক তথ্যে ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকার প্রবেশাধিকারের কথা স্বীকার করেন। তবে ফেসবুকের প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্যামব্রিজের মতো আর কেউ একই ধরনের প্রবেশাধিকার পাবে না। এপ্রিলে তারা গ্রাহক তথ্যে অন্যের প্রবেশযোগ্যতা রুখতে তাদের ফিচারে কিছু পরিবর্তন আনার কথাও জানায়। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস নতুন অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করালো বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওই সামাজিক মাধ্যমকে। তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রাহক তথ্য সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও সেলফোন-ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন হার্ডওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারকারী আর তাদের বন্ধুদের ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক দাবি করছে, শুধু বিভিন্ন ডিভাইসে ফেসবুকের প্রবেশযোগ্যতা সহজ করার জন্য তারা নির্মাতা প্রতিষ্ঠাগুলোর সঙ্গে তথ্য শেয়ার করছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, স্মার্টফোনগুলোতে ফেসবুক অ্যাপ সহজলভ্য হওয়ার আগেই অ্যাপল, অ্যামাজন, ব্ল্যাকবেরি, মাইক্রোসফট ও স্যামসাংয়ের মতো নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল ফেসবুকের। নিজস্ব অনুসন্ধানসূত্রে নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করেছে, তথ্য আদান-প্রদান চুক্তির আওতায় এমন ৬০টি প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। টাইমসের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, চুক্তির আওতায় অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারকারী ও তাদের বন্ধুদের তথ্যে ডিভাইস নির্মাতাদের প্রবেশাধিকার দিয়েছে ফেসবুক। ব্যবহারকারীর কোনও তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও ডিভাইস নির্মাতা এসব তথ্যে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তির কারণেই ডিভাইস নির্মাতারা গ্রাহককে সামাজিক মাধ্যমের জনপ্রিয় ফিচার, যেমন ‘মেসেঞ্জার’, ‘লাইক বাটন’ বা ‘অ্যাড্রেস বুকে’র মতো সুবিধা দিতে পেরেছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, রাজনৈতিক শিক্ষা, পরবর্তী উৎসব বা কর্মসূচিসহ অন্যান্য ডাটা ব্যবহার করতে পারে। টাইমস অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, ডেভেলপাররা যেভাবে ফেসবুক তথ্যের জন্য অনুরোধ জানায় ও পায়, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও একইভাবে তথ্যে প্রবেশ করতে পারে। তবে এমন অংশীদারিত্বের বিষয়টি কখনও প্রকাশ্যভাবে জানায়নি ফেসবুক। তাই খবরটি প্রকাশ পাওয়ার পর কোম্পানিটির গোপনীয়তা সুরক্ষা নীতি নিয়ে উদ্বিগ্নতা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন-এফটিসির জারি করা নির্দেশনা ভঙ্গেরও অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

এফটিসি’র ২০১১ সালের ডিক্রি অনুযায়ী, বিদ্যমান প্রাইভেসি সেটিংস-এর আওতার বাইরে তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে যে কোনও ধরনের তথ্য বিনিময় করতে চাইলে অবশ্যই ব্যবহারকারীর অনুমোদন নিতে হবে। এফটিসির ওই সমঝোতায় ‘তৃতীয় পক্ষ’র মধ্যে অন্য সব ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বিজ্ঞাপন ও অ্যাপস নির্মাতাদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তবে ডিক্রিতে ফেসবুকের কেন্দ্রীয় পরিচালন পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত ‘সার্ভিস প্রোভাইডার’দের এর আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। ফেসবুক সেখানে দাঁড়িয়ে বলছে, অনুমতি ছাড়াই ডিভাইস নির্মাতাদের গ্রাহক তথ্য সরবরাহ করে তারা আইনবিরোধী কিছু করেনি, যাদের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করা হয়েছে, তারা তৃতীয় পক্ষ নয়। তারা ফেসবুকের কেন্দ্রীয় পরিচালন পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত ‘সার্ভিস প্রোভাইডার’, যারা এফটিসির জারিকৃত ডিক্রির আওতামুক্ত।

এক সাক্ষাৎকারে ফেসবুক কর্মকর্তারাও সেই দাবিই করেছেন। তারা বলেছেন, গোপনীয়তার নীতি, এফটিসি চুক্তি ও গ্রাহকের অনুমোদন সাপেক্ষেই ব্যবহারকারীর তথ্য শেয়ার করা হয়ে থাকে। ডিভাইস নির্মাতারা চুক্তি মেনেই কাজ করেন। এসব চুক্তিতে তথ্যের ব্যবহার কঠোরভাবে সীমিত করা আছে। অপব্যবহারের কোনও ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন তারা। ফেসবুক কর্মকর্তারা বলেন, কোম্পানির দৃষ্টিতে ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুকেরই বর্ধিতাংশ। তারাও ফেসবুকের ২০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারীকে সেবা দেয়।

ব্লগে ফেসবুকের একজন নির্বাহী সোমবার (৪ জুন) লিখেছেন, কোনও ব্যবহারকারী বন্ধুদের সঙ্গে তথ্য (ছবি কিংবা এ ধরনের কিছু) বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নিলেই কেবল ডিভাইস নির্মাতারা তাদের তথ্যে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে থাকে।’ তবে গ্রাহক তথ্যে ডিভাইস নির্মাতাদের এই প্রবেশাধিকারকে ছোট করে দেখতে নারাজ এমন কয়েকজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী; যারা একসময় ফেসবুকেই চাকরি করেছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তারা বলেছেন, তথ্য বিনিময়ের বিভিন্ন বাধা অতিক্রমের ক্ষেত্রে ডিভাইস নির্মাতাদের ক্ষমতা দেখে তারা বিস্মিত হয়েছেন।

ফেসবুকের বিপণন বিভাগের একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমি আরচিবং বিবৃতিতে দাবি করেছেন, তারা যা করছেন, তা এফটিসির ডিক্রিতে জারিকৃত নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। তবে এই দাবি মানতে নারাজ এফটিসির সাবেক কর্মকর্তারা। সাবেক প্রধান প্রযুক্তিবিদ আশকান সোলতানি ফেসবুক আর ডিভাইস নির্মাতাদের সম্পর্কসূত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘ব্যাপারটা এমন যে আপনি দরজায় তালা দিলেন আর তার চাবি আপনার সব বন্ধুর কাছে দিলেন। তারা দেখলো ঘরে তালা দেওয়া। তারপরও তারা ঘরে ঢুকে আপনার অনুমতি ছাড়াই যা খুশি নিয়ে চলে যেতে পারে।’

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপনীয়তা গবেষক সার্জে ইগেলম্যান বলেন, ‘আপনি হয়তো ভাবতে পারেন ফেসবুক অথবা ডিভাইস নির্মাতারা বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু সমস্যা হলো ডিভাইসগুলোর জন্য অনেক বেশি ডাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর যদি ডিভাইসের অ্যাপসগুলোর মাধ্যমে এতে প্রবেশযোগ্যতা তৈরি করা হয়, তাহলে তাতে মারাত্মক গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়।’

এফটিসি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কমিশনের ডেমোক্র্যাটিক সদস্য, কমিশনার রোহিত চোপড়া তদন্তের আওতায় থাকা ফেসবুক নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে তিনি এক বিবৃতিতে তিনি হুঁশিয়ার করেছন, ‘এফটিসির নির্দেশগুলোকে পরামর্শ ভাবা যাবে না। কোনও কোম্পানি যদি সেসব নির্দেশ লঙ্ঘন করে তবে চরম পরিণতি বরণ করতে হতে পারে এবং তা হওয়াই উচিত।’

/আরএ/এফইউ/বিএ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
ন্যাটোর অংশীদার হতে আগ্রহী আর্জেন্টিনা
কানাডার ইতিহাসে বৃহত্তম স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ৬
সর্বশেষ খবর
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
সিরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইসরায়েলের হামলা
সিরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইসরায়েলের হামলা
পিছিয়ে থেকেও ব্রাজিলিয়ান-গ্রানাডিয়ানের গোলে আবাহনীর দারুণ জয়
পিছিয়ে থেকেও ব্রাজিলিয়ান-গ্রানাডিয়ানের গোলে আবাহনীর দারুণ জয়
শিশু হাসপাতালে আগুন: পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
শিশু হাসপাতালে আগুন: পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!