এখনই উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানান, পূর্ণাঙ্গ নিরস্ত্রীকরণের আগে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে না তার দেশ। ওয়াশিংটন চায় উত্তর কোরিয়ার পূর্ণাঙ্গ-পরীক্ষণযোগ্য এবং চিরস্থায়ী নিরস্ত্রীকরণ। পম্পেও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও সেই অবস্থানেই অটল রয়েছে। বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন, কিম-ট্রাম্প যৌথ ঘোষণায় পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনও কিছু বলা নেই। যৌথ ঘোষণা সত্ত্বেও কিমের পুরনো অবস্থানই বজায় রয়েছে।
১২ জুন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-কিম ঐতিহাসিক বৈঠক শেষে সমঝোতার যৌথ ঘোষণায় কোরীয় উপদ্বীপের পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়। বিবিসি জানিয়েছে, নথিতে পিয়ংইয়ং কখন ও কীভাবে অস্ত্র ত্যাগ করবে তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু না থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্র্যাসি’র সিনিয়র ফেলো অ্যান্থনি রুগিয়েরো বলেছেন, ১০ বছর আগে যে সমঝোতা হয়েছিল, এটা তারই পুনরুক্তি। পূর্ণাঙ্গ নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এই সমঝোতা কোনও কাজে আসবে কিনা, তা একেবারেই স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ননপ্রোলাইফেরেশন স্টাডিজ-এর গবেষক মেলিসা হ্যানহাম তার টুইটার বার্তায় বলেছেন, সমঝোতায় যা আছে, তেমন কথা উত্তর কোরিয়া আগেও অনেকবার বলেছে। তিনি আরও বলেন, সত্যিকারের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বলতে যা বোঝায়, দুই পক্ষ এখনও তাতে সম্মত হয়নি। গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বলতে কী বোঝায়, যৌথ ঘোষণা তা স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে।
যৌথ ঘোষণায় পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রশ্নে অস্বচ্ছতার বিষয়ে পম্পেওর কাছে জানতে চাইলে একে ‘বিব্রতকর’ ও ‘অপমানজনক’ প্রশ্ন বলে মন্তব্য করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কিম নিজেও নিরস্ত্রকরণের আবশ্যকতা বোঝেন। এটা খুবই তাড়াতাড়ি করতে হবে।’ পম্পেও আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অটুট রয়েছে। সামরিক মহড়া বন্ধের ঘোষণা দিলেও এখনও তারা একজোট। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সবসময়ই বলে এসেছে আঞ্চলিক এই মহড়া দক্ষিণ কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় জরুরি। দক্ষিণ কোরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাং কিউং বলেন, ওয়াশিংটন ও সিউলের সম্পর্ক এখনও দারুণ জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বৈঠকটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। তবে এর অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘তিন দেশই চেষ্টা চালিয়ে যাবে।’
কোরীয় উপদ্বীপে ট্রাম্প-কিম ঐতিহাসিক বৈঠকের পর বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে যান পম্পেও। সেখানে গিয়ে আঞ্চলিক সহযোগীদের সঙ্গে ট্রাম্পের হঠাৎ করে দেওয়া সামরিক মহড়া বন্ধের ঘোষণা ও উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে মার্কিন নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। সিউলে জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কোনো ও দক্ষিণ কোরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাং কুংহোয়ার সঙ্গে বৈঠকের আগেই সাংবাদিকদের পম্পেও বলেন, ‘আমরা মনে করি, কিম জং খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন যে জরুরি ভিত্তিতে নিরস্ত্রীকরণ দরকার। ’
১০ বছর আগের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে ট্রাম্প-কিম যৌথ ঘোষণাকে নিছক প্রতিশ্রুতি আকারেই দেখছেন তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, কিম এর আগেও এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বৈঠকেও কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে একমত হয়েছিলেন কিম। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা দাবি করে, ধাপে ধাপে পরমাণু পরীক্ষা বন্ধের ব্যাপারে একমত হয়েছেন ট্রাম্প ও কিম। এতে কিমের দাবিই ট্রাম্প মেনে নিয়েছেন বলেও ইঙ্গিত করা হয়। তবে এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও আগের অবস্থানে অটল। তারা চান, উত্তর কোরিয়ার পূর্ণ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ।
পরমাণু পরীক্ষা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে উত্তর কোরিয়া অনেক দিন ধরেই বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। বিবিসি জানায়, তারা অনেক দিন ধরেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে চায়। এতে দেশটির নেতৃত্বের বৈধতা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।