রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি ডাইভারসিটি জোন করতে চেয়েছিল একদল বেসরকারি সংস্থা। তাদের ধারণা অনুযায়ী, এই ডাইভারসিটি ফ্যান জোন হবে ফুটবলের বৈচিত্র্যময়তা উদযাপনের একটি প্ল্যাটফর্ম; যেখানে ফুটবলে সমকামী থেকে শুরু করে শরণার্থীদের অবদানের বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। তবে চালু হওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষের চাপে বন্ধ করে দেওয়া হয় এটি।
রাশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে জোনটিতে ফুটবলে বিভিন্ন ধরনের সংখ্যালঘুদের অবদান তুলে ধরার পরিকল্পা ছিল উদ্যোক্তাদের। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর আগেই তারা যে স্থানটি ভাড়া করেছিল সেখান থেকে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, অ্যাক্টিভিস্টরা এখানে প্রত্যাশিত নয়। তাদের স্বাগত জানানো হবে না।
কাপ ফর পিপল নামের একটি সংগঠনের হয়ে কাজ করছেন এলিনা বেলোকুরোভা। তিনি চান বিশ্বকাপের সুফল যেন রাশিয়ার সর্বস্তরের মানুষ উপভোগ করতে পারেন। এই অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, তারা আমাদেরকে খুব জোরালোভাবে চলে যেতে বলেছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় এবং এসবের জন্য কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
ফেয়ার নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক পিয়ারা পাওয়ার বলেন, মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের ডাইভারসিটি জোনের লক্ষ্য ছিল ফুটবলের বৈচিত্র্য উদযাপন করা। এটা কোনও উস্কানি নয়। এতে কোনও আইন লঙ্ঘিত হয়নি।
মস্কোর জোনটি চালু হলেও ভেস্তে গেছে সেন্ট পিটার্সবার্গের জোনটির উদ্যোগ। এই জোনের মাধ্যমে ফুটবলে নারী, নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু ও শরণার্থীদের মতো মানুষদের অবদান ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন উদ্যোক্তরা। ফুটবল ও মানবাধিকার সংক্রান্ত ইস্যুতে বিতর্ক আয়োজনের পরিকল্পনাও ছিল তাদের।
বৃহস্পতিবার রুশ সরকার ও ফিফার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মস্কোর ডাইভারসিটি জোন উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ছিটকে পড়ে সেন্ট পিটার্সবার্গের জোনটি। সমকামী, রূপান্তরকামী ও অন্যান্য মানবাধিকার ইস্যুতে বরাবরই আপত্তি রয়েছে সেখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের। তাদের এমন মনোভাবের কারণে এমনকি ফিফা কর্মকর্তাদের দফায় দফায় অনুরোধেও এখনকার জোনটি চালু করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার যে ১২টি এলাকায় খেলা অনুষ্ঠিত হবে সেগুলোর অন্তত কয়েকটিতে সরকারিভাবে ফিল্টারিং পদ্ধতি অনুসরণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নানা আঙ্গিকের বিধিনিষেধ আসছে শিক্ষার্থীদের ওপর। খবর পাওয়া যাচ্ছে, বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে গণহারে কুকুরগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে। এটা স্থানীয় সরকারগুলোর একটি চিত্র মাত্র। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এ বছর স্থানীয় সরকারগুলোর ব্যায় ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবে।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে এরইমধ্যে ২০ লাখ মানুষ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু কুকুরপ্রেমী হিসেবে পরিচিত পুতিন তাতে সায় দেননি।
রাশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর ইয়েকাটেরিনবার্গে ছাত্রাবাসগুলো খালি করে দেওয়া হচ্ছে। কেননা গুরুত্বপূর্ণ অতিথি, এবং বিশ্বকাপ উপলক্ষে মোতায়েন করা নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্যের ব্যবহারের জন্য সেগুলোর প্রয়োজন রয়েছে।
একই শহরে ভিক্ষুক ও গৃহহীনদের বিরুদ্ধে চলছে পুলিশের অভিযান। গত মে মাসে শুরু হওয়া এই অভিযানের প্রধান টার্গেট হচ্ছে মূলত সেসব স্থান যেখানকার সড়কগুলোতে মানুষ রাতযাপন করে থাকে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ইন্ডিপেনডেন্ট।