X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের বিচ্ছিন্নকরণ ইস্যুতে নিজ দলেই তোপের মুখে ট্রাম্প

বিদেশ ডেস্ক
২০ জুন ২০১৮, ১৫:০০আপডেট : ২০ জুন ২০১৮, ১৬:০৭

মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সমালোচনায় মেতেছেন খোদ রিপাবলিকান নেতারাই।  মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিচালিত কঠোর অভিযানে বিপুল পরিমাণ পূর্ণবয়স্ক নারী-পুরুষ আটক হওয়ায় ৬ সপ্তাহেই ১৯৯৫ জন শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সমালোচনা চলছে। সমালোচনায় মেতেছেন স্বয়ং তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। ট্রাম্পের পদক্ষেপকে লজ্জাকর ও নিন্দাজনক আখ্যা দিয়েছেন অন্য চার সাবেক ফার্স্টলেডিও। ডেমোক্র্যাটরাও সমালোচনা করেছেন তার সিদ্ধান্তের। এর পাশাপাশি এই পদক্ষেপের কারণে ক্যাপিটল হিলে নিজ দলের তোপের মুখেই পড়েছেন ট্রাম্প।  

শিশুদের বিচ্ছিন্নকরণ ইস্যুতে নিজ দলেই তোপের মুখে ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের রুখতে সম্প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ নিয়ে সমালোচনার জবাবে শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে আসছেন, তিনি নতুন কোনও অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেননি। বিগত ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের নেওয়া নীতি মেনেই মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। অবশ্য অবৈধ অভিবাসীদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নকরণের ঘটনা পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলোতেও দেখা গেছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সে সংখ্যাটা অনেক কম ছিল। অতীতে দেখা গেছে, যেসব মানুষ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতো এবং অপরাধের কোনও রেকর্ড ছিল না, তাদের আইনের আওতায় অপরাধী সাব্যস্ত না করে শুধুই অস্থায়ীভাবে আটক করা হতো কিংবা বিতাড়িত করার সুপারিশ করা হতো। মা ও শিশুরা সাধারণত একসঙ্গেই থাকতো। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সব ধরনের অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে আইনগত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার প্রথম ৬ সপ্তাহেই প্রায় ২ হাজার শিশু পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতীতে এমন নজির দেখা যায়নি।

পূর্বে ট্রাম্পকে সবসময় সমর্থন দিয়ে যাওয়া রিপাবলিকানরাও শিশুদের কান্না ও বন্দিত্বের ছবি দেখে নড়েচড়ে বসেছে। এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন তারা। মিশিগানের কংগ্রেসম্যান ফ্রেড আপটন বলেন, অতিসত্ত্বর এই কুৎসিত ও অমানবিক কাজ বন্ধ করতে হবে। এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আরিজোয়ানার সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেন, শিশুদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের এই শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত মার্কিন নাগরিকরে শিষ্টাচার বহির্ভূত। আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও উদ্দেশ্যর সঙ্গেও এটা সাংঘর্ষিক। প্রশাসনের এটি ঠিক করার ক্ষমতা রয়েছে। এটা করা উচিত।’

মঙ্গলবার বিকালে বিষয়টি নিয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ট্রাম্প। বৈঠকে বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিট মন্ত্রী কার্সটেন নিলসেন বলেন, শুধু কংগ্রেসের পক্ষেই এর সমাধান সম্ভব। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট কিছু আশ্বাস দিচ্ছে না। ডেমোক্রেটরাই সমস্যা। তারা অপরাধ আমলে না নিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশাধিকার দিতে চায়। তারা যতই খারাপ হোক না কেন, তাদের প্রবেশাদিকার দিয়ে ভোটার বাড়াতে চায় ডেমোক্রেটরা। হোয়াইট হাউস ও সিনেটে অন্যান্য বিকল্প প্রস্তাব দিয়েও আলোচনা হচ্ছে। ডেমোক্রেটরা ব্যক্তিগতভাবে আটক কেন্দ্রে গিয়ে শিশুদের সঙ্গে দেখা করছেন। তারা সবাই নিলসেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন। সিনেট মেজরিটি নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, ‘রিপাবলিকান সিনেটররা সবাই এমন একটি প্রস্তাবে সমর্থন করে যেটা শিশুদেরকে তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকার অনমুতি দেয়। শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার সকল চেষ্টার অবসান চাই আমরা।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এর আইনি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’ রিপাবলিকানরা বলেন, কংগ্রেসের অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

তকে ডেমোক্রেটরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট এক মুহূর্তেই এটি বন্ধ করতে পারেন। সিনেট ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার বলেন, ‘আপনি একাই এর সমাধান করতে পারেন। আপনি কলম ধরলেই সব থেমে যাবে।’ পরিবারের এই বিচ্ছেদ ঠেকাতে রিপাবলিকানদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। অভিবাসন নিয়ে কংগ্রেসের নিস্ক্রিয়তার কথা মনে করিয়ে দেন শুমার। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসে কতবার অভিবাসন আইন পাশ হয়েছে?.. শূন্য।’

শিশুদের বিচ্ছিন্নকরণ ইস্যুতে নিজ দলেই তোপের মুখে ট্রাম্প

রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজের অবস্থান সমর্থন করেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের পরিচালক মার্সিডিস স্ক্লাপ বলন, ‘আমরা ক্রুজের প্রস্তাবের আইনি দিক খতিয়ে দেখছি।’ এনএফআইবি বক্তব্যে ট্রাম্পকে অবশ্য ক্রুজের প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে দেখা গেছে। ক্রুজের প্রস্তাব অনুযায়ী বিচারকদের সংখ্যা বাড়িয়ে জমে থাকা অভিবাসন বিষয়ক মামলার কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। তবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জজ চাই না। আমি সীমান্তে নিরাপত্তা চাই। আমি তাদের বিচারের সুযোগ দিতে চাই না। আমি তাদের আসতেই দিতে চাই না।’

মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিরোধিতা করছেন সাধারণ মার্কিনিরা। কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের করা জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, প্রতি তিনজন ভোটারের মধ্যে দুজনই ট্রাম্পের এই নীতির বিরোধিতা করছে। মঙ্গলবার (১৯ জুন) ক্যাপিটল হিলে রিপাবলিকানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বের হওয়ার সময় এই নীতির প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটদের তোপের মুখেও পড়তে হয় ট্রাম্পকে।

বামে বর্তমান ফার্স্টলেডি ও স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। উপরে বামে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা, ডানে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। নিচে বামে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের স্ত্রী লরা বুশ ও ডানেজিমি কার্টারের স্ত্রী রোজালিন কার্টার ট্রাম্পের

ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নির্বিশেষে ফার্স্টলেডিদের মধ্যে ৫ জন ট্রাম্পের এই বিচ্ছিন্নকরণ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমান ফার্স্টলেডি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও রয়েছেন। এছাড়া সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের স্ত্রী লরা বুশ, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, শান্তিতে নোবেল জয়ী সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্ত্রী রোজালিন কার্টার ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে মার্কিন ফার্স্টলেডিদের এমন ঐক্যের ঘটনা মার্কিন ইতিহাসে বিরল।

/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করলো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বশেষ খবর
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা