X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাড়ি চালিয়ে কি ‘দাসত্বের খোলস’ ভাঙতে পারবে সৌদি নারীরা?

ফাহমিদা উর্ণি
২৪ জুন ২০১৮, ১৮:০২আপডেট : ২৪ জুন ২০১৮, ১৮:২০
image

নারীদের গাড়ি চালানোর বাধা দূর হওয়ার বিষয়টিকে সৌদি শাসকদের দিক থেকে সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রচার করা হলেও সবাই তা মানছেন না। অনেকেই একে দেখছেন অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক এক পদক্ষেপ হিসেবে। এদিকে সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাধা দূর হলেও সব বাধা দূর হয়নি এখনও। দেশটিতে ‘কঠোর অভিভাবকত্ব আইন’ বহাল থাকায় তাদেরকে এখনও বাধা দিতে সক্ষম তাদের পুরুষ অভিভাবকরা। এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিকে নেতিবাচক আখ্যা দিতে শুরু করেছে জনগণের একাংশ। মানবাধিকারকর্মীরাও বলছেন, গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থার অধীনে থাকা সৌদি নারীরা এখনও ‘দাসত্বের’ জালে বন্দি।

চালকের আসনে সৌদি নারী
সৌদি আরবই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর এতোদিন নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এক ডিক্রিতে নারীদের রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতি দেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রবিবার পূর্ব ঘোষণার অংশ হিসেবে মধ্যরাতে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে সৌদি নারীরা। তবে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিসহ কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সৌদি সরকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা ঘোষণা করলেও এখনও দেশটিতে নারীদের জন্য অন্যতম বড় বড় কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। 

গাড়ি চালনার নিষেধাজ্ঞাটির সমাপ্তি ঘটলেও সৌদি আরবে নারীদের জন্য যে কঠোর অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা জারি আছে তাতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ববহ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থার আওতায় নারীদেরকে ভ্রমণ, স্কুলে যাওয়া, চিকিৎসাসহ জীবনের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে তাদের কাছের পুরুষ অভিভাবকদের কাছ থেকে  (স্বামী, বাবা কিংবা ভাই) অনুমতি নিতে হয়। ডিভোর্সড কিংবা বিধবা মাকে থাকতে হয় তার কিশোর সন্তানের অভিভাবকত্বের অধীনে। সৌদি অ্যাকটিভিস্টদের দাবি নারী অধিকারের লড়াইয়ের জন্য এই অভিভাবকত্ব একটি বড় ইস্যু। পরিবার থেকে অনুমতি না পেলে নারীরা তখন আর গাড়ি চালাতে পারবেন না।

গাড়ি চালাচ্ছেন সৌদি নারী সামার
এরইমধ্যে এক সৌদি পুরুষ টুইটারে লিখেছেন, তিনি চান না তার স্ত্রী গাড়ি চালাক। ওই টুইটার ব্যবহারকারী বলেন, ‘সে যদি গাড়ি চালাতে চায়, তবে সে তার বাবার কাছে ফিরে যেতে পারে এবং খোদা চাইলে সে লরিও চালাবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করে। সে গাড়ি চালাবে না।’

২০১১ সালে সৌদি আরবে নিজের গাড়ি চালানোর একটি ভিডিও পোস্ট করেন সৌদি  মানবাধিকারকর্মী মানাল আল শরিফ। নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকা এ নারীও খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাসরত মানাল আল শরিফ ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে টেলিফোনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ধরুন আপনার ছেলে আপনার অভিভাবক হয়ে গেলো। নারী হিসেবে আমার সক্ষমতা যাই হোক না কেন, আমি এখনও অন্য কারও দাসত্বে আছি। আমার জন্য স্বাধীনতা হলো মর্যাদা নিয়ে বাঁচার বিষয়। আর আমার সম্মান ও স্বাধীনতাকে যদি পুরুষরা নিয়ন্ত্রণ করে তবে আমি কখনও মুক্ত হতে পারব না।’

চালকের আসনে সৌদি নারী
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত ‘সঠিক পথের দিকে এক ক্ষুদ্র পদক্ষেপ।’ নারীদের প্রতি অন্য বৈষম্যগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও সৌদি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। ২০১১ সাল থেকে প্রায় ৩০ জন অ্যাকটিভিস্ট ও বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে সৌদি আদালত। এইচআরডব্লিউ এর মতে এদের অনেককেই ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি যুবরাজের সংস্কার নিয়ে সংশয়ী বেশ কয়েকজন নারী অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়। জেলে থাকা মানবাধিকারকর্মীদের কথা স্মরণ করিয়ে দেন মানাল আল শরিফ। বলেন, ‘মানুষ যখন রবিবার বিজয় উদযাপন করছে, তখন আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে যারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য লড়াই করেছে তারা জেলে আছে।’ মানাল আল শরিফ জানান, যে সড়কে গাড়ি চালানোর পর তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছিল, রবিবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর সে একই সড়কে গাড়ি চালানোর ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু পরে মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেফতার হওয়ার খবরে সে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন।

১৯৯০ সালের ৬ নভেম্বর গাড়ি চালনার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ৪৭ জন নারী রিয়াদের রাস্তায় গাড়ি চালিয়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাস্তায় নামার কারণে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কেউ কেউ তাদের চাকরি হারিয়েছিলেন। কারও কারও মাথার ওপর থেকে তাদের পরিবারের ছায়া সরে গিয়েছিল, পরিবারের সদস্যরা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে তারপরও তারা দমে যাননি। আন্দোলন অব্যাহত রাখেন ওই নারীরা। ওই ৪৭ নারীর একজন ফাইজা আল-বকর। ফাইজাদের সেই সময়ের আত্মত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে এনে তার সহকর্মী সামার বলেন ‘তারাই আমাদের সবার জন্য এ আন্দোলন শুরু করেছিল। তারাই নিষেধাজ্ঞার গণ্ডি পেরিয়েছিল।’ সামারের ভাষ্য, গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়া যতটা না সৌদি আরবে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকারকর্মীদের সুদীর্ঘ আন্দোলনের ফলাফল, তার চেয়ে বেশি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’।  

 

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
রাজনীতিকদের বিরোধে ক্ষোভ বাড়ছে ইসরায়েলি সেনাদের
দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭
যুদ্ধবিরতির আলোচনা: উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিদের ফিরতে দেবে ইসরায়েল
সর্বশেষ খবর
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
বুয়েটে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শিক্ষার্থীদের
বুয়েটে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শিক্ষার্থীদের
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা