X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

কট্টর সমর্থকদের ভোটেই এরদোয়ানের বাজিমাত

বিদেশ ডেস্ক
২৫ জুন ২০১৮, ১৯:৩০আপডেট : ২৫ জুন ২০১৮, ১৯:৫৪

২০০৩ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তার প্রধান সমর্থক হচ্ছেন রক্ষণশীল এবং ধার্মিক অপেক্ষাকৃত বয়স্ক তুর্কিরা। নিজের অনুসারীদের তিনি ‘অটোমান সুলতানদের নাতিপুতি’ হিসেবে ডাকেন। প্রথমবারের মতো নির্বাহী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বাড়তি ক্ষমতা পেতে তাকে নির্ভর করতে হয়েছে এসব ‘নাতিপুতি’দের ওপরে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই লিখেছে, দীর্ঘদিন ধরে এরদোয়ানের নির্বাচনি কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ভূমিকা রেখেছে তার ধর্মীয়, রক্ষণশীল উদ্দীপনা। পার্লামেন্টে নিজের দল একেপির আসন সংখ্যাও বাড়িয়েছেন তিনি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে জয়ী হতে প্রয়োজনীয় ভোট পেলেও কার্যত সমর্থন কমছে এরদোয়ানের। তার নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেক ভোটার। নিজের কট্টোর সমর্থকদের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন এরদোয়ান
ইস্তাম্বুলের মেয়র থাকার পর ২০০৩ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন এরদোয়ান। ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ২০১৬ সালে এক 'ব্যর্থ গণঅভ্যুত্থানের' মুখে পড়েন তিনি। সামলে নিয়ে পরের বছর এক গণভোটে সামান্য ব্যবধানে জয় পান তিনি। এতে তিনি দেশটিকে সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় পান। এবারের নির্বাচনে তার জয়ের ফলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সরকারি কর্মকর্তা, ভাইস প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রীদের নিয়োগ দেবেন এবং যেকোনো সময় সংসদ ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন।

এবারের নির্বাচনে এরদোয়ানকে ঠেকাতে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের দলগুলোও জোটবদ্ধ হয়। একেপির মতো রক্ষণশীল দল সাদাত পার্টির সঙ্গে জোট বেধেছিলো অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী দল সিএইচপি। তবে এই জোটের প্রার্থী ও এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি সিএইচপি দলের মুহাররম ইনজেও নির্বাচনি প্রচারণায় ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহার করেছেন। কট্টর সমর্থকদের ভোটেই এরদোয়ানের বাজিমাত

তুরস্কের একটি নির্বাচনি সংস্থার অন্যতম মালিক মুরাট গেজিচির মতে, একেপির ভোট কমে যাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। অতীতে দলটিকে ভোট দেওয়া অন্তত এক তৃতীয়াংশ মানুষ কাকে ভোট দেবেন তা বলতে আগ্রহী নন অথবা তারা এখনও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি বলেন, এটা পরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত। এরদোয়ান আর একেপির ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন তা জানাতে আগ্রহী থাকে। তার মতে, এক সময়ে পার্লামেন্টে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহজেই নিশ্চিত করতে পারতো একেপি।  অন্যরা বলছেন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পার্টির (এমএইচপি) সঙ্গে একটি নতুন জোট গড়া সত্ত্বেও,  সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা এই লক্ষ্য অর্জনে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও ব্যবসায়ী ইজ্জত আকিওলের মতে এসব ভোটারদের মূল সমস্যা হলো বিরোধী দলগুলোর কাছ থেকে আকর্ষণীয় কোনও ইস্যু পাচ্ছেন না তারা। বিগত সময়ে এরদোয়ানকে ভোট দিয়ে আসলেও এবারে বিরত থাকা আকিওল বলেন, আমার মনে হয় না বিরোধীরা তুরস্কের জন্য আরও ভালো কোনও বিকল্পের প্রস্তাব তুলতে পারছে।

তিনি বলেন, আমি তাকে সমর্থন করা বন্ধ করেছি কিন্তু এখন কাউকে সমর্থন দেওয়ার মতো বিকল্প কেউ নেই। আমি সাদাত পার্টিকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছি, তবে আমি তাদের সমর্থক নই। তারা ইরান আর সিরিয়াকে সমর্থন করে, তাদের অবস্থান আসাদপন্থী। তবুও আমি তাদের ভোট দেবো, কারণ তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয় বরং একে পার্টির প্রতি আমার প্রতিক্রিয়া দেখাতে। শুধুই প্রতিবাদের জন্য। রমজানে শেষরাতে সেহরির জমায়েতে প্রচারণা চালিয়েছেন এরদোয়ানের অনুসারীরা

একেপির অন্য পুরনো সমর্থকরাও একই মনোভাব পোষণ করেন। তাদেরকেও বিরোধীরা আকৃষ্ট করতে না পারলেও নিজেদের সমর্থনহীনতার নজির রাখতে আগ্রহী তারা। ইস্তাম্বুলের নিজের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে আলী ওসমান নামের এক ভোটার বলেন, এরদোয়ানকে ভোট দিয়ে আমি ভালো সেবা পেয়েছি। আমি তার কাজের প্রশংসা করি আর একারণেই তাকে ভোট দেই। কিন্তু যখন কোনও একজন ১৫-২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকে তখন তার পরিবর্তন দরকার। তিনি বলেন, এটা তার পারিবারিক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। আমি চাই না একটি রাজনৈতিক আন্দোলন কারও পারিবারিক ব্যবসায় পরিণত হোক। সেকারণেই আমি আমার সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আলী ওসমান বলেন, নির্দিষ্ট কোনও দল আমার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। কিন্তু একেপি এমএইচপির সঙ্গে জোট বাধলে বিরোধীরাও একটি জোট গড়েছে। এটা শুধুমাত্র এক দলের বিপরীতে আরেকটি দল আর আমি একেপির পক্ষকে সমর্থন করতে পারি না।

আকিওলের মতে তুরস্কের অনেক ধর্মীয় ভোটার অসাম্প্রদায়িক সিএইচপি দলের নীতিকে ক্ষতিকর বলে মনে করে। তারা মনে করে নারীদের প্রকাশ্যস্থানে হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ অন্য নীতি তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক। এসব উদ্বেগকে সামনে আনার চেষ্টা করছে সিএইচপি। অতীতের ভুল আর না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। দলের প্রার্থী ইনজে নিজের ধর্মীয় পরিচয় সামনে আনার চেষ্টা চালিয়েছেন। প্রচার চালিয়েছেন পেশাগত জীবনের প্রথমদিকে ধর্মীয় স্কুলে পড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল বিরোধী ভাষা ব্যবহারের প্রবণতার সমালোচনা করেছেন তিনি। অভিযোগ তুলেছেন প্রেসিডেন্ট ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে গোপন চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।

তবে ইনজের এসব বার্তা একেপির ভোটারদের ওপর খুব কমই প্রভাব ফেলেছে। যদিও কয়েকটি প্রাথমিক জরিপে প্রথম পর্বের নির্বাচনে এরদোয়ানের পরাজয়ের অনুমান দিয়ে পরের ধাপের নির্বাচনে সহজেই ইনজের বিরুদ্ধে জয়ের আশাবাদ জানানো হয়েছিল। এরদোয়ানের কোনও কোনও সমর্থক মনে করেন ইনজে আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছিলেন। যদিও এরদোয়ানের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সমালোচনার অভিযোগ করে থাকেন অনেকে।

অবসরপ্রাপ্ত কারখানা শ্রমিক মুরাট গোজলার বলেন, মুহাররম ইনজের নিজেরও ভুল আছে। তার আচরণ অনেকটা মুর্খের মতো। আমি তার মধ্যে দায়িত্বশীলতা দেখিনা। বস্তুগতভাবে না হলেও আবেগীয়ভাবেও আমি তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারি না।

মোরাট গোজলারের মতো একেপি সমর্থকদের ওপরে ভর করে জিতেছেন এরদোয়ান

আকিওলের মতে এরদোয়ান ও একেপির সমর্থনে যদি কোনও পরিবর্তন ঘটে থাকে তাহলে তা ভোটার সংখ্যা কমার চেয়েও অনেক বেশি তার বিতর্কিত বিষয়ের প্রতি নির্দেশ করে থাকে। এই রাজনৈতিক ভাষ্যকার বলেন, ‘বড় বড় শহরে বসবাস করা আমার মতো অনেক শিক্ষিত মানুষ আছেন যারা ইসলামী মূল্যবোধ ধারণ করেন। তবে এসব মানুষ মোট জনসংখ্যার কতো শতাংশ হবে? আমার মনে হয় না খুব বেশি হবে। কিন্তু তাদের লেখক, গবেষক, ব্যবসায়ীদের মতো লোকেরা রয়েছেন। যারা সমাজের অন্যান্য অংশের ওপর প্রভাববিস্তার করতে পারেন। তারা ধারাবাহিকভাবে অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন। তবে এতে সময় লাগবে।’ তিনি বলেন, ছোট শহর আর সেখানকার ভোটাররা এরদোয়ানের প্রতিশ্রুত উন্নত সেবা ও অবকাঠামোর স্থিতিশীলতা রক্ষা করাকেই নিজেদের বিবেচনা বলে মনে করে।

মিডল ইস্ট আই বলছে, আর এটাই ঘটেছে গোজলারের ক্ষেত্রে। তিনি এখন ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রীয় কারাকো জেলায় মাছ ধরে নিজের সময় কাটান। এরদোয়ানের প্রতি তার সমর্থন নিরঙ্কুশ নয়। তুরস্কের রাজনীতিতে এরদোয়ানের পূর্ণ কর্তৃত্বকে পছন্দ করেন না তিনি।

গোজলার বলেন, রাজতন্ত্র আর রাজনৈতিক সংগ্রামের কারণে তুরস্ককে অনেক ভুগতে হয়েছে। হাতে টাকা থাকায় আমরা অভ্যস্ত কিন্তু জিনিসপত্রের সঙ্কটের কারণে আমরা কিছুই কিনতে পারি না। 

/জেজে/
সম্পর্কিত
মধ্যপ্রাচ্যে সংযমের আহ্বান ইরাকি নেতার
ইরানে পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরায়েলকে ক্যামেরনের আহ্বান
উত্তেজনা এড়াতে ইসরায়েলের প্রতি ম্যাক্রোঁর আহ্বান
সর্বশেষ খবর
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না: নাছিম
সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না: নাছিম
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
টানা দাবদাহের পর রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
টানা দাবদাহের পর রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
বাজারে ক্রেতা নেই: তবু ব্রয়লারের কেজি ২৩৫, গরু ৮০০
বাজারে ক্রেতা নেই: তবু ব্রয়লারের কেজি ২৩৫, গরু ৮০০