বাংলাদেশের ১৩ কোটি মানুষ জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে; এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশকে ১৬ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ধরে নিয়ে এই হিসেব দিয়েছে তারা। বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচণ্ডতা অব্যাহত থাকলে অর্থাৎ দ্রুত তা কমিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবথেকে বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ঝুঁকির মধ্যে থাকা এলাকাগুলোতে মাথাপিছু জিডিপি এখনকার তুলনায় ১৪.৪ শতাংশ কমে যাবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। জিডিপিতে ওই ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ হবে ১৭১ বিলিয়ন ডলারের মত, বাংলাদেশি টাকায় যা ১৪লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়াস হটস্পটস’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ এক্ষুণি কমিয়ে আনা না গেলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে দক্ষিণ এশিয়ার ছয় দেশের ৮০ কোটি মানুষকে। আর সামষ্টিকভাবে ক্ষতি কমিয়ে আনার কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলে ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষের সংখ্যা কমে হবে সাড়ে ৩৭ কোটি। ক্ষতির শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশ।“গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকায় এবং বৃষ্টিপাতের বর্ষা ঋতুর আচরণ বদলে যাওয়ায় বাংলাদেশের নিচু ও উপকূলীয় এলাকা এবং মালদ্বীপ আরও বেশি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো বলছে, আগামীতে এ ধরনের দুর্যোগ আরও শক্তিশালী হয়ে আবির্ভূত হবে।’
যেসব এলাকায় গড় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ধরনে দ্রুত পরিবর্তন আসার কারণে ভবিষ্যতে মানুষের জীবনমানেও বড় পরিবর্তন আসতে পারে- এ গবেষণায় সেই সব অঞ্চলকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দুই ধরনের বাস্তবতাকে মাথায় রেখে ক্ষতির হিসেব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, যদি পরিবর্তন ঠেকাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিৎসরণ কমানোর ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ২১০০ সালে গিয়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক শিল্পায়ন যুগের থেকে বড়জোর ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এমন অবস্থায় ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের হটস্পটগুলোতে মাথাপিছু জিডিপি কমে যাবে ৬.৭ শতাংশ, যার আর্থিক পরিমাণ ৫৯ বিলিয়ন ডলার (চার লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা প্রায়)। এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিভাগের বেশিরভাগ এলাকা মাঝারি ঝুঁকিতে এবং সিলেট ও রংপুর বিভাগ ছাড়া দেশের বাকি এলাকা মৃদু ঝুঁকিতে থাকবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কোনও পদক্ষেপ বাস্তবায়িত না হলে,২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি হার হবে প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপি এখনকার তুলনায় ১৪.৪ শতাংশ কমে যাবে, যার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়াবে ১৭১ বিলিয়ন ডলার। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের বেশিরভাগ এলাকা মারাত্মক ঝুঁকিতে; বরিশাল, খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ মাঝারি ঝুঁকিতে এবং সিলেট রংপুর বিভাগ মৃদু ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। কেবল সিলেটের মানুষ তখনও এই ঝুঁকির বাইরে থাকবে।