X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির বল প্রয়োগের নীতি সংঘাত প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে কাশ্মিরে

বিদেশ ডেস্ক
০৫ জুলাই ২০১৮, ১৭:৩৮আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৮, ১৭:৪৪

ভারতের প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে দলের সমর্থন প্রাপ্তি নিশ্চিতে কাশ্মিরের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের তীব্রতা বাড়াতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতে কাশ্মিরে সহিংসতার ঘটনা কমবে না বরং বাড়বে না। কাশ্মিরের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী-পুরুষদের যোগ দেওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করতে ভিন্নভাবে চিন্তা করা দরকার বলে মনে করেন তারা। এমনিতেই অঞ্চলটিতে সহিংসতার ঘটনায় জাতিসংঘ মন্তব্য করেছে, সেখানে ব্যাকপভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। তারপরও মোদি কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন আসন্ন নির্বাচনের কারণে। নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে মোদি তার দলের জন্য সমর্থন নিশ্চিত করতে চান। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি লিখেছে, সম্প্রতি কাশ্মিরের ক্ষমতায় থাকা জোট সরকার থেকে বিজেপি বেরিয়ে যাওয়ায় এখন সেখানে কেন্দ্রের শাসন চলছে। এতে আলোচনার বদলে বল প্রয়োগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাটা মোদির জন্য সহজ হবে। আর তাতে বাড়বে সহিংসতার আশঙ্কা। মোদির বল প্রয়োগের নীতি সংঘাত প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে কাশ্মিরে

গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত গুজরাট নির্বাচনে খুব কম ব্যবধানে জিততে পারা বিজেপির জন্য যথেষ্ঠ সমর্থন নিশ্চিত করাটাই এখন মোদির লক্ষ্য।  নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নিরাপত্তাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার বার্তা দিতে চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি লিখেছে, কাশ্মিরে কার্যকর করা মোদির নীতি ইতোমধ্যেই বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এখন যদি এলাকাটিতে বলপ্রয়োগের ঘটনা আরও বাড়ানো হয় তাহলে এমনিতেই সংঘর্ষপ্রবণ অঞ্চলটিতে অস্থিতিশীলতা বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কড়া ভূমিকা নেওয়াটাকে মোদি সমর্থন নিশ্চিতের কৌশল হিসেবে নিয়েছেন। গত সপ্তাহে গবেষণা সংস্থা স্ট্রাটফরের গবেষকরা মন্তব্য করেছেন, ‘যেহেতু এখন মোদিকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠন করতে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এবং যেহেতু তিনি দলের দৃষ্টিতে আরও বেশি শক্তিশালী করে সংগঠন গোছাতে চান সেহেতু নির্বাচনি কৌশল হিসেবে তিনি দেশর ভেতরে থাকা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছেন।’

‘এশিয়া প্রোগ্রামের’ সহপরিচালক এবং উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহযোগী মাইকেল কুগম্যান বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করার সম্ভাবনা বাড়বে।’ কিন্তু এমনিতেই সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলটিতে আরও বেশি বল প্রয়োগের ঘটনা ঘটানো ঝুঁকিপূর্ণ।

সিএনবসি লিখেছে, সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনী ও কাশ্মিরিদের মধ্যে সংঘাতের পরিমাণ বেড়েছে। রোজার মাস উপলক্ষে যে অস্ত্র বিরতি দিল্লির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল তা খুব বেশি দিন দীর্ঘ হয়নি। জনপ্রিয় কাশ্মিরি সাংবাদিক সুজাত বুখারির মতো অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন।

গত মাসেই শাসক দল বিজেপি কাশ্মিরের আঞ্চলিক দল ‘পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির’ (পিডিপি) সঙ্গে থাকা সমঝোতা ভেঙে দেয়। এত ক্ষমতা ছাড়তে হয় কাশ্মিরের জোট সরকারকে। পদত্যাগ করেন মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি। বিজেপির সমর্থন প্রত্যাহারের কারণে কাশ্মিরে একটি নির্বাচিত সরকারের পতন হয় এবং অঞ্চলটিতে জারি হয় কেন্দ্রের শাসন।

নয়াদিল্লীভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের’ গবেষক মনোজ জোশি মন্তব্য করেছেন, কাশ্মিরে জোট সরকার ভঙ্গে দেওয়ার মতো কাজ সামনের নির্বাচনের কথা ভেবে করেছে বিজেপি। এতে মোদির সরকার আঞ্চলটিতে কার্যত আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কাশ্মিরের জোট সরকার বিজেপিকে ভারসাম্যের মধ্যে রাখত। কারণ জোটের শরিক পিডিপি চাইত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে। এখন যেহেতু পিডিপি সরকারে নেই এবং কেন্দ্রের হাতেই কাশ্মিরের ক্ষমতা সেহেতু, বিজেপি এখন সরাসরি তাদের নীতি বাস্তবায়ন করতে পারবে। বিজেপির তৎপরতাকে সংশ্লিষ্টরা ‘বল প্রয়োগের রাজনীতি’ হিসেবে দেখেন। জাতিসংঘও মন্তব্য করেছে, কাশ্মিরে ব্যপাকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এসবের মধ্যে রয়েছে আন্দোলন দমন করতে অত্যধিক বল প্রয়োগ করা, আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারভাবে গ্রেফতার করা, যৌন সহিংসতা, গুম ইত্যাদি।

কুগম্যান মন্তব্য করেছেন, ‘যেহেতু এখন বিজেপিকে ভারসাম্যে রাখতে পিডিপি নেই এহেতু বিজেপি এখন আরও বেশি কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে। এমন আশঙ্কার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে, ওই জোট সরকার ভেঙে যাওয়ায় সহিংসতার আশঙ্কা বাড়বে।’

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাফল্যের দেখা পেলেও নয়াদিল্লীর কঠোর ভূমিকা কাশ্মিরের আন্দোলনকারীদের কর্মী সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। বরং  এতে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা নারী-পুরুষরা যোগ দেওয়া শুরু করেছে। গবেষক জোশির মতে, মোদী সরকারের দরকার এমন একটি কৌশল যাতে তারা কাশ্মিরের আন্দোলনে ভিন্ন আর্থ-সামাজিক শ্রেণির মানুষদের যোগ দিতে থাকার কারণটি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে। সরকার যদি ‘শারীরিকভাবে আন্দোলনকারীদের’ দমন করার চেষ্টা করে তাহলে তা শুধু পরিস্থিতিকে আরও খারাপই করে তুলবে।

/এএমএ/
সম্পর্কিত
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
সর্বশেষ খবর
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি