X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
সিএনএন'র বিশ্লেষণ

রুশ-মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে উদ্ভট বৈঠকে ট্রাম্প-পুতিন

বিদেশ ডেস্ক
১৬ জুলাই ২০১৮, ১৬:১৫আপডেট : ১৬ জুলাই ২০১৮, ১৭:০১

অনুপযুক্ত সময় ও পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের বৈঠকের এমন প্রয়োজনীয়তা খুব কমই দেখা গেছে। বিশ্বশক্তি হিসেবে শো-ডাউন বা ঐতিহাসিক স্নায়ু যুদ্ধের মীমাংসার আলোচনার সময়ও এমন বৈঠক হয়নি। কিন্তু সোমবার এমনই এক উদ্ভট প্রকৃতির বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিন। 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

এবার বিদেশ সফরে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের অপদস্থ করেছেন, রাণি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে চমকপ্রদ বৈঠক করেছেন এবং নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ তদন্তের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ অব্যাহত রেখেছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে নির্বাচনে কারচুপির জন্য ১২ রুশ সামরিক গোয়েন্দাকে অভিযুক্ত করার কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।

তবে বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক অনেক কারণ আছে যেগুলো এই বৈঠক দুই প্রেসিডেন্টের জন্য ভাল হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, সিরিয়া যুদ্ধ, উত্তর কোরিয়া, উত্তেজক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চু্ক্তি ও দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন। যদি দুই প্রেসিডেন্ট এসব বিষয়ে কোনও উন্নতি করতে পারেন তাহলে সমালোচকরা নিজেদের জবাব পেয়ে যাবেন। এমনকি এই বৈঠকের মাধ্যমে নিম্নপর্যায়ের সংলাপও শুরু হয় তাহলেও তারা প্রশংসা পাবেন। আর যথাযথ কূটনৈতিকভাবে শুরু হলে এই অস্বাভাবিক মার্কিন-রুশ সম্মেলনটিই কার্যকর হয়ে উঠবে।

সবশেষে ট্রাম্প এমন একজন মানুষের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন যার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। আর ট্রাম্পকে ক্ষমতায় আনতেই ওই হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিজ দেশের বিচার বিভাগ রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কয়েকদিনের মধ্যে ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছেন। এমনকি এটাও পরিষ্কার নয়, মার্কিন সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের ওপর এমন আঘাতের পর ট্রাম্প কিভাবে পুতিনকে তিরষ্কার করবেন। তবে বৈঠকের একেবারে আগ মুহুর্তে এসে ট্রাম্প এই বৈঠক থেকে বড় ধরনের ফলাফল আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

রবিবার সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, আমি সেখানে খুব কম আশা নিয়ে যাচ্ছি। আমার মনে হয়, রাশিয়ার সঙ্গে থাকতে পারা ভাল ব্যাপার। কিন্তু সম্ভবত আমরা তা করবো না।

তবে এখনও এই বৈঠক করা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই কিছু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান রাজনীতিক প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈঠকের স্পষ্ট এজেন্ডা ও সম্ভাব্য বক্তব্য সম্পর্কে ঠিক করে কিছু বলতে না পারায় তারা আপত্তি তুলেছেন। 

ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা,  মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরীক্ষিত চতুর ও দক্ষ রুশ কূটনীতিকের ব্যাপক পার্থক্যের কারণে ট্রাম্প যদি বড় কোনও ভুল করে ফেলেন। এর মধ্যে ট্রাম্প কোনও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সহায়তা ছাড়াই রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে চাওয়ায় এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প পুতিনের কোনও সমালোচনা করেননি। তাই নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, ট্রাম্প কোনও কোনওভাবে এই সাবেক কেজিবি এজেন্টের অনুগত হয়ে আছেন।

এছাড়া পশ্চিমা জোট, বিশেষ কাউন্সিলের তদন্ত ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো গণতান্ত্রিক মাইলফলকগুলোর ব্যাপারে প্রায়ই ট্রাম্প পুতিনের সুরেই কথা বলেন। এমন অস্থির পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যকোনও প্রেসিডেন্টই পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতেন না। এতকিছুর পরও এই বৈঠক নিয়ে ট্রাম্প সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ায় মার্কিন কর্মকর্তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

ট্রাম্প ইউরোপ সফর শুরু করার আগেই রাশিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হান্টসম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা একটা ঐতিহাসিক বৈঠক দেখতে যাচ্ছি।’ কিন্তু রবিবারই তিনি তার প্রত্যাশা হারিয়ে ফেলেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা কোনও বৈঠক নয়। আমি শুনেছি, এটাকে বৈঠক বলা হচ্ছে। এটা মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎ’।

ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে আনন্দপূর্ণ পরিবেশে মিলিত হন। পুতিন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন, ও চীনের শি জিনপিং এর মতো শক্তিশালী মানুষগুলোর সঙ্গে তাকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য মনে হয়। যদিও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, মিত্ররা ও যুক্তরাষ্ট্রের গতানুগতিক বিদেশ নীতির সঙ্গে এসব যায় না।

আর রাশিয়ায় একটি সফল বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন শেষ করে পুতিন এই বৈঠক বসতে যাচ্ছেন। তিনি নিজ দেশে স্বৈরশাসন জারি রাখার জন্য এটাকে কাজে লাগাতে পারবেন। কারণ তিনি দেখাতে পারবেন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তিনি আবারও রাশিয়ার হারানো ক্ষমতা ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। এরই মধ্যে এই সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। এই প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির মূল লক্ষ্য জানেন না, যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে গভীর ফাটল ধরান, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র মতো মার্কিন বন্ধুদের অপমান করেন এবং রাশিয়া তদন্তে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে মেরুকরণ বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছেন। 

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এই ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকের আলোচ্য সম্পর্কে বাকি বিশ্বের কেউ হয়তো কিছু জানতেই পারবে না। কারণ এই দুইজনের মধ্যেই সত্য লুকানোর প্রবৃত্তি রয়েছে। তবে পুতিনের প্রতি দুর্বলতার বিষয়টি অনেক সময়ই প্রকাশ ঘটিয়েছেন ট্রাম্প। যেমন গত সপ্তাহ বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ট্রাম্প বলেন, ‘এক হিসেবে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী, তিনি আমার শত্রু নন। আর আশাকরি কেউ একজন, সম্ভবত তিনি আমার বন্ধু হবেন’।

/আরএ/এএ/
সম্পর্কিত
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রুশ সাংবাদিক নিহত
সর্বশেষ খবর
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া