X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

আসামের নাগরিক তালিকায় স্থান হলো না ৪০ লাখ অধিবাসীর

বিদেশ ডেস্ক
৩০ জুলাই ২০১৮, ১১:৪৬আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৮, ০৮:৪৩

আসামের নাগরিক তালিকায় স্থান মেলেনি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৪০ লাখেরও বেশি অধিবাসীর। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স সেখানকার নিবন্ধনকারী সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে। রয়টার্স বলছে, তালিকায় স্থান না পাওয়ার কারণে এই অধিবাসীদের ভবিষ্যত এখন শঙ্কার মধ্যে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আবারও নাগরিকত্ব পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবে।


আসামের নাগরিক তালিকায় স্থান হলো না ৪০ লাখ অধিবাসীর চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশকে ঘিরে রবিবার থেকেই আসামে বিরাজ করছিলো থমথমে অবস্থা। আল-জাজিরা জানিয়েছে, সোমবার দুপুরে আসামের রাজধানী গোহাটি থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন তালিকা উন্মুক্ত করেন। প্রথম ধাপে ১ কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীকে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। তবে বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণে  চূড়ান্ত তালিকায় সেখান থেকে দেড় লাখ অধিবাসীকে বাদ দেওয়ার কথা ছিল।  তাদের পাশাপাশি প্রথম ধাপে তালিকায় স্থান না পাওয়া ১ কোটি ৩৯ লাখ অধিবাসীর ভাগ্যও নির্ধারিত হওয়ার দিন ছিল আজ। ২২ লাখ পৃষ্ঠার এই নাগরিক তালিকাকে ঘিরে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ যখন তুঙ্গে, তখন কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা জানিয়েছে, নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৩ কোটি ২৯ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লাখকে চূড়ান্ত নাগরিকত্ব তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।  রয়টার্স নিবন্ধন-সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানিয়েছে,  ৪০ লাখ, ৭ হাজার ৭০৭ জন তালিকায় স্থান পায়নি। 
তালিকা প্রকাশকে ঘিরে আগামি ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের যাবতীয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মোতায়েন হয়েছেআধা সামরিক কেন্দ্রীয় বাহিনীর ২০ হাজারেরও বেশি সদস্য। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে। আসামের সঙ্গে মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, মনিপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।  প্রকাশিত তালিকাকে ঘিরে সেখানে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, তালিকায় যাদের স্থান মেলেনি, তাদের এক্ষুণি দেশ থেকে  বের করে দেওয়া হবে না। তারা নাগরিকত্ব পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে আসামের অবস্থান ভারতে দ্বিতীয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৬ সালে আসামে সরকার গঠন করে। বিজেপি সরকার আসার পরেই বাংলাদেশি শরণার্থী উৎখাতে উদ্যোগী হয় আসাম সরকার। কে বাংলাদেশ থেকে এসেছে আর কে অসমের বাসিন্দা এই নিয়ে চলছে টানাপড়েন। অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে দাবি করে ‘অবৈধ’ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শপথ নিয়েছিল তারা। এরই ধারাবাহিকতায় একটি আদমশুমারি চালানো হয়। ১৯৫১ সালের পর এটিই আসামে পরিচালিত প্রথম আদমশুমারি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি হিন্দুত্ববাদী প্রচারণায় জোর দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, আসামে নাগরিকত্বের পরীক্ষাসহ বিভাজনমূলক কর্মসূচি এরইমধ্যে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এনসিআর-এর খসড়া তালিকাটি নতুন করে সহিংসতা উসকে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত কয়েক দশক ধরে বাংলা ভাষাভাষীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যার ফলে ‘বাঙালি বনাম অসমীয়’র মতো বিভাজনমূলক ধারণা আসামের রাজনীতিতে গেড়ে বসেছে। অনেক বছর ধরেই আসামে ‘বহিরাগতদের’ বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন চলছে। প্রাথমিকভাবে ওই আন্দলোনের লক্ষ্য ছিল নৃতাত্ত্বিকভাবে যারা অাসমীয় নয় তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন ‘বহিরাগত’ বলতে ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী’ বোঝানো হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই ‘বহিরাগতবিরোধী’ প্রচারণাকে ব্যবহার করেই ২০০৬ সালে রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন হয়। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘বহিরাগতদের’ কারণে আসামের পরিচয় ‘বিনষ্ট’ হওয়া রুখতে তারা জাতীয় নাগরিকত্বের তালিকা হালনাগাদ করবে। আর হয়েছেও তাই। প্রথম ধাপে হালনাগাদ করা তালিকায় নাম নেই অনেক বাংলাভাষী মানুষের। কয়েক প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাসকারীদেরও নাগরিকত্বের তালিকায় নাম ওঠেনি। দেখা গেছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাংলাভাষী তিনটি প্রশাসনিক এলাকার বেশিরভাগ আবেদনকারী তালিকাভুক্ত হননি। চূড়ান্ত তালিকা থেকেও ৪০ লাখ অধিবাসী বাদ পড়লেন। 

ভারতে ‘ইলিগ্যাল মাইগ্রেন্টস ডিটারমিনেশন বাই ল’ বা আইএমডিটি নামের অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত আগের যে আইনটি ছিল তাতে বলা হয়েছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। তবে ২০০৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনের সেই ধারাটি উল্টে দিয়েছে, যার ভিত্তিতে চালু থাকা জাতীয় নাগরিকত্ব হালনাগাদ প্রকল্প এখন লাখ লাখ মানুষের ঘর ছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত নতুন আইনে বলা হয়েছে, যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সরকার নিশ্চিত নয়, তাদের নিজেদেরই নাগরিকত্বের প্রমাণ হাজির করতে হবে। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে আসামের সকল বাসিন্দাকে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে যে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে আছে। তবে বাংলাদেশি মুসলিমদের কেউ কেউ বলছেন, তাদের পূর্বসূরীরা এসব প্রমাণ বা নথি সংরক্ষণ করার কথা বুঝতে পারেননি। এই অবস্থায় নাগরিক প্রমাণের মতো যথেষ্ট কাগজপত্র অনেকের নেই। 

/বিএ/
সম্পর্কিত
তাইওয়ানকে হুমকি দেওয়া বন্ধ করুন: উইলিয়াম লাই
৭ দেশের জাহাজ চলাচলে করতে হবে না আলাদা চুক্তি
২০০ বগি কিনতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলওয়ের চুক্তি
সর্বশেষ খবর
সবার আগে ভোট দিতে ভোর থেকে কেন্দ্রের বাইরে বৃদ্ধের অপেক্ষা
সবার আগে ভোট দিতে ভোর থেকে কেন্দ্রের বাইরে বৃদ্ধের অপেক্ষা
রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
যাদের কাছে নাম আছে ধাম নাই
জলবায়ু শরণার্থীযাদের কাছে নাম আছে ধাম নাই
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সর্বাধিক পঠিত
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জানালেন ওবায়দুল কাদেরঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিহত হলেন যারা
ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিহত হলেন যারা
পাউবোর দুই প্রকৌশলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পাউবোর দুই প্রকৌশলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা