X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১
রয়টার্সের অনুসন্ধান

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বিদ্বেষ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে ফেসবুক

বিদেশ ডেস্ক
১৬ আগস্ট ২০১৮, ১২:১৯আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১২:২৫

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। যার ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা সহিংসতার মুখে পড়েছে। বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা খুব অল্প মাত্রায় কার্যকর হয়েছে।এখনও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে এই তথ্য জানা গেছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বিদ্বেষ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে ফেসবুক

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। এমন বাস্তবতায় নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দশ লাখে। এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে। 

এ বছর এপ্রিলে জাতিসংঘের সমালোচনার মুখে পড়েছিল ফেসবুক। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার পেছনে ফেসবুক ব্যবহারের "বড় ধরনের ভূমিকা ছিল"। এরপর ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গকে জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় সামাজিক এই নেটওয়ার্কের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মার্কিন সিনেটরদের কাছে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয় । তিনি স্বীকার করেন যে, তার প্রতিষ্ঠানের আরও বেশি কিছু করা প্রয়োজন ছিল এবং দেশটিতে যা ঘটেছে তাতে ‘ভয়াবহ ট্রাজেডি’।তিনি বলেছিলেন, এই বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করতে বার্মিজ ভাষায় পারদর্শী আরও লোকবল নিয়োগ দিচ্ছেন। সাধারণত ব্যবহারকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্বেষমূলক পোস্ট চিহ্নিত করে ফেসবুক। তবে বার্মিজ ভাষায় এই সেবা চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।

মানবাধিকার সংস্থা ও গবেষকরা আগেই সতর্ক করে বলেছিলেন, ২০১৩ সাল থেকে মিয়ানমারে ফেসবুক ব্যবহার করে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। মিয়ানমারে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। কিন্তু এই সংকট সমাধানে সফল হয়নি ফেসবুক।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ইউসি বার্কেলি স্কুল অব ল’র হিউম্যান রাইটস সেন্টারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিষয় ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও এখনো মিয়ানমারের এই মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সহস্রাধিক উসকানিমূলক পোস্ট ছয় বছর ধরে অনলাইনে রয়েছে।

ফেসবুকের নিয়ম অনুসারে জাতিগত কোনও গোষ্ঠীর ওপর ‘সহিংসতা কিংবা অমানবিক’ আক্রমণ নিষিদ্ধ।

রয়টার্স বলছে, তাদের হাতে আসা অধিকাংশ রোহিঙ্গাবিরোধী মন্তব্য, ছবি এবং ভিডিও বার্মিজ ভাষায় পোস্ট করা। ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক পোস্টে লেখা হয়েছিলো, ‘হিটলার যেমনভাবে ইহুদিদের তাড়িয়ে দিয়েছিলো আমরা তেমন করেই তাদের (রোহিঙ্গাদের) তাড়াবো।’ অন্যান্য পোস্টে রোহিঙ্গাদের ‘কুকুর, ধর্ষক’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানে বলা হচ্ছে, ফেসবুক সব ধরনের ফ্ল্যাগড ম্যাটেরিয়াল (যা নিয়ে কারও আপত্তি আছে) সরিয়ে ফেলেছে। বিবিসির দাবি, ফেসবুক এ ধরনের আক্রমণাত্মক পোস্ট শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যবহারকারীদের ওপর নির্ভর করে, এর সফটওয়্যার বার্মিজ ভাষা বুঝতে যথেষ্ট দক্ষ নয়।

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, মিয়ানমারে ফেসবুকের একজন কর্মীও নেই। কুয়ালালামপুরে একজন কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে মিয়ানারে বিদ্বেষমূলক পোস্ট খুঁজে বের করে ফেসবুক। জুলাইয়ে ফেসবুক বিদ্বেষমূলক পোস্ট বন্ধ করতে নতুননীতির ঘোষণা দেয়। শ্রীলঙ্কা থেকে এটি শুরু হওয়ার কথা ছিলে। মিয়ানমারে আশিন উরাথুর মতো বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ বেশ কয়েকজনের অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে ফেসবুক। উগ্র জাতীয়তাবাদী গ্রুপ মা বা থা এর পেজও ডিলিট করে দেয় ফেসবুক।

রয়টার্সের অনুসন্ধান প্রকাশের ১২ ঘণ্টা পর ফেসবুক জানায়, বছরের বাকি সময়টাতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে তারা। বার্মিজ ভাষা জানা ৬০ জন কর্মী আছে তাদের। আরও ৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

ফেসবুকের এক মুখপাত্র জানান, ‘আমাদের পণ্যের অপব্যবহার বন্ধ করা আমাদের দায়িত্ব। বিশেষ করে মিয়ানমারের মতো দেশে যারা নতুন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

 

/এমএইচ/এএ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা সমস্যা: নিরাপত্তা পরিষদে নিজের অবস্থান তুলে ধরলো বাংলাদেশ
রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া দিলে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা
সর্বশেষ খবর
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক