কারাগারে আটক আন্তর্জাতিক অঙ্গনের স্বনামধন্য আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই ব্রিটিশ এমপি। লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলি ও রূপা হক পৃথক বিবৃতিতে শহিদুলকে গ্রেফতারের ঘটনায় ন্যায়বিচার ও অবিলম্বে তার নিরাপদ মুক্তি দাবি করেছেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সংঘটিত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহিংস হামলার নিন্দা ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তাগিদ দিয়েছেন, মত প্রকাশের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতের।
২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গত সপ্তাহ থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। কয়েকদিন আন্দোলনটি শান্তিপূর্ণ থাকলেও একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু হয়। এরপর ৪ আগস্ট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন কর্তৃক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হত্যা ও ধর্ষণের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
রুশনারা আলি তার বিবৃতিতে বলেন, এটা খুবই উদ্বেগের ব্যাপার যে ২৯ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সড়কপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে শিক্ষার্থীসহ ৫০ জনেরও বেশি আটক করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের অনেকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ থাকলেও তাদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। রুশনারা তার বিবৃতিতে বলেন, ‘আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকদের ওপর অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য এই সহিংসতার ঘটনার বিচার করতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। সহিংসতা সৃষ্টিকারী সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন প্রসঙ্গে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় ৫ আগস্ট ইউনিফর্মহীন বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা পুলিশ আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে তুলে নিয়ে যায়। তারা বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মোবাইল জব্দ করে। টানতে টানতে শহিদুল আলমকে পুলিশ ভ্যানে তোলে। পরের দিনই তাকে আদালতে নেওয়ার সময় দেখা যায় হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তার। শহিদুল শারীরিক নিপীড়নের অভিযোগ করেন। রুশনারা ও রূপা তার নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শহিদুলের জন্য ন্যায়বিচার এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সাত দিনের রিমান্ড শেষে শহিদুলের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দেওয়া হয়। ১২ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। রুশনারা সড়কপথের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানালেও শহিদুলের গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন। তাকে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অত্যন্ত সুপরিচিত আলোকচিত্রী আখ্যা দিয়ে রুশনারা বলেন, ‘আমরা তার নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই যেন তার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করা হয়।’
আরেক লেবার এমপি রুপা হক বলেন, তিনি বাংলাদেশি হাইকমিশন ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে শহিদুলের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ আটকের দীর্ঘ তালিকার সর্বশেষ শিকার হচ্ছেন শহিদুল। তার পরিবার আতঙ্কিত যে এরপর তার কী হবে।’
I've written to Bangladeshi High Commission and UK Foreign Office demanding action after constituent-relatives of acclaimed photographer #ShahidulAlam imprisoned by Bangladeshi officials for speaking out on student protests in Dhaka @AlJazeera contacted me. #FreeShahidul pic.twitter.com/zuKBnmjWGV
— Rupa Huq MP (@RupaHuq) August 14, 2018
এক টুইটবার্তায় রুপা হক বলেন, শহীদুলের প্রতি আচরণ স্পষ্টতই মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মত প্রকাশের আন্তর্জাতিক অধিকারের পরিপন্থী। তিনি যে অবস্থায় আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তাতে তার পরিবার, বন্ধু, দেশি-বিদেশি আন্দোলনকর্মীদের পাশাপাশি আমি নিজেও উদ্বিগ্ন। তাকে মারধর করা হয়েছে এবং সেজন্য তিনি হাঁটতেও পারছিলেন না। তিনি এখনও জেলে আছেন এবং হয়তো আগের অবস্থাতেই।’ শহিদুলের মুক্তি নিশ্চিতে ব্রিটি সরকারের কাছে তিনি বাংলোদেশের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিতের বিষয়টিও ব্রিটিশ সরকারের নজরে এনেছেন তিনি।