X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

৬৮ বছর পরে আবার দেখা হলো মা ও ছেলের

বিদেশ ডেস্ক
২০ আগস্ট ২০১৮, ২১:০০আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৮, ০৯:২০
image

১৯৫০ সালের কোরীয় যুদ্ধের সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এক পরিবারের পুনর্মিলন হয়েছে সোমবার (২০ আগস্ট)। ৬৮ বছর পরে এক মা বুকে ফিরে পেয়েছেন তার হারানো ছেলেকে। এতগুলো বছর ধরে মা তার মেয়েদের নিয়ে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। আর বাবা তার ছেলেকে নিয়ে ছিলেন উত্তর কোরিয়ায়। এর মধ্যে বাবার মৃত্যু হয়েছে। শুধু ছেলে স্যাং চোল দেখা পেলেন তার মা লি কেউম সেওমের। দেখা হওয়ার পর বাধাভাঙা অশ্রুর প্লাবনে সিক্ত হয়ে তারা আলিঙ্গন করেছেন একে অপরকে। সেখানে মায়ের সঙ্গে চোল আরও দেখা পেয়েছেন তার দুই বোনের যারা দক্ষিণ কোরিয়াতেই থেকেছেন এতগুলো বছর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, স্যাং চোল ও লি কেউম সেওমের দেখা হলেও হাজারো এমন পরিবার আছে ভাগ্য যাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হয়নি; পুনর্মিলনের আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসকারী আবেদনকারী অথবা উত্তর কোরিয়ায় বসবাসকারী তার হারানো স্বজন। পরিবারগুলোর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সদস্যদের পুনর্মিলনের জন্য নেওয়া উদ্যোগকে আরও দ্রুত ও ব্যাপক করে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। ৬৮ বছর পর ছেলের কাছে মা, মায়ের কাছে ছেলে

গত এপ্রিল মাসে দুই কোরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত পানমুনজমে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের মধ্যে হওয়া সমঝোতার অংশ হিসেবে কোরীয় যুদ্ধের সময় পরিবারবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সদস্যদের পুনর্মিলনের উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশ। এ উদ্দেশ্যে সোমবার পুনর্মিলনের আয়োজন করা হয়েছিল উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে থাকা ডিমিলিটারাইজড জোনের সোকচো এলাকায় অবস্থিত হানহা রিসোর্ট হোটেলে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাস ভর্তি করে সংশ্লিষ্টরা গেছেন সেখানে। পরিবারের বিছিন্ন হয়ে যাওয়া সদস্যদের সঙ্গে পুনর্মিলনের সুযোগ পেতে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫৭ হাজার পরিবার আবেদন করেছিল। তার মধ্যে ভাগ্যবান ৮৯টি পরিবারের আবেদন গৃহীত হয়েছে এবার। উত্তর কোরিয়ায় নিয়ে যাওয়ার আগে দক্ষিণ কোরিয়া তার নাগরিকদের আচরণবিধির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, উত্তর কোরিয়ার কাছে স্পর্শকাতর এমন কোনও কিছু বলা যাবে না।

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যাওয়া নাগরিকরা রিসোর্টে পৌঁছালে রেডক্রসের সদস্যরা তাদের হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান। পরিবারগুলো সেখানে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল তাদের পরিবার বিছিন্ন স্বামী-স্ত্রী-ভাই-বোন-সন্তানদের দেখার আশায়, দীর্ঘ বিচ্ছেদে যাদের ঝাপসা স্মৃতিটুকুই শুধু রয়ে গেছে। এমন কি অস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল সেই প্রিয় মুখগুলো।

উত্তর কোরিয়াতে থাকা ছেলের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে স্যাং চোলের মা লি কেউম সেওম সিএনএনকে বলেছিলেন, তিনি তার ছেলের দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, যাতে তাদের দেখা হতে পারে। এত বছর পরে ছেলের সঙ্গে দেখা হলে কি বলবেন তা ভেবে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন তিনি, ‘তাকে আমি কী বলব? আমি কী জানতে চাইব তার বাবা আমার সম্পর্কে তাকে কী কী বলেছে? তার বাবা নিশ্চয় তাকে জানিয়েছে, কীভাবে আমরা বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম, আমাদের বাড়ি কোথায় ছিল! আমি তার কাছে জানতে চাইব।’ ছেলেকে দেখার আগ পর্যন্ত তার মনে সংশয় থাকলেও দেখা হওয়ার পর ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিতে আর কোনও দ্বিধা হয়নি লির। বাঁধভাঙা অশ্রুর জোয়ারে সিক্ত হয়ে তারা একে অপেরকে জড়িয়ে ধরেছেন শক্তভাবে।

এরপর অশ্রু সামলে একে অপরের খোঁজ নিয়েছেন তারা। ছেলে স্যাং চোল তার মাকে তার বাবার ছবি দেখিয়েছেন। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সময় তিনি ও তার বাবা উত্তর কোরিয়ায় থেকে গিয়েছিলেন। স্যাং চোলের বাবা এর মধ্যে মারা গেছেন। স্যাং চোলের বয়স মাত্র ৪ বছর ছিল যখন তিনি তার মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন হয়ে যান। এখন তিনি ৭১ বছর বয়সের বৃদ্ধ। পুনর্মিলন হয়েছে যেসব পরিবারের তাদের সঙ্গে তাদের উত্তর কোরিয়ায় থাকা পরিবারের সদস্যদের ছবি তুলে ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে উত্তর কোরিয়ায় তারা সেসব ছবি স্মৃতি হিসেবে নিয়ে যেতে পারেন।

রেডক্রসের দক্ষিণ কোরীয় শাখার সভাপতি পার্ক কিউং সেও বলেছেন, ‘ভেবে দেখুন, পরিবারবিছিন্ন সদস্যরা এতগুলো বছর ধরে জানতেন না, তাদের আপনজনরা কোথায় আছেন বা আদৌ বেঁচে আছেন কি না। এই ক্ষোভ ও যন্ত্রণা এক অকল্পনীয় মানবিক বিপর্যয়।’ সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন আরও বেশি পরিবারকে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করিয়ে দিতে দুই কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে মুন জায়ে ইন নিজেরও এক সময় পরিবারবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘পরিবারবিচ্ছিন হয়ে যাওয়া সদস্যদের তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার উদ্যোগের পরিসর বাড়ানো এবং দ্রত বাস্তবায়ন করাটা দুই কোরিয়ার ক্ষেত্রেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কার্যক্রম।

লি ও তার ছেলে চোলের দেখা হলেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি আন সেউং চুনের। তিনি তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার আবেদন করেছিলেন, কিন্তু উত্তর কোরিয়ায় থাকা তার ভাই আগেই মারা গেছেন। চুন খেদের সঙ্গে বললেন, ‘আমি আর কখনও তাকে দেখতে পারব না।’ তবে আশার কথা হচ্ছে, তার ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাগ্নে বেঁচে আছেন। তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। আমি অন্তত আমার বংশের একজন উত্তরসূরির সঙ্গে দেখা তো করতে পারব, বলে নিজেই স্বান্তনা পেতে চাইলেন ভাই হারা বোন চুন।

আবেদন মঞ্জুর না হওয়া এমন একজন দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি জানি না আমার বাবা কবে মারা যাবেন। এরই মধ্যে তার মধ্যে স্মৃতিভ্রষ্টতার লক্ষণ দেখা গেছে। তিনিও যেতে চান আমার বড় ভাইকে দেখতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিবারই তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।’

সিএনএন জানিয়েছে, কোরীয় যুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক রেডক্রস দুই কোরিয়ার পরিবারবিছিন্ন সদস্যদের পুনর্মিলনের জন্য কাজ করে আসছে। তারা অনেক পরিবারকে একত্রিত করতে পারলেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি হাজার হাজার পরিবারের। পুনর্মিলনের জন্য আবেদন করা পরিবারগুলোর ৬০ শতাংশের বেশি আবেদনকারীর বয়স এখন ৮০ বছরের বেশি। অন্তত ৭৫ হাজার পরিবার স্বজনের দেখা পাওয়ার আগেই মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যদের যে বয়স তাতে আরও অনেকেই হয়তো শেষ পর্যন্ত তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন না।

স্যাং চোল ও তার মা লি কেউম সেওম

/এএমএ/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে সিরিজ ভূমিকম্প
আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক