লিবিয়ার ক্ষমতা দখল করতে চাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সংঘর্ষে গত কয়েকদিনে রাজধানী ত্রিপোলিতে অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৮ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণঘাতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে চারটি পশ্চিমা দেশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লিবিয়ার আইনসঙ্গত কর্তৃপক্ষকে দুর্বল করার পদক্ষেপ ও চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।
২০১১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের হামলায় লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘের সমর্থনে একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় চুক্তির সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে।
বিবিসি জানিয়েছে গত সোমবার (২৭ আগস্ট) ত্রিপোলির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ত্রিপোলির দক্ষিণে হামলা চালালে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জিএনএ কর্তৃপক্ষ সমর্থিত বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের ফলে আটকা পড়া শত শত অভিবাসীকে চলতি সপ্তাহের শুরুতে ত্রিপোলি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে তাৎক্ষণিকভাবে সব ধরনের সামরিক তৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। আর যারা ত্রিপোলি অথবা লিবিয়ার অন্য যেকোনও স্থানের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায় তাদের সতকর্ করে দিয়ে বলতে চাই এজন্য তাদের অবশ্যই দায়ী করা হবে।
জিএনএ কর্তৃপেক্ষর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩৯জন মারা গেছে। নিহতদের মধ্যে নিজ বাড়িতে বোমা হামলার শিকার হওয়া মালির এক নাগরিক রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
মানবাধিকার গ্রুপ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেছে নিহতদের মধ্যে ১৮ জন বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে চারটি শিশুও রয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় আটকে পড়া শত শত অভিবাসীকে অন্য আটক কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে বন্ধ রয়েছে ত্রিপোলির বিমানবন্দর।
দীর্ঘ সময় ধরে লিবিয়া শাসন করা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ২০১১ সালের অক্টোবরে ক্ষমতাচ্যুত করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট। বেসামরিক ব্যক্তিদের রক্ষার নামে চালানো হামলায় মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হলে দেশটি এক বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে। বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ নিজেদের সরকার ও পার্লামেন্ট গঠন করে। আর একে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয়। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের সমর্থনে মনোনীত জিএনএ কর্তৃপক্ষ ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর কি কি প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে, সে সম্পর্কে তৈরি থাকায় ব্যর্থতা ছিল তার প্রেসিডেন্ট থাকার সময়কালের সবচেয়ে বড় ভুল।