রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শনের জন্য জাতিসংঘের দলগুলোকে অনুমতি দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)’র চারটি দল উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে দুই সপ্তাহ অবস্থান করবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে।
গত বছরের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ওই অভিযানে জাতিগত নিধনযজ্ঞের আলামত পেয়েছে। মিয়ানমার সরকার বারবারই দাবি করে আসছে যে,নিরাপত্তার স্বার্থে এই অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। কোন নিধনযজ্ঞ চালানো হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘ অভিযোগ করেছে,রাখাইনে সংকট শুরু হওয়ার এক বছর হয়ে গেলেও এখনও সেখানে কার্যকর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সংকট শুরুর পর থেকেই রাখাইনে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। যে কয়েকবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এবং সীমিত পরিসরে।
বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের দলগুলোকে সম্প্রতি ২৩টি স্বতন্ত্র গ্রাম ও তিনটি গ্রাম্য ওয়ার্ড পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে গত জুনে জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর এটাই এ ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র আউইফে ম্যাকডনেল সিএনএন-কে বলেন, “গত বছরের আগস্ট থেকে সংকটের পুরোটা সময় রাখাইনের মংডু গ্রামে ইউএনএইচসিআর-এর একটি কার্যালয় ও দল মোতায়েন থাকলেও মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শন তাদের জন্য ‘কঠোরভাবে নিষিদ্ধ’ ছিল।”
গত মাসে জাতিসংঘ মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এক তদন্ত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক কর্তৃপক্ষও এই নিধনযজ্ঞে ইন্ধন জুগিয়েছে। রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিও তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মন্তব্য করা হয় ওই প্রতিবেদনে। জাতিসংঘ বলছে, রাখাইনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ নিয়ে মিয়ানমার সরকারের প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকারের মাত্রায় তারা অবাক হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,রাখাইন ছাড়াও মিয়ানমারের কাচিন ও শান রাজ্যেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। রাখাইনে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিও (আরসা) স্থানীয়দের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে।