বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পৃথিবীর বরফ অঞ্চলে কী প্রভাব পড়ছে তা নিরুপণে মহাকাশে একটি লেজারসজ্জিত স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ২ মিনিটের দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার ভান্ডেনবার্গ বিমানঘাঁটি থেকে আইস স্যাট-টু নামের মিশনটির যাত্রা শুরু হয়। ডেল্টা টু রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটটিকে কক্ষপথে পাঠানো হয়েছে। এটি মার্কিন মহাকাশ সংস্থার সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির লেজার স্যাটেলাইট বলে দাবি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে খবরটি জানা গেছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে মেরু প্রান্তের বরফগুলো দ্রুত গলছে বলে বার বারই সতর্ক করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিষয়ক দফতর,মার্কিন মহাকাশ সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক ও অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সাল ছিল এ যাবতকালের উষ্ণতম বছরগুলোর একটি। নাসা ও ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর রেকর্ডকৃত ১৩৫ বছরের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, ১৯৭৬ সালের পরবর্তী কোনও বছরই শীতলতম উপাধি পায়নি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে কী পরিমাণ বরফ গলছে তা যথার্থভাবে নির্ণয় করতে লেজার স্যাটেলাইট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নাসা।
জানা গেছে, শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নাসার পাঠানো লেজার স্যাটেলাইটটি সেকেন্ডে সাত কিলোমিটার গতিতে চলবে এবং তিনশো মাইল উপর থেকে সেকেন্ডে ১০ হাজারবার আলোকরশ্মি ফেলবে। এর মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও বরফ অঞ্চল পরিমাপ করা যাবে। কত দ্রুত বরফখণ্ডগুলো গলছে এবং তা কোন অঞ্চলের তাও এর মধ্য দিয়ে নির্ণয় করা যাবে। পরিমাপ করা যাবে বরফের ঘনত্ব।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় আগেই সতর্ক করা হয়েছে। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়,২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬ ফুট বেড়ে যেতে পারে,এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়তে পারেন। ফ্লোরিডার ৬০ লাখ এবং লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য ও ক্যালিফোনিয়া অঙ্গরাজ্যের ১০ লাখ করে বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে ২০১৭ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে হাজারো ঐতিহাসিক এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, সমাধি ক্ষেত্র, মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও প্রাচীন বসতিগুলো। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে গাছপালা এবং প্রাণির আবাসস্থলগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।