বিরোধীদের কারচুপির অভিযোগ, স্বচ্ছতার অভাব আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মধ্যে মালদ্বীপে আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরইমধ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি খবর দিয়েছে, নির্বাচনে কড়া নজর রেখেছে ভারত আর চীন। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেশটি ওপর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতা ও বিরোধী নিপীড়নের অভিযোগের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোট ফলাফল জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, তা নিয়ে এরইমধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয়। অভিযোগ উঠেছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিন দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছেন। কারচুপির অভিযোগ তুললেও এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষিত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ নাশিদের দল।
২০০৮ সালে গণতন্ত্র রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে সেখানে তৃতীয়বার নির্বাচন হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে প্রায় ২লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বিবিসি জানিয়েছে, মালদ্বীপের স্থানীয় সময় সকাল আটটা থেকে ভোট দিতে শুরু করেছে সে দেশের নাগরিকেরা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরীয় এই দ্বীপপুঞ্জটি বিশুদ্ধ ও স্বচ্ছ পানি আর পর্যটনের কারণে বিশ্বে সুপরিচিত। তবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ভিন্নমত দমনে অভিযুক্ত। বিবিসি লিখেছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন, যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী প্রার্থী ইব্রাহিম মোহাম্মদকে ভারত ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সখ্য তৈরির চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এদিকে এরইমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ার করেছে, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে তারা।
২০১৩ সালের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদকে পরাজিত করে ইয়ামিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে নাশিদের সমর্থকরা বলেন, ওই নির্বাচন ছিল জালিয়াতির। প্রথম দফায় বিতর্কিত নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেই ইয়ামিন বিরোধীদের ওপর খড়গহস্ত হন। সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধী দলের অধিকাংশ নেতাদের জেলে পাঠায় তার সরকার। দেশটিতে প্রণীত নতুন নির্বাচন বিধি অনুযায়ী, পর্যবেক্ষকদের আলাদা করে ভোটারদের ব্যালট পেপার দেখার সুযোগ থাকছে না। এর ফলে ভোটের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদেশি সাংবাদিকদের ভোটের সংবাদ সংগ্রহের ব্যাপারেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
নির্বাচনের আগেই প্রধান বিরোধী দল মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও বিদেশি সাংবাদিকদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ এবং নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের সহযোগী পরিচালক প্যাট্রিসিয়া গোসম্যান অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে আবারও ক্ষমতায় আনতে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষ সমালোচকদের আটক করেছে, সংবাদমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। বিরোধী প্রার্থীদের ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি মালদ্বীপ বলেছে, ‘এই ইস্যুগুলোর সমাধান না করলে সম্ভবত এ ধরণের নির্বাচনের ফল জনগণ মেনে নিবে না।’
