X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেক্সিট: দ্বিতীয় গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকটে লেবার পার্টি

বিদেশ ডেস্ক
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৪০আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৪৮

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ থেকে বের হয়ে যেতে নিজের পরিকল্পনা পার্লামেন্টে পাস করতে ব্যর্থ হলে ব্রেক্সিটবিরোধীরা উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছে ইস্যুটি নিয়ে। আর এই ইস্যুতে করণীয় নিয়ে দেশটির বিরোধীদল লেবার পার্টির মধ্যে দ্বিমত প্রকাশ্যে এসেছে। দলের  প্রধান জেরেমি করবিন এই ইস্যুতে আগাম জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিলেও নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার চাপ জোরালো হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন

গত জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের চেকার্সে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্রেক্সিটের জন্য থেরেসা মে যেসব শর্তের খসড়া লিপিব্ধ করেছিলেন সেগুলোর বিষয়ে ইইউ নেতারা অস্ট্রিয়ার সালজবার্গে বৈঠকে বসেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সেখানে থেরাসে মের অনুপস্থিতিতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার পরিকল্পনা সফল হবে না। মূল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড অংশের মধ্যে বাণিজ্যের শর্ত নির্ধারণ নিয়ে। আইরিশ সীমান্তের বিষয়ে ইইউয়ের পরামর্শ হচ্ছে- নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় বাজারের অংশ হিসেবে থাকবে। আর বাকি যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিকভাবে এবং সাংবিধানিকভাবে যুক্তরাজ্যকে বিভক্ত করে ফেলবে।

এদিকে আগামী অক্টোবর মাসেই ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সভা। সেখানে যদি চূড়ান্ত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা উপস্থাপন করা না যায় তাহলে এ বিষয়ে আগামী নভেম্বরে বিশেষ বৈঠক ডাকাটাও সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত থেরেসা মে নিয়েছেন তা বাস্তবায়নে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর করতে হবে, যা ‘নো ডিল-ব্রেক্সিট’ নামে আখ্যায়িত হচ্ছে। এরপরই করবিন তার অবস্থান পরিবর্তন করে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে কথা বলছেন।

এই পরিস্থিতিতে ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিতীয় গণভোটের দাবি দলের মধ্যে জোরালো হলেও করবিন তাতে সমর্থন জানাচ্ছেন না। তিনি সাধারণ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার বিতর্কের পর নেওয়া প্রস্তাবটি বিভক্ত দলটির উভয়পক্ষকেই সন্তুষ্ট করতে পারে। দলটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে দ্বিতীয় গণভোটকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে আলোচনায় রাখতে দলের মধ্যে ভোটাভুটি আয়োজনের। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপ বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নিচ্ছে দলটি।

রবিবার রাতে লেবার পার্টির নেতারা মঙ্গলবার একটি প্রস্তাব উত্থাপনের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। যদি থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট প্ল্যান ভোটে পাস না করে তাহলে একটি গণভোটসহ সব বিকল্প নিয়েই আলোচনার বিষয়টি তাদের দল সমর্থন করবে।

এর আগে করবিন বলেছিলেন, তার দল যদি এমন ভোটের বিষয়ে মতামত দেয় তাহলে তিনিও তা সমর্থন করবেন। বিষয়টি দ্বিতীয় গণভোটের প্রচারণাকারীদের আশান্বিত করে। তিনি বলেছিলেন, তার দল দ্বিতীয় গণভোটের চেয়ে সাধারণ নির্বাচনকেই বেশি পছন্দ করে। নতুন প্রস্তাবও তার সেই অবস্থান থেকে কমই সরাতে পারবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র অ্যান্ড্রু মার শো অনুষ্ঠানে করবিন বলেন, ‘আমরা একটি জাতীয় নির্বাচনকেই বেশি পছন্দ করবো। আমরা তাহলে ইউরোপের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। কিন্তু চলুন দেখি এই সম্মেলনে ফল কী হয়।’ তিনি বলেন, ‘লেবার পার্টি যেকোনও চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘সরকারকে দেওয়া আমাদের দাবিগুলো পূরণ না হলে আমরা ভোট দিয়ে চুক্তি থামিয়ে দেবো। এটা যদি এখনও অফিসে থেকে থাকে তাহলে তা সোজা আলোচনার টেবিলে পাঠানো উচিত। যদি কোনও সাধারণ নির্বাচন হয় আর আমরা দায়িত্ব পাই তাহলে আমরা সোজা আলোচনার টেবিলে যাবো।’

ব্রেক্সিট: দ্বিতীয় গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকটে লেবার পার্টি

করবিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়নের নেতা লিন ম্যাকক্লুসকি বিবিসি’কে বলেন, ‘দ্বিতীয় গণভোটের প্রয়োজন নেই। আমরা কি ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফিরে যেতে চাই? ২০১৬ সালের গণভোটেই জনগণ তার উত্তর দিয়েছে।’

করবিনের এক মুখপাত্র জন ম্যাকডোনেল আবারও বলেছেন, তাদের দল একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। স্কাই নিউজকে ম্যাকডোনেল বলেন, আমরা মনে করি সাধারণ নির্বাচনই সবচেয়ে ভাল সমাধান। কারণ মানুষ তখন ব্যাপক বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ পাবে আর কোনও দল পরবর্তী আলোচনা করতে তা নির্ধারণ করতে পারবে।

জন বলেন, দ্বিতীয় গণভোটে ২০১৬ সালের ভোটের প্রশ্নের পুনরাবৃত্তির পরিবর্তে চুক্তির বিষয়ে হবে। আগের গণভোটে প্রশ্ন করা হয়েছিল তারা ইইউ এ থাকতে চায় নাকি ছাড়তে চায়।

যুক্তরাজ্য আগামী বছরের মার্চ মাসে ইইউ ত্যাগ করতে যাচ্ছে। কয়েক মাস আলোচনার পর দেশটির প্রধান দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক বিভেদ দেখা দিয়েছে। কনজারভেটিভরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন আর কীভাবে ইইউ ছাড়া হবে তা নিয়ে লেবার পার্টিও দ্বিধান্বিত হয়ে আছে। তবে দুই দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, দ্বিতীয়বার গণভোট করার সময় পর্যাপ্ত সময় কি আসলেই আছে?

মে’র কনজারভেটিভ পার্টি জেরেমি করবিনের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। দলটির চেয়ারম্যান রবিবার বলেন, আজ সকালে জেরেমি করবিন প্রমাণ করেছেন তিনি আমাদের দেশ চালানোর জন্য উপযুক্ত নন।  তিনি নিশ্চিত করেছেন যে,  ব্রেক্সিট ইস্যুতে তার দল আমাদের পিছিয়ে দেবে।

/আরএ/এএ/
সম্পর্কিত
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
বিলেতে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন নতুন আসা বাংলাদেশিরা: কমিউনিটিতে প্রতিক্রিয়া
ইরানে পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরায়েলকে ক্যামেরনের আহ্বান
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম