তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর সৌদি রয়েল কোর্টের সমালোচক ও ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।’ আর খাশোগির নিখোঁজের ঘটনাটি তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য তুরস্ক ও সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন।
গত ২ অক্টোবর সৌদি আরব থেকে নির্বাসিত সাংবাদিক ও কলামিস্ট খাশোগি ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর নিখোঁজ রয়েছেন। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, কনস্যুলেটের ভেতরে সৌদি আরবের এজেন্টরা এই সাংবাদিককে হত্যা করেছে। সৌদি আরব এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, কনস্যুলেটে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরেই খাশোগি বের হয়ে গেছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এমন কিছু শুনতে পছন্দ করি না আর আশা করি তা নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে কেউ এটা সম্পর্কে কিছু জানে না।’ ট্রাম্প বলেন, ‘এটা সম্পর্কে বেশ কিছু বাজে গল্প আছে। আমি এগুলো পছন্দ করি না।’
তুরস্কের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এখনও মনে করেন খাশোগিকে হত্যা বা অপহরণের জন্য সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় হিট স্কোয়াড (খুনি বাহিনী) কে ইস্তানবুল পাঠানো হয়েছিল। তারা মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কনস্যুলেটে ঘাপটি মেরে অপেক্ষায় ছিলেন কখন খাশোগি হাজির হন। কনস্যুলেটে এটা ছিল তার দ্বিতীয় প্রবেশ। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ চূড়ান্ত করতে এর আগে শুক্রবার গিয়েছিলেন তিনি। তখন তাকে জানানো কাগজপত্র ঠিক নেই। মঙ্গলবার আসতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন সালমান সিএনএন’কে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, খাশোগিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ হত্যা করেছে বা আটক রেখেছে এমন দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
ট্রাম্পের কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর আছে। কিন্তু তবে যুক্তরাষ্ট্র খাশোগির নিখোঁজের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, মিস্টার খাশোগির নিখোঁজের বিষয়টি ভালভাবে তদন্ত করতে সহায়তা করতে ও বিষয়টি স্বচ্ছভাবে তুলে ধরার জন্য আমরা সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই ।
জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি’কে বলেন, সৌদি কনস্যুলেট থেকে খাশোগির নিখোঁজের ঘটনাটি ‘মারাত্মক উদ্বেগজনক’। তিনি বলেন, 'যদি তার মৃত্যু ও এর ফলে উদ্ভুত অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সত্য হয়, তাহলে এটা সত্যিই দুঃখজনক।' তিনি বলেন, 'আমরা খাশোগির নিখোঁজের ঘটনাটির দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত করে তা প্রকাশ করার জন্য তুরস্ক ও সৌদি আরবকে সহযোগিতার আহ্বান জানাইন।'
শ্যামদাসানি আরও বলেন, 'খাশোগি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর ঠিক কী ঘটছে তা নিয়ে এখন অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তাই এনিয়ে আর কোনও মন্তব্য করার আগে আমরা বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।'
নির্বাসিত সাংবাদিক খাশোগি সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বড় সালোচক। সৌদি অভিজাত পরিবারে জন্ম নেওয়া এই সাংবাদিক গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে রয়েছেন। নির্বাসনে থাকা অবস্থায় তিনি যুবরাজের নেতৃত্বে শুরু হওয়া সংস্কার কর্মসূচির সমালোচনা করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ কলাম লিখতেন।