X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
সিএনএন-এর বিশ্লেষণ

খাশোগি নিখোঁজের পর সৌদি যুবরাজের ভাবমূর্তির কী হবে?

বিদেশ ডেস্ক
১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৩৭আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:২৯
image

কেউই এমন ধারণা করতে পারেনি। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানাতে। ২০৩০ সালের মধ্যে আধুনিক সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার রূপরেখা বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা ছিল তার। বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনের সম্মিলনস্থল দাভোসের কথা মাথায় রেখে সৌদি যুবরাজ বলতে চাইছেন, এখানে তিনি ‘মরুভূমির দাভোস’ প্রতিষ্ঠা করবেন। তবে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেট ভবন থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা রিয়াদের ঘনিষ্ঠ পশ্চিমা-সহযোগীদের ভীত করে তুলেছে। বিনিয়োগকারীদের ডেকে সম্মিলিত করার মধ্য দিয়ে আধুনিক সৌদি আরবের যে রূপরেখা সৌদি যুবরাজ তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, খাশোগি নিখোঁজের ঘটনা তার থেকেও বেশি করে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘটনার পরও যুবরাজ তার ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারবেন কিনা।
খাশোগি নিখোঁজের পর সৌদি যুবরাজের ভাবমূর্তির কী হবে?

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, মূল্যবোধের মিল থাকলেই কেবল কোনও দেশের সঙ্গে জোট করা যেতে পারে। কেবল যুক্তরাজ্য নয়, বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশই এই ধারণায় বিশ্বাসী। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতম সম্পর্কসূত্রে যুক্ত রয়েছে। বিশেষত সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ট্রাম্পের জামাতার সম্পর্কের দিকটি বারবার আলোচিত হয়েছে।

কেবল খাশোগি নিখোঁজের ঘটনা নয়, একজন সংস্কারক হিসেবে সৌদি যুবরাজের ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়েছে আগেই। নারী অধিকারকর্মীদের আটক করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। রাজপরিবারের অভ্যন্তরে কথিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর দমনের অভিযোগও রয়েছে তার নামে। সৌদি আরবের বিতর্কিত ভূমিকা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সখ্য বিদ্যমান রয়েছে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির বিষয়টিও এগিয়ে নিতে চায় রিয়াদ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কই কি পারবে মোহাম্মদ বিন সালমানের ইমেজ রক্ষা করতে? খাশোগির নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরব বিয়ষটিকে কীভাবে মোকাবিলা করছে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

প্রশ্ন হলো, মোহাম্মদ বিন সালমান কি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো সমস্ত অভিযোগ অস্বীকারই করে যাবেন? তবে পুতিনের বাস্তবতা আর মোহাম্মদ বিন সালমানের বাস্তবতা তো এক নয়। পুতিনের বিরুদ্ধে আনা নার্ভ এজেন্ট হত্যা কিংবা মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের মতো অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ কিন্তু নেই। তবে খাশোগি হত্যার ক্ষেত্রে তুরস্কের দাবি অনুযায়ী তাদের কাছে সৌদি সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ আছে। সেসব আলামত তারা বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে সরবরাহও করছে।

সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এমন হতেই পারে যে এতকিছু জানার পরও যুক্তরাষ্ট্রসহ সৌদি আরবের কৌশলগত মিত্ররা রিয়াদে বিনিয়োগ কিংবা অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করবে না। তবে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রের এমন অবস্থানের সঙ্গে একমত থাকবে না। তারা সৌদি আরবের এসব অপকর্ম একইভাবে সহ্য করবে না। তবে সালমান বিন মোহাম্মদকে তার ২০৩০ সালের আধুনিক সৌদি আরবের রূপরেখা বাস্তবায়নে সেই বিনিয়োগকারীদের সংশ্লিষ্টতা অপরিহার্য। এটাই মোহাম্মদ বিন সালমানের পতনের কারণ হতে পারে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, বর্তমানের এই যুবরাজ বাদশাহ হতে যাচ্ছেন এবং তার নেতৃত্বে সৌদি নৃশংসতা আরও ব্যাপক হবে। সৌদি রাজপরিবারে আরও অনেক রাজপুত্র রয়েছেন, এমন নয় যে তাদের কেউ বাদশাহকে তার ছেলের সম্পর্কে সচেতন করেননি। বলেননি যে তার সন্তান মোহাম্মদ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছেন।

বাদশাহরাই ঐতিহ্যগতভাবে সবসময়ই সৌদি আরব শাসন করেন। তবে অতীতে সবসময়ই রাজদরবারের (রয়াল কোর্ট) পরামর্শ মোতাবেক রাজতন্ত্র পরিচালিত হতো। এটি ছিল একটি সংঘবদ্ধ প্রক্রিয়া। তবে সালমান বিন মোহাম্মদ যুবরাজ হওয়ার পর এই ঐতিহ্য আগের জায়গায় থাকেনি। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজপুত্রদের গ্রেফতার-আটক-হয়রানি করে, তাদের অর্থ ও সম্পদ কেড়ে নিয়ে তিনি সংঘবদ্ধ শাসনব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছেন। মাঝরাতে মন্ত্রীদের তলব করে খুশিমতো নির্দেশনা বাস্তবায়ন করান তিনি। সিএনএন একে বলছে ‘মাঝরাতে তেল পুড়িয়ে দেশ চালানোর খুবই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্দেশনা হাজির করা আর অন্যদের না শোনা।’ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যে ব্যবস্থা সৌদি আরবকে বছরের পর বছর স্থিতিশীল রেখেছে, তাকেই ভেঙে দিয়ে নিজেকে বিচ্ছিন্নই করেছেন সৌদি যুবরাজ।

/বিএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ