X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোমেরোকে সেইন্ট ঘোষণার প্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে জেগেছে সালভাদোর

বিদেশ ডেস্ক
১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৪৭আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ২০:২৭

মধ্য আমেরিকার দেশ সালভাদোরের গৃহযুদ্ধ শেষ হয়েছে ২৬ বছর আগে। কিন্তু এখনও যুদ্ধের সময়কার নানা অপরাধের বিচার পাননি ভুক্তভোগীরা। যুদ্ধ শুরুর আগে মার্কিন সমর্থিত সামরিক বাহিনীর হাতে খুন, গুম ও নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষের পক্ষে কথা বলেছিলেন যে মানুষটি, সেই আর্চবিপশ অস্কার রোমেরোকে ‘সেইন্ট’ বা ‘সাধু’ হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে ক্যাথলিক চার্চ। তাকে এমন মর্যাদা দেওয়ায় আবার সামনে উঠে এসেছে ওই গৃহযুদ্ধে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ হত্যার বিচারের দাবি।

  অস্কার রোমেরোর ছবি হাতে একজন সালভাদোরিয়ান

গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে রোমেরো সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলে ও গরীব মানুষের অধিকারের দাবি করে ক্ষমতাধর শত্রু তৈরি করেন সালভাদোরের খ্রিস্টান ধর্মযাজক রোমেরো। তারই জেরে ১৯৮০ সালের ২৪ মার্চ একটি সমাবেশে তাকে গুলি করে হত্যা করে সামরিক বাহিনী। এমনকি তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানেও নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয় আরও অনেক মানুষকে। ওই ঘটনার পরই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় যা চলে ১২ বছর ধরে। গৃহযুদ্ধে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ নিহত হন। তাদের বেশিরভাগই মার্কিন সমর্থিত সালভাদোরান সামরিক বাহিনীর হাতে মারা যান।

গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর একটি একটি রাজক্ষমা আইন জারি করা হয়। এর মাধ্যমে সব যুদ্ধাপরাধীকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। তবে ২০১৬ সালে আইনটিকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে তা বাতিল করে দেয় সালভাদোরের সুপ্রিম কোর্ট। তারপর থেকে খুবই ধীরগতিতে ওই সময়কার বিভিন্ন অপরাধের তদন্ত। তবে এখন পর্যন্ত আদালতে বিষয়টি নিয়ে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। এমনকি ধর্মযাজক থেকে নিপীড়িত মানুষের নেতা হয়ে ওঠা রোমেরোর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মামলা পুনরায় চালু করা হলেও তার বিচারে কোনও অগ্রগতি হয়নি। ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো বা ষড়যন্ত্র করার জন্য কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এমনকি তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর গুলিতে অনেক মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায়ও কোনও মামলা বা বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের একটি ট্রুথ কমিশন তাদের তদন্তে জানিয়েছিল, দেশটির তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা ও পরবর্তীতে ডানপন্থী আরেনা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা রবার্তো ডি আউবুইসন ওই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ডি আউবুইসন ১৯৯২ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও তাকে কোনও মামলার মুখোমুখি হতে হয়নি। রবিবার (১৪ অক্টোবর) রোমেরোকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সেইন্ট’ বা ‘সাধু’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সালভাদোরবাসী তার এই সিদ্ধাবস্থাকে এমনভাবে উদযাপন করছে যেখানে গর্ব ও আনন্দ, রাগ ও বেদনায় পরিণত হচ্ছে।

গৃহযুদ্ধ ১৯৯২ সালে শেষ হলেও সালভাদোরে কখনওই শান্তি আসেনি। মার্কিন অভিবাসন নীতি দেশটিতে সন্ত্রাসী দলগুলোকে শিকড় বিস্তারে সহায়তা করেছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর লড়াই, বিচারিক দায়মুক্তি ও রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণে দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সহিংস স্থানগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী দলগুলো মূলত মার্কিন মূলকের ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।

২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টে রাজ ক্ষমা বাতিল হওয়ার পরের বছর মারিয়া জুলিয়া হান্দান্দেজ হিউম্যান রাইটস অ্যাসেসিয়েশন নামে একটি সংগঠন রোমেরো হত্যা মামলাটি পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়। সংগঠনটির পরিচালক ওভিদিও মাওরিসিও গারসিয়া বলেন, ‘আর্চবিশপ রোমেরোর মামলার ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তিনি যেসব ভুক্তভোগীর পক্ষে লড়াই করেছেন তাদেরও সম্মানিত করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘তার মামলাটি সবচেয়ে বেশি প্রতীকী কারণ মামলাটির পেছনে আরও অনেক ভুক্তভোগী আছেন যারা নিহত, নিখোঁজ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’

  আর্চবিশপ অস্কার রোমেরো ও পোপ ষষ্ট পলকে `সেইন্ট` ঘোষণা করছে ক্যাথলিক চার্চ

১৯৭৭ সালে সালভাদোরের স্থানীয় এক সম্প্রদায়ের নেতা নিখোঁজ হওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়েন তার স্ত্রী গুয়াদালুপে মেজিয়া। ওই সময় রোমেরো বিপদ থাকার পরও তাকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বলেছিলেন। মেজিয়া জানান, তিনিসহ অন্যান্য স্বজন হারানো মানুষকে রোমেরো বলেছিলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হও আর তাহলেই তোমরা তোমাদের প্রিয়জনদের খুঁজে বের করতে পারবে’। মেজিয়া বলেন, ‘তিনি আমাদের সমর্থন করেছেন এবং আমরা যা কিছু করেছি তিনি সব সময় আমাদের পাশে থেকেছেন’।

মেজিয়া এখনও তার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার মামলাটিতে ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছেন।  রোমেরোর কথা স্মরণ করে মেজিয়া বলেন, ‘তিনি মারা গেছেন কিন্তু তার আদর্শ আমাদের জন্য রেখে গেছেন। যাতে আমরা লড়াই চালিয়ে যেতে পারি আর আমরা চাই, সেই শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা একদিন আমরা পাবই’।

সালভাদোরের গৃহযুদ্ধে দুই ভাই ও এক বোনকে হারিয়েছেন ৬৪ বছর বয়সী মারিয়া ইরমা ওরেল্লানা। তিনিও ন্যায়বিচারের আশা ছাড়েননি। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও কোনও বিচার দেখতে পাইনি’। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও অনেক মামলায় ন্যায়বিচারের অভাব বোধ করি।’

রবিবার (১৪ অক্টোবর) রোমেরোকে সেইন্ট ঘোষণা করবে ক্যাথলিক চার্চ। এখন সালভাদোরের সর্বত্র রোমেরোর চশমা পরা ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি খুবই ধনীদের কাছে খুবই ভয়ংকর লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তারা তাকে ‘আলখাল্লা পরা গেরিলা’ হিসেবে অভিহিত করতো। তার মৃত্যুর পর রক্ষণশীল রাজনীতিক ও ধর্মগুরুরা খুবই জঘন্যভাবে তার সিদ্ধাবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ তিনি বামপন্থী স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের সহায়তা করেছিলেন। তবে বেশিরভাগ ডানপন্থী রাজনীতিকই এখন লোক দেখিয়ে রোমেরোর সিদ্ধাবস্থাকে সমর্থন করে থাকেন। আরেনা পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কার্লো কালেজা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, রোমেরো হত্যাকাণ্ডের ‘সত্য বের করতে সত্যিকার তদন্তে’ সহায়তা করবেন। কিন্তু তার দল এখনও অস্বীকার করে আসছে যে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা ডি আউবুইসন ওই ঘটনায় জড়িত। দলটি গত আগস্ট মাসেও আউবুইসনের ৭৫তম জন্মদিন পালন করেছে।

রোমেরোকে সেইন্ট ঘোষণার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতালির রোমে গেছেন সালভাদোরের নাগরিক সোফিয়া হান্দান্দেজ। টেলিফোনে তিনি দ্য গার্ডিয়ান’কে জানান, তার মেয়ে, দুই সহোদর ও চার ভাতিজার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি হয়নি, এমনকি মামলাও হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকেই ভুক্তভোগী আর আমরা শান্তি, ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।’ তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের মামলা গ্রহণ করার জন্য আমরা আমাদের দাবির জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। রোমেরো আমাদের সেটাই শিখিয়েছেন।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/আরএ/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা