X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি যুক্তরাষ্ট্র: তালেবান

বিদেশ ডেস্ক
১৪ অক্টোবর ২০১৮, ২২:৪৩আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ২২:৪৫

কাতারে তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে যুক্তরাষ্ট্র রাজি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নেতারা। শুক্রবার তালেবান প্রতিনিধি ও মার্কিন দূত জালমায় খলিলজাদ দোহায় প্রাথমিক বৈঠক করেন। বৈঠকে আফগানিস্তানে ১৭ বছরের যুদ্ধ শেষে তালেবানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ঊর্ধ্বতন তালেবান নেতা কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে ওই বৈঠকের তথ্য জানিয়েছে। তবে বৈঠকটির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি মার্কিন কর্মকর্তারা।

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি যুক্তরাষ্ট্র: তালেবান

২০০১ সালে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়ে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট। এরপর থেকেই দেশটিতে চলছে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ। গত জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে যে, আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনীর ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে তারা তালেবানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। ওই ঘোষণার পর মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলসের সম্পৃক্ততায় প্রথমবার বৈঠক করেন তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করলেন তারা।

একজন তালেবান কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ছয় প্রতিনিধি আমাদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দোহায় পৌঁছেছেন। তারা বিদেশি সেনা প্রত্যাহারসহ সব বিষয় নিয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছেন।’ এটা প্রাথমিক বৈঠক ছিলো জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, নিকট ভবিষ্যতে আরও বৈঠক হবে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সব ইস্যু নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে, বিস্তারিত নয়’।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে ২০১৩ সালে দোহায় প্রতিষ্ঠিত হয় তালেবান কার্যালয়। তবে চালুর পরই আফগানিস্তানে তালেবান শাসনামলে ওড়ানো পতাকার মতো একই ধরনের পতাকা ওড়ানোর পরই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন। তিনি অভিযোগ করেন, দোহার কার্যালয়কে তালেবানরা নিজেদের প্রবাসী সরকারের অনানুষ্ঠানিক দূতাবাস হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তখনই নামিয়ে নেওয়া হয় সেই পতাকা। কবে আবার খোলা হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই তখন থেকে খালি রয়েছে কার্যালয়টি। তারপর থেকেই দোহার বিভিন্নস্থানে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা

আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানি শান্তি আলোচনা শুরু করতে বারবার তাগিদ দিয়ে আসছে। কিন্তু তালেবানরা তার সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পুতুল সরকার’ আখ্যা দিয়ে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। র পরিবর্তে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরুর দাবি করতে থাকে।

সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের আফগান পুনর্গঠন বিষয়ক দূত নিযুক্ত হয়েছেন জালমায় খলিলজাদ। তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে তিনি এরইমধ্যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শুক্রবার তালেবানের সঙ্গে বৈঠকে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছেন তিনি।

কাবুলের রাজনীতি বিশ্লেষক ফয়জুল্লাহ জালান্দ বলেন, আফগান যুদ্ধ শেষ করতে দীর্ঘ মেয়াদী আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং তালেবান ও আফগান সরকারের ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তি দরকার। তিনি বলেন, ‘আফগান যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র সব পদ্ধতি, নীতি ও কৌশলই প্রয়োগ করে দেখেছে, কিন্তু তার পরিবর্তে যুদ্ধ শুধু বেড়েই গেছে। দেশের আরও আরও এলাকার নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে তালেবান।’ তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৪০০ থেকে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা সংখ্যা ১৪ হাজারে বাড়ানোর কৌশলও ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দীর্ঘমেয়াদী সমর্থনই কেবল আফগান শান্তির নিশ্চয়তা দিতে পারে। এর সঙ্গে থাকতে হবে তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি।

আফগান তালেবান সদস্য

তালেবান সদস্যরা বলে আসছে, বিদেশি সেনার উপস্থিতিই আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার প্রধান অন্তরায়। বিদেশি সেনা প্রত্যাহার ছাড়াও তালেবানের শর্তের মধ্যে রয়েছে নেতাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আফগানিস্তানে বন্দি সব সদস্যের মুক্তি এবং একটি আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা।

পাকিস্তানে নিযুক্ত সাবেক তালেবান দূত আবদুল সালাম জায়েফ বর্তমানে দোহায় বসবাস করেন। তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে তার। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনার খবর তিনিও নিশ্চিত করেছেন। ওই বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তবে তিনি বলেছেন, ‘বিদেশি সেনা প্রত্যাহার কার্যকর করতে এখন শুধু সময় সীমা নির্ধারণ করা জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে, আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সময়সীমা নির্ধারণের বিষয়ে এখনও একমত হননি মার্কিন কর্মকর্তারা’।  তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র জিততে পারছে না। তারা সেটা জানে। এর মানে দেশটিতে যুদ্ধ শেষ করতে তালেবানের পরিস্থিতির বিষয়ে তাদের একমত হতে হবে’।

তবে কোনও কোনও বিশ্লেষকের আশঙ্কা, বিদেশি সেনা প্রত্যাহার হলেই আফগানিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের অবসান হবে না। বিগত কয়েক মাসে দেশজুড়ে বেড়েছে সহিংস ঘটনার সংখ্যা। উত্তরের বাদাকশান, বাগলান, ফারিয়াব থেকে শুরু করে পশ্চিমের ফারাহ প্রদেশ পর্যন্ত আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

/জেজে/আরএ/
সম্পর্কিত
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা