X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

গার্ডিয়ান সাংবাদিকদের ওপর হামলার সাফাই দিয়ে সমালোচনার মুখে ট্রাম্প

বিদেশ ডেস্ক
২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৫৪আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৫৯

যুক্তরাষ্ট্রের মোন্টানায় ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিকের ওপর রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যের হামলায় ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাফাইয়ের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে খোদ ব্রিটিশ সরকারও এর নিন্দা জানিয়েছে।

মোন্টানায় রিপাবলিকান সমাবেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

গত বছরের ২৪ মে মোন্টানায় বিশেষ কংগ্রেস সদস্য নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী জিয়ানফোর্টকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি নিয়ে প্রশ্ন করেন ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের রাজনৈতিক প্রতিবেদক বেন জ্যাকোবস। তবে প্রশ্ন শুনেই ক্ষেপে যান জিয়ানফোর্ট। তিনি দুই হাত দিয়ে জ্যাকোবসের গলা চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দেন। তারপর তাকে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে থাকেন। পরে তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সে করে জ্যাকোবসকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি কনুইয়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন। তবে ওই ঘটনার পরও নির্বাচনে জেতেন গ্রেগ জিয়ানফোর্ট। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মোন্টানায় এক সমাবেশে ট্রাম্প ওই ঘটনায় জিয়ানফোর্টের প্রশংসা করে তাকে  ‘নিজের লোক’ বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প।

এ ঘটনায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দার মিছিলে যোগ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র একজন মুখপাত্রকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যেকোনও সহিংসতা ও হুমকিই অগ্রহণযোগ্য।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সাংবাদিকরা ওই কংগ্রেস সদস্যের সমালোচনা শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক  বেনিয়ামিন আপেলবাউম নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘জিয়ানফোর্ট একজন অপরাধী। তিনি ওই হামলায় দোষ স্বীকার করেছেন। একটি অপরাধ করায় অপরাধীকেই অভিনন্দন জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট।’

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক শেরিল গে স্টোলবার্গ ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘আমেরিকার মাটিতে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনায় প্রথম কোনও প্রেসিডেন্টের এমন খোলাখুলি ও সরাসরি প্রশংসা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।  

শুক্রবার বিকালে আরিজোনায় আরেকটি সমাবেশে যোগ দেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের সঙ্গে ভ্রমণরত সিএনএন’র একজন সাংবাদিক টুইটারে জানিয়েছেন, আগের দিনের বক্তব্যের জন্য তিনি দুঃখিত কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘না, না, না! আমি কোনওভাবেই দুঃখিত নই।’ ট্রাম্প ওই সমাবেশকে ‘ব্যাপক সফল’ হিসেবে বিবেচনার পাশাপাশি জিয়ানফোর্টকে ‘অসাধারণ ব্যক্তি’ হিসেবেও অভিহিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের লেখকদের সংগঠন পেন আমেরিকা সম্প্রতি সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন করার অভিযোগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধেকরে মামলা করেছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হুমকি দেওয়ার জন্য ট্রাম্প ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ তাদের। সংগঠনটি গার্ডিয়ান সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রশংসা করায়ও ট্রাম্পের নিন্দা জানিয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে পেন আমেরিকা বলেছে, জিয়ানফোর্টের হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের উচ্ছসিত প্রশংসা সংবাদমাধ্যমের প্রতি হোয়াইট হাউসের প্রকাশ্য শত্রুতার চমকপ্রদ নতুন মাত্রা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই প্রেসিডেন্টের আমলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে মার্কিন বৈশ্বিক নেতৃত্ব যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ট্রাম্পের মন্তব্য তারই একটি হতাশাজনক প্রমাণ।  

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গাডির্য়ানের এডিটর ইন চিফ কাথারিন ভিনার শুক্রবার বলেন, ‘যখন বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকরা হয়রানি, গ্রেফতার, এমনকি হত্যার শিকার হচ্ছেন, তখন এগুলো খুবই দায়িত্ব-জ্ঞানহীন মন্তব্য। এটা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মুখে আঘাত আর এটা বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসক ও একনায়কদের কাছে মারাত্মক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।’ ভিনার আরও বলেন, ‘বিশ্ব সংবাদমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে একটি পরিষ্কার বিবৃতি আশা করে যে, বিশ্বের সবখানে সহিংসতা ও নিপীড়নের ভয় থেকে মুক্ত থেকে নিজেদের কাজ করার বিষয়ে সাংবাদিকদের অধিকারের ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিশীল রয়েছে।’

ট্রাম্পের বৃহস্পতিবারের সমাবেশে উপস্থিত থাকা সিএনএন’র প্রতিবেদক জিম আকোস্টা বলেন, ‘জিয়ানফোর্ট সম্পর্কে ট্রাম্পের বিরক্তিকর কৌতুক উপস্থিত মানুষের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আমি ভিড়ের মধ্যে একজন যুবককে হামলার ইঙ্গিত করতে দেখেছি। সে আমার দিকে তাকিয়ে নিজের আঙ্গুল দিয়ে গলা কাটা কেটে ফেলার ইঙ্গিত করে। (সাধারণত কাউকে হত্যার হুমকি দেওয়ার জন্য এমন ইঙ্গিত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।) সমাবেশ শেষ হওয়ার পর আমি তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। তখন সে হাসি থামাতে পারছিল না।’

ওয়াশিংটন পোস্টের নির্বাহী সম্পাদক মার্টি ব্যারন দ্য গার্ডিয়ানের মার্কিন এডিটর জন মুলহোল্যান্ডের একটি বিবৃতির কথা তুলে ধরেছেন। ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ওই রাতেই দেওয়া বিবৃতিতে মুলহোল্যান্ড বলেন, প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্য এখানে ও বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের ওপর আরও হামলাকে আমন্ত্রণ জানানো ছাড়া কিছুই নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি ভদ্র মানুষেরা এই মন্তব্যের নিন্দা জানাবে আর প্রেসিডেন্টও এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠবেন।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/আরএ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
ন্যাটোর অংশীদার হতে আগ্রহী আর্জেন্টিনা
কানাডার ইতিহাসে বৃহত্তম স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ৬
সর্বশেষ খবর
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ