X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খাশোগি হত্যার নতুন ব্যাখ্যা হাজির করলেন সৌদি কর্মকর্তা

বিদেশ ডেস্ক
২১ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৩৮আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৮, ২০:০৩
image

অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি বয়ান যখন প্রায় সারা বিশ্বের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, ঠিক সেই সময়ে সে দেশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা এ নিয়ে নতুন ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে খাশোগি নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে সরকারের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, চেতনানাশক ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে খাশোগিকে অপহরণের পরিকল্পনা ছিল সৌদি গোয়েন্দাদের। তবে চিৎকার থামাতে তারা খাশোগির মুখ চেপে ধরলে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়। ওই কর্মকর্তার দাবি অনুযায়ী, কোনও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নয়, এক স্থায়ী আদেশ অনুসরণ করেই খাশোগিকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন গোয়েন্দারা। তবে সীমা লঙ্ঘন করে তারা আকস্মিকভাবে খাশোগিকে হত্যা করে। ওই কর্মকর্তা এমন সময়ে এই নতুন ব্যাখ্যা হাজির করলেন, যখন সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার সম্ভাব্য নির্দেশদাতা যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ জোরালো হয়েছে।

রক্তমাখা হাতের প্রতীকী সৌদি যুবরাজ সাজিয়ে বিক্ষোভ
২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি। শুরুতে সৌদি আরব দাবি করেছিল তিনি ভবন থেকে জীবিত বের হয়ে গেছেন। তুরস্ক দাবি করে, ১৫ সদস্যের একটি গোয়েন্দা স্কোয়াড কনস্যুলেটের ভেতরেই খাশোগিকে হত্যা করেছে। সৌদি আরব এই অভিযোগ অস্বীকার করে এলেও শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) মধ্যরাতে প্রথমবারের মতো তারা খাশোগি নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে। তবে সৌদি আরবের দাবি, খাশোগিকে হত্যার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। খাশোগি কনস্যুলেটে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং ধস্তাধস্তির সময় তার মৃত্যু হয়।

শুক্রবার সৌদি আরবের পক্ষ থেকে সরকারি বয়ান হাজিরের পরপরই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সে দেশের এক কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন, শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়েছে। এবার সৌদি সরকারের আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও একই ধরনের দাবি করলেন। ওই সৌদি কর্মকর্তা জানান, ইস্তানবুলের বাইরে একটি নিরাপদ বাড়িতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খাশোগিকে আটকে রাখার পরিকল্পনা ছিল। সিদ্ধান্ত ছিল, এরপরও যদি তিনি সৌদি আরবে ফিরতে অস্বীকৃতি জানান তবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে ঘটনার দিন শুরু থেকেই সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। ১৫ সদস্যের ওই গোয়েন্দা স্কোয়াড সীমা অতিক্রম করে ফেলে এবং পরিস্থিতি সহিংস হয়ে পড়ে।

ওই জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তার দাবি, সৌদি আরবের শত্রুরা যেন দেশের ভিন্নমতাবলম্বীদের নিয়োগ না দিতে পারে তা নিশ্চিত করতেই খাশোগিকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল সৌদি আরবের। এ সংক্রান্ত এক স্থায়ী আদেশও জারি করা ছিল। গোয়েন্দা কর্মকর্তা আহমেদ আল আসিরিসহ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি দল ইস্তানবুলে গিয়ে সেই আদেশই বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। কনস্যুলেটে তাদের সঙ্গে খাশোগির দেখা হয় এবং তাকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।

সৌদি কর্মকর্তার দাবি, মাহের মুতরেব নামের একজন সৌদি কর্মকর্তা ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে খাশোগির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। সরকার তাকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নিতে চায় বলে খাশোগিকে জানান তিনি। খাশোগি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। জানান, বাইরে তার জন্য কেউ একজন অপেক্ষা করছেন। আমি যদি এক ঘণ্টার মধ্যে ফিরে না যাই, তাহলে তিনি তুর্কি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

যার সঙ্গে খাশোগির বিয়ের কথা ছিল, সেই হাতিস চেঙ্গিসও রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কনস্যুলেটে প্রবেশের আগে তার (হাতিস) হাতে নিজের দুটি মোবাইল ফোন তুলে দেন ওই অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তাকে বলেন, যদি এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি (খাশোগি) না ফেরেন তাহলে হাতিস যেন তুর্কি প্রেসিডেন্টের দফতরে যোগাযোগ করেন।

জামাল খাশোগি
ওই সৌদি কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, কনস্যুলেটে বাদানুবাদ চলার সময় খোশেগি সৌদি কর্মকর্তা মুতরেবকে বলেন, তার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তা কূটনীতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। ‘আমার সঙ্গে তোমাদের সমস্যাটা কী? তোমরা কি আমাকে অপহরণ করতে চাইছ’? প্রশ্ন করেন খাশোগি। মুরতেব জবাবে বলেন, ‘হুম, আমরা তোমাকে অজ্ঞান করে অপহরণ করব।’ এ কথা শুনেই চিৎকার করে ওঠেন খাশোগি। এতে ভীত হয়ে পড়ে মুরতেবসহ অন্যরা। খাশোগির মুখ চেপে ধরেন তারা। শ্বাসরুদ্ধ করা হয় তাকে। একপর্যায়ে তার মৃত্যু হয়।

ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘তার (খাশোগি) চিৎকার ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু তিনি মারা গেলেন। তাকে হত্যা করাটা উদ্দেশ্য ছিল না।’ খাশোগিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হলো কিনা তা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘জামালের বয়সী কাউকে এ অবস্থায় নেওয়া হলে তার মৃত্যুই হওয়ার কথা।’

শুরুতে সৌদি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, কনস্যুলেটের ভেতর খাশোগিকে হত্যা করার অভিযোগটি মিথ্যা, প্রবেশের কিছুক্ষণ পরই কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে গেছেন তিনি। চাপের মুখে হত্যাকাণ্ডে দূতাবাসের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে রিয়াদ। এই অবস্থান বদলের ব্যাপারে রয়টার্সের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই সময় অভ্যন্তরীণভাবে পাওয়া ভুয়া তথ্য’কে ভিত্তি করে সরকার প্রাথমিক ভাষ্য দিয়েছিল। তার দাবি, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যগুলো মিথ্যা বলে স্পষ্ট হওয়ার পর পরই সৌদি সরকার অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছিল এবং সে পর্যন্ত আর কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া থেকে বিরত ছিল।’

তুর্কি সূত্র বলে আসছে, কনস্যুলেটের ভেতরেই যে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে তার পক্ষে কর্তৃপক্ষের হাতে উপযুক্ত প্রমাণ রয়েছে। তবে তুর্কি কর্তৃপক্ষ এখনও সে প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। তুর্কি কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, খাশোগির মৃতদেহ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। তবে ওই সৌদি কর্মকর্তার দাবি, তার মৃতদেহ একটি কম্বলে পেঁচিয়ে তা সৎকারের জন্য ‘স্থানীয় এক সহযোগীকে’ দেওয়া হয়েছে। খাশোগিকে নির্যাতন ও শিরশ্ছেদ করা হয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হলে ওই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের প্রাথমিক ফলাফলে তেমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

ওই সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে স্কোয়াডের সদস্যরা খাশোগির মরদেহ কম্বলে পেঁচিয়ে নেয়। তারপর তা কনস্যুলেটের একটি গাড়িতে করে বাইরে নেওয়া হয় এবং ‘স্থানীয় সহযোগী’র কাছে সৎকারের জন্য তা হস্তান্তর করা হয়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ সালাহ তুবাইগি এ ঘটনার কোনও আলামত না রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তুর্কি কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছিলেন, খাশোগির হত্যাকারীরা ইস্তানবুল সংলগ্ন বেলগ্রাড জঙ্গলে কিংবা ইয়ালোভা শহরের আশপাশের কোনও গ্রাম্য এলাকায় পুঁতে রাখতে পারে।

/এফইউ/বিএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা