প্রায় দুই বছর আগে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সোনিপাতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তার অধস্তন এক নারী সহকর্মী। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় মি টু আন্দোলন শুরুর পর প্রকাশ্য বিবৃতি দেন ওই নারী। তারপর তিনটি কমিটির তদন্তেও শিক্ষক মিতুল বড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত। তারপরও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অশোকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের এই সহকারী অধ্যাপক এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে বহাল তবিয়তেই আছেন।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে মিতুল বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চান তার অধস্তন সহকর্মী। তাতে দীর্ঘদিনেও কোনও কাজ হয়নি। তবে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা #মি টু আন্দোনে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ও মিডিয়া জগতের জ্যেষ্ঠ কর্তা ব্যক্তিদেরও জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে। অথচ আগে এমন মানুষকে ধরা-ছোয়ার বাইরে বলে মনে করা হতো। এই আন্দোলন ওই নারীকে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস যোগায়। তারপর তিনি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরও অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষ্ক্রিয়তা আমাকে আতঙ্কিত করেছে। এটা আমার কাজের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিতুল বড়ুয়ার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা তাকে সেখানে শিক্ষাকতা করতে দিচ্ছে। আমি এই বিবৃতি দিচ্ছি শুধুমাত্র মি টু আন্দোলন আমাকে আমার দুই প্রায় দুই বছরের সংগ্রামের বিষয়টি সবার সামনে আনার সাহস যুগিয়েছে।’
প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়ার পর জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি বিরোধী লৈঙ্গিক সংবেদশীলতা কমিটি, অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি নিরোধ কমিটি ও আরেকটি অভ্যন্তরীণ কমিটি অভিযোগটি তদন্ত শুরু করে। নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ পায়। তারা মিতুলের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করে। আর অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি একে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ হিসেবে চিহ্নিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-শৃঙ্খলা কমিটি প্রাথমিকভাবে বড়ুয়ার বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে অসদাচরণের অভিযোগ এনেছে।
তদন্তের পর ঘটনাটি আলোর মুখ দেখবে বলে আশা করা হলেও গত ৭ জুলাই অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, ‘ অশোকা বিশ্ববিদ্যালয় এই মামলাটি যথাযথ নিয়মে ও ন্যায্যতার সঙ্গে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করেছে।’ তবে এতে মিতুল বড়ুয়ার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা আর কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রতাম ভানু মেহতার পাঠানো এক ই-মেইলে বলা হয়, মিতুল বড়ুয়া ‘যৌন হয়রানির মামলায় দোষী প্রমাণিত হননি’। তবে তিনি অন্য কোনও অপরাধে দোষী হয়েছেন কিনা তাও সেখানে উল্লেখ করা হয়নি।
এতকিছুর পরও অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেক শিক্ষার্থী মিতুল বড়ুয়ার কাছে নিজেদের অনিরাপদ দাবি করে তার ক্লাস বর্জন করেছেন। এছাড়া এমন ঘটনার পরও মিতুল বড়ুয়ার শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরাও।