যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের পিটসবার্গের ইহুদি উপাসনালয়ে হামলায় ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে মৃত্যুদণ্ডের কথাও বলেছেন তিনি। শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিজের এমন অবস্থানের কথা জানান ট্রাম্প।
ইহুদি উপাসনালয়গুলোর সুরক্ষার ওপরও জোর দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, সিনাগগে হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। অথচ বিদ্যমান অস্ত্র আইনে এ নিয়ে খুব সামান্যই করণীয় রয়েছে। কিন্তু উপাসনালয়ের ভেতরেই সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকলে শুক্রবারের ঘটনা ভিন্ন রকম কিছু হতে পারতো।
ট্রাম্প বলেন, দুর্বৃত্তরা দেখিয়ে দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র আইন আরও কঠিন করা প্রয়োজন যেখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকবে। এমন অপরাধের জন্য লোকজন মৃত্যুদণ্ড পাবে।
এদিকে পিটসবার্গের ইহুদি উপাসনালয়ে হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন এক হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, রবার্ট বাউয়ার্স নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২৯টি অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইহুদি উপাসনালয়ে চালানো এ হামলাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। আদালতে সরকারের পক্ষ থেকে বাউয়ার্সের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। হামলায় ১১ জন নিহত আর ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ১০টায় স্কুইরেল হিলসংলগ্ন ‘ট্রি অব লাইফ’ সিনাগগে হামলা চালানো হয়। বিশেষ অনুষ্ঠান চলাকালে সিনাগগে প্রার্থনারত ইহুদিদের ওপর চালানো এই হামলায় এ পর্যন্ত ১১ জন নিহত হয়েছেন। চার পুলিশ সদস্যসহ গুরুতর আহত হয়েছেন ছয়জন। স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় জরুরি উদ্ধারকারী দল সেখানে পৌঁছায়। তৎক্ষণাত সেখানে অবস্থান নেয় সোয়াট ও অ্যাম্বুলেন্স। পেনিসেলভিনিয়া গভর্নর টম ওলফ এক বিবৃতিতে বলেন, এমন ঘটনাকে কোনোভাবে স্বাভাবিকভাবে নেওয়া যায় না।
পুলিশ হামলাকারী সন্দেহে একজনকে গ্রেফতার করেছে। কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সন্দেহভাজন হামলাকারী রবার্ট বাউয়ার্সের বয়স ৪৬। হামলার সময় তিনি ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। আগে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়ার তার বিভিন্ন পোস্টে ইহুদিদের লক্ষবস্তু বানিয়েছেন তিনি। সিএনএন জানিয়েছে, ১১ জনকে হত্যার ওই ঘটনায় ২৯ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।এ সময় পুলিশের সঙ্গেও সন্দেহভাজন হামলাকারী রবার্ট বাউয়ার্সের (৪৬) গুলিবিনিময় হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, হামলাকারী শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি ছিলেন। তার মুখে দাঁড়ি ছিলো। হাতে ছিল দুটি পিস্তল ও একটি রাইফেল। হামলাকারীকে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিটসবার্গে জননিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক ওয়েন্ডেল হিসরিচ বলেন, ‘এটা খুবই ভয়াবহ দৃশ্য ছিলো। আমার দেখা জঘন্যতম একটি। আমি বিমান দুর্ঘটনা নিয়েও কাজ করেছি। কিন্তু এটার খুবই ভয়াবহ ছিলো।’ হিসরিচ জানান, ঘটনাটিকে ‘বিদ্বেষমূলক অপরাধ’ হিসেবে তদন্ত করা হবে।
পেনসিলভানিয়া পশ্চিমাঞ্চলে নিযুক্ত অ্যাটর্নি স্কট ব্রাডি বলেছেন, ‘রবার্ট বাউয়ার্সের কর্মকাণ্ডকে মানবতার ইতিহাসে নিকৃষ্টতম অপরাধ গণ্য করা হবে। ঘটনার তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতে আমার সব ধরনের পন্থা ব্যবহার করব।’ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ স্যাসন্স এর আগে বলেন, ‘ফেডারেল আইনজীবীরা মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করতে পারেন।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।