X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভয়াবহ হুমকিতে বনভূমির ভবিষ্যৎ, আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের তাগিদ

বিদেশ ডেস্ক
০১ নভেম্বর ২০১৮, ২০:০০আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৩৯
image

দুই বছর আগের এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছিল, অ্যান্টার্কটিকার বাইরে থাকা মোট স্থলভূমির ৭৭ ভাগই কোনও না কোনভাবে মানুষের হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে। সামুদ্রিক অঞ্চলের মধ্যে মানুষের হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে ৮৭ ভাগ অঞ্চল। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখনও মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা অঞ্চলের মধ্যে ৭০ ভাগের অবস্থান মাত্র পাঁচটি দেশে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, সেখানকার স্থলজ ও জলজ বনাঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে কয়েক দশকের মধ্যে এইসব অঞ্চল জীববৈচিত্র্য ধরে রাখার সক্ষমতা হারাবে। বাস্তুসংস্থান প্রক্রিয়ায় যার প্রভাব হবে ভয়াবহ। মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সক্ষমতা। বুধবার (৩১ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা জানানো হয়। ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে দ্রুততর সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিসরে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

ব্রাজিলের একটি নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে আসছেন এক নারী
বনভূমিগুলোই পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের আধার। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা একে পৃথিবীর ফুসফুস বিবেচনা করেন। তবে প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজে বনাঞ্চলগুলোকে উজাড় করা হচ্ছে, সেখানে স্থাপিত হচ্ছে মানব বসতি। বুধবার প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ বিষয়ক স্বনামধন্য সাময়িকী নেচার-এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যে বনভূমি বিলীন হয়ে যেতে পারে। গবেষক জেমস আর. অ্যালান বলেন, ‘বন্য এলাকাগুলোতে পৃথিবীর জন্য প্রচুর জীবন উপযোগী ব্যবস্থা বিরাজমান রয়েছে। আমরা সেসব সুবিধা ও বাস্তুব্যবস্থা হারাবো। আর এ ক্ষতি পূরণ করাটা আমাদের জন্য দুঃসাধ্য হবে।’

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ ইয়র্কের ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির একদল বিজ্ঞানীর উদ্যোগে ওই গবেষণাকর্ম সম্পাদিত হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা মোট স্থলজ ও জলজ অঞ্চলের ৭০ ভাগই অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া ও কানাডা- এ পাঁচ দেশে অবস্থিত। জাতিরাষ্ট্রের সীমানার বাইরে থাকা সাগর এলাকা ও অ্যান্টার্কটিকা-সংলগ্ন বনভূমিকে বাদ দিয়েই এই পরিসংখ্যান প্রণীত হয়েছে। গবেষক জেমস ওয়াটসন বলেন, ‘দুই বছর আগে আমরা বনভূমি নিয়ে প্রথমবারের গবেষণা করেছিলাম। আর এবার নতুন গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা একটি বৈশ্বিক মানচিত্র তৈরি করেছি এবং একে জাতীরাষ্ট্রের সীমানা অনুযায়ী বিভক্ত করেছি যেন এ প্রশ্নটি করা যায়: কারা দায়ী?’’

২০১৬ সালে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের স্থলভাগের বনাঞ্চলগুলোর মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। এবার মানচিত্রের আওতায় এসেছে মহাসাগরগুলোতে মনুষ্য তৎপরতার বাইরে থাকা এলাকাগুলো। নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাসাগরগুলোতে আগের চেয়ে অনেক বেশি করে মানুষের হস্তক্ষেপের প্রভাব পড়ছে। তেল অনুসন্ধান, পণ্য পরিবহনে জাহাজ চলাচল ও বাণিজ্যিকভাবে মাছ সংগ্রহের প্রভাব পড়েছে ওইসব অঞ্চলে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ‘৮৭ ভাগ সমুদ্র অঞ্চল সরাসরি মানুষের হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে।’

অ্যামাজন অঞ্চল
কার্বন মচ্ছবে অভিশপ্ত এই পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মনুষ্যপ্রভাবমুক্ত ওইসব অঞ্চল। বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা এগুলোর। গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা জানানো হয়েছে, এক্ষুণি যদি ওইসব অঞ্চলের সুরক্ষার পদক্ষেপ না নেওয়া হয়,  সেক্ষেত্রে এগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সক্ষমতা হারাবে। সমুদ্রের তলদেশে থাকা তৃণভূমির মতো করে ওই এলাকাগুলোও যদি মানুষের হস্তক্ষেপের শিকার হয়, তাহলে সেগুলো কার্বন শোষণের বদলে হয়ে উঠতে পারে কার্বনের উৎস।

গবেষকরা বলছেন, কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক নীতিগত রূপরেখা প্রণয়নের মাধ্যমেই মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা অঞ্চলগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। গবেষক জেমস ওয়াটসন বলেন, যে পাঁচ দেশে পৃথিবীর বেশিরভাগ বনাঞ্চল এখন পর্যন্ত সুরক্ষিত আছে, সেসব দেশকেই এখন বন সুরক্ষায় নেতৃত্ব দিতে হবে। আইন পাস করে কিংবা প্রকৃতি বিনাশ করে না এমন কাজের জন্য প্রণোদনা দিয়ে এসব দেশ বনাঞ্চল রক্ষা করতে পারে।

এ নভেম্বরে মিসরে আয়োজিত জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি- সম্মেলনের আগে আগে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো। ২০২০ সালের পর জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষার কাজে পরিকল্পনা তৈরি করতে দেশগুলো কাজ করছে। এখন পর্যন্ত মানুষের হস্তক্ষেপের বাইরে থাকা বনাঞ্চলগুলোকে রক্ষায় উদ্যোগ নিতে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকরা। গবেষক অ্যালান বলেন, ‘আর কিছু হারানোর সুযোগ নেই আমাদের। যা আছে, তার সবটাই আমাদের রক্ষা করতে হবে।’ 

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ