বিশ্বজুড়ে নারীদের সন্তান নেওয়ার হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্তত অর্ধেক দেশে নারীদের প্রজনন হার এতোই কমে গেছে যে ওই দেশগুলোর জনসংখ্যা ঠিক রাখার তুলনায় কম। এর ফলে সমাজে নাতি-নাতনির চেয়ে দাদা-দাদির সংখ্যা হবে বেশি। এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।
এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ল্যান্সেটে। এতে ১৯৫০-২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রবণতা পর্যালোচনা করা হয়েছে। ১৯৫০ সালে নারীদের সারা জীবনে সন্তান নেওয়ার হার ছিল গড়ে ৪.৭। কিন্তু গত বছর এই হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত বছর নারীদের সন্তান জন্ম দেওয়ার গড় ছিল ২.৪।
তবে দেশভেদে এই হারের পার্থক্য অনেক বেশি। নাইজারের প্রজনন হার ৭.১ কিন্তু সাইপ্রাসে নারীরা গড়ে ১টি সন্তান নিচ্ছেন।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রজনন হার ২.১ এর নীচে নামার অর্থ হলো দেশটির জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। এই গবেষণার শুরুতে ১৯৫০ সালের দিকে ২.১ এর নীচে প্রজনন হার ছিল না কোনও দেশে।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড এভালুয়েশন-এর পরিচালক অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মুরে বলেন, বৃদ্ধ জনসংখ্যার স্থলে নতুন শিশু আগমনে যে প্রজনন হার দরকার বিশ্বের অর্ধেক দেশে তার চেয়ে কম রয়েছে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে তাহলে ওই দেশগুলোতে জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর। আমার মতো লোকের জন্যও এটা বিস্ময়কর।
ল্যান্সেট’র গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে প্রজনন হার কম। এর অর্থ অবশ্য এই নয় যে দেশটিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অন্তত এখন পর্যন্ত প্রজনন হার, মৃত্যু হার ও অভিবাসনের কারণে জনসংখ্যার পরিমাণ কমছে না।
প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের বাকি অর্ধেক দেশ অনেক বেশি সন্তানের জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু দেশগুলো যতই অর্থনীতিতে উন্নত হচ্ছে প্রজনন হার কমছে।
যে কারণে কমছে প্রজনন হার?
প্রজনন হার কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে স্পার্ম সংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। প্রজনন হার কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, শিশু মৃত্যু হার কমে যাওয়াতে নারীরা কম সন্তান নিচ্ছেন, দ্বিতীয়ত গর্ভনিরোধের সুযোগ বেড়ে যাওয়া এবং তৃতীয়ত, নারীদের শিক্ষা ও কাজে জড়িয়ে পড়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেকক্ষেত্রেই প্রজনন হার কমে যাওয়াকে সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।