কফিনকে ফ্যাশনদুরস্ত করতে ঘানাবাসীদের আগ্রহের কমতি নেই। শুধু রঙের ছড়াছড়ি নয়, আকারের ভিন্নতাও তাদের প্রত্যাশা। কোনও কফিন বিমানের আকৃতির, কোনওটা গাড়ির। মরিচ আকৃতির কিফিনের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। মৃত ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ, ব্যক্তিত্বের ধরন অনুযায়ী বেছে নেওয়া হয় কফিন। বিবিসি জানিয়েছে, কারও কারও জন্য ব্যবহৃত হয় লাল মরিচ আকৃতির কফিন। লাল রঙ হওয়ায় তা প্রকাশ করে, মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকাকালে কাউকে পরোয়া করে চলতেন না!
কোকোয়া উৎপাদনকারী ঘানার গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের দৈনিক আয় তিন ডলারের চেয়ে কম হলেও তারা কফিনের জন্য সারা জীবন অর্থ জমিয়ে যান। এদের কারও কারও কফিন হয় শেষ পর্যন্ত এক হাজার ডলার পর্যন্তও হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে স্বজনরা কফিন কেনেন। তাতে আত্মীয়রাও কিছু অর্থ সহায়তা দেন। ঘানার এরকম একটি কফিন তৈরির দোকানের নাম শেথ কেন কিউ। অনেকে ধারণা এটাই ঘানাতে ফ্যাশনদুরস্ত কফিন বানানোর প্রথম দোকান।
এর ম্যানেজার মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে ঘানা সমাজের রীতির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘মৃত ব্যক্তির স্বজনরা কফিন কেনেন। তাদেরকে সৎকার অনুষ্ঠানের অন্যান্য খাতের জন্যও খরচ করতে হয়। সৎকারের অনুষ্ঠান সাধারণত চলে বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত। যদি বৃহস্পতিবারে শুরু হয় তাহলে ওই দিন কফিন কেনা হয়। শুক্রবারে মর্গ থেকে আনা হয় মৃত ব্যক্তির দেহ। শনিবার কবর দেওয়া হয়। রবিবার সবাই প্রার্থনার জন্য গির্জায় যান। আর সোমবার পরিবারের স্বজনরা একসঙ্গে বসে কত অর্থ খরচ হয়েছে আর কত অনুদান পাওয়া গেছে আত্মীয়দের কাছ থেকে তার হিসেব করেন।’
সাধারণত কফিন ডিজাইনের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির পেশাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এমন ক্ষেত্রে মরিচের বিষয়টিকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এরিক আজেতি। ফ্যাশনদুরস্ত কফিনের ব্যবসায় তিনি রয়েছেন প্রায় ৫০ বছর। আজেতির ভাষ্য, লাল মরিচের মতো দেখতে কফিন শুধু কৃষকের পেশাকে ইঙ্গিত করে না বরং একই সঙ্গে তার ব্যক্তিত্বকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
মার্সিডিজ বেঞ্জের আকৃতির কফিন ঘানাবসীর কাছে খুবই প্রিয়। এমন কফিন তাদের জন্য তৈরি করা হয় যারা জীবিত অবস্থায় মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির মালিক ছিলেন। এমন কফিন মৃত ব্যক্তির উচ্চ সামাজিক মর্যাদাকেই সামনে তুলে ধরে। জনপ্রিয় মডেলগুলোর একটি হচ্ছে বিমানের মতো করে বানানো কফিন। এমন কফিন সাধারণত শিশুদের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিমান-কফিনের তাৎপর্য হচ্ছে, একে শিশুদের সফলভাবে মৃত্যুর পরের জীবনে পৌঁছে যাওয়ার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
কফিন বানানোর দোকানে বিবিসির সাংবাদিকরা দেখেছেন, সেখানে একজন রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ীর জন্য কফিন বানানো হয়েছে, যা দেখতে বাড়ির মতো! সেখানে একটি মাইক্রোফোনের আকৃতির কফিনও দেখা গেছে। সেটিতে একজন সঙ্গীত শিল্পিকে সমাহিত করা হবে। কফিন বানানোর সময় মৃত ব্যক্তির দেহের উচ্চতা সম্পর্কে কারিগররা স্বজনদের কাছ থেকে তথ্য নেন বা ছবি দেখে বুঝে নেন।
ঘানাতে তৈরি ফ্যাশনদুরস্ত এসব কফিন যে শুধু ঘানাতেই বিক্রি হয় তা নয়। অন্তত ২০টি দেশের ক্রেতারা এমন কফিন কিনেছেন ঘানা থেকে। ঘানার কফিন বানানোর এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ডেনমার্কের মতো দেশের নবীন কাঠমিস্ত্রিদের মধ্যে। এসব দেশ থেকে অনেকে ঘানাতে গেছেন বিষয়টি রপ্ত করার জন্য।