X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরব প্রশ্নে ট্রাম্পের নীতিহীনতায় লাভবান হবে উপসাগরীয় অঞ্চল

বিদেশ ডেস্ক
২৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:২৮আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:১৪

সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড বিষয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে একতরফাভাবে অনৈতিক সহযোগিতা ও সমর্থন দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে বৈশ্বিক নৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনেকটাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সুনামের এই সাময়িক ক্ষতিতে উপসাগরীয় অঞ্চল লাভবান হতে পারে। ট্রাম্প সঠিক পদক্ষেপ নিলে আগামী বছরই উপসাগরীয় অঞ্চল আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। তাতে পরোক্ষভাবে লাভবান হবে যুক্তরাষ্ট্রই। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এমন আভাসই দিয়েছে।

সৌদি আরব প্রশ্নে ট্রাম্পের নীতিহীনতায় লাভবান হবে উপসাগরীয় অঞ্চল

খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ভালোভাবে জেনে থাকতে পারেন বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের ‘অবিচল সহযোগী’ থাকবে বলেও এক বিবৃতিতে জানান তিনি।বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড ঘিরে থাকা সব সত্য আমরা হয়তো কখনওই জানতে পারবো না। যা কিছুই ঘটুক আমাদের সম্পর্ক সৌদি আরবের সঙ্গে’। এর মাধ্যমে খাশোগি হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এছাড়াও সৌদি আরবের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে মার্কিন আইন প্রণেতাদের চাপও উপেক্ষা করছেন ট্রাম্প। তিনি ইঙ্গিত দেন, দেশটির সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ইচ্ছাই তার নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বোকার মতো এসব চুক্তি বাতিল করি তাহলে রাশিয়া ও চীন বিপুল লাভবান হতে পারে’।

দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত ২ সেপ্টেম্বর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন খাশোগি। ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক খাশোগি সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন। প্রথমে খাশোগিকে হত্যার কথা অস্বীকার করে আসলেও তুরস্কের কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে সৌদি আরবের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে খাশোগিকে হত্যার বিভিন্ন প্রমাণ হাজির করতে থাকে। একপর্যায়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ হত্যার কথা স্বীকার করলেও বিভিন্ন পর্যায়ে স্ববিরোধী ব্যাখ্যা হাজির করতে থাকে। সৌদি আরবের ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, খাশোগির দেহ টুকরো টুকরো করে কনস্যুলেট থেকে সরিয়ে ফেলার ওই অভিযানের বিষয়ে সৌদি যুবরাজ কিছুই জানতেন না। একই সঙ্গে ট্রাম্পের সমর্থনে এ ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে সৌদি আরব ও সৌদি যুবরাজ।

খাশোগি হত্যাকাণ্ডে ট্রাম্প সৌদি যুবরাজকে বাঁচিয়ে দিলেও ৩৩ বছর বয়সী রাজপুত্র ঠিকই বুঝতে পেরেছেন যে, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ছিল। এ কারণেই তিনি এখন শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্টেরই অনুগত থাকবেন। আর এই সুযোগে ট্রাম্প বিন সালমানের করা অনেকগুলো ভুল শুধরে দেওয়ার সুযোগ পাবেন। আর ট্রাম্প এসব পদক্ষেপ নিলে উপসাগরীয় অঞ্চলটি লাভবান হবে। যা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেও লাভবান করবে।

ট্রাম্প শুরুতেই কাতারের ওপর সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসরের জারি করা অবরোধ তুলে নিতে সৌদি যুবরাজকে চাপ দিতে পারেন। কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। সেখানকার অবরোধ তুলে নেওয়া হলে দেশটি ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। অঞ্চলটির উত্তেজনা কমলে বিনিয়োগকারীরাও সেখানে স্বস্তিতে থাকবে। যা যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পের জন্য লাভজনক।

পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন ট্রাম্প। ওই যুদ্ধের কারণে ক্ষুধা ও অসুস্থ হয়ে প্রায় ৮৫ হাজার শিশু মারা গেছে বলে জানিয়েছে সেভ দ্য চিনড্রেন। ইয়েমেনে যুদ্ধ চালাতে সৌদি আরবকেও বছরে প্রায় ৫০০০ কোটি ডলার খরচ করতে হচ্ছে। তথাকথিত তেল অস্ত্র মোতায়েন না করে ওই অর্থ দিয়ে সৌদি আরব আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রকল্পগুলোর ঘাটতি মেটাতে কাজে লাগাতে পারে। এতে সৌদি আরব অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হতে পারবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি বাস্তবায়নে সৌদি আরব আরও বেশি সহায়তা করতে পারবে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার হিসাব মতে, বৈশ্বিক তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো প্রতিদিন ১৫ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে পারবে। এই পরিমাণ তেলে ২০১৯ সালের বৈশ্বিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। স্বাভাবিকভাবেই ওপেক এখন তেল উৎপাদন কমাতে চাইছে যাতে তেলের দাম ব্যালের প্রতি ৮০ ডলারের ওপরে থাকে। তবে উৎপাদন কমালে সৌদি আরবে বাজেট সংকট দেখা দেবে। তাই যুদ্ধে অর্থ খরচ বন্ধ করা গেলে ওই অর্থ দিয়ে সৌদি আরব ওপেকের প্রস্তাব ঠেকাতে পারবে। তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তাই সৌদি আরবের মাধ্যমে তা ঠেকানো গেলে যুক্তরাষ্ট্রই লাভবান হবে।

কানাডার সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধ ও দেশের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটনাগুলো পুনর্বিবেচনা করতে সৌদি আরবের ওপর চাপ দিতে পারেন ট্রাম্প। তবে এককভাবে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে চলা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে এসব বিষয় তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই কানাডা ও মানবাধিকার ইস্যুতে তিনি কিছু বলতে যাবেন তা আশা করা কঠিন। তবে কাতার ও ইয়েমেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি লাভের সুযোগ রয়েছে। তাই এসব পদক্ষেপ না নেওয়ার মতো ভুল করলে ট্রাম্প বোকামির পরিচয় দেবেন।

/আরএ/
সম্পর্কিত
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া