ফ্রান্সের চলমান বিক্ষোভ দেশটির অর্থনীতির জন্য বিপর্যয়কর বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী বুনো লি মেয়ার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় ঐক্য পুনঃস্থাপনে’র অঙ্গীকার করেছেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এদুয়া ফিলিপ। বিদ্যমান পরিস্থিতিকে সমাজ ও গণতন্ত্রের জন্য ‘সংকট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অর্থমন্ত্রী বুনো লি মেয়রা। তার ভাষায়, ‘এটি বাণিজ্যর জন্য, অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে।’ প্যারিসে বিক্ষোভে ক্ষতিগ্রস্ত একটি দোকান পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন বুনো লি মেয়ার। রবিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
চার সপ্তাহের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। আশা করা হচ্ছে, ভাষণে তিনি সংকট উত্তরণের কর্মপন্থা নিয়ে কথা বলবেন।
জ্বালানির কর বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ জানাতে গত চার সপ্তাহ ধরে ফ্রান্সজুড়ে চলছে ‘ইয়েলো ভেস্টস’ আন্দোলন। দেশটির ইতিহাসে গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ক্রমাগত এ আন্দোলন আরও জোরালো হয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হতে থাকে। একইসঙ্গে সহিংস রূপ ধারণ করে তা। ১ ডিসেম্বর প্যারিসের রাস্তায় কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা হতে দেখা গেছে। সহিংসতায় প্রাণহানিও হয়। তুমুল বিক্ষোভের মুখে ফ্রান্স সরকার জ্বালানি কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি বাতিল করলেও বিক্ষোভকারীদের অসন্তোষ থেকেই গেছে এবং অন্য ইস্যুগুলো নিয়ে বিক্ষোভ চলছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বহীন ইয়েলো ভেস্টস বিক্ষোভকারীরা সরকারকে ন্যুনতম পেনশন, কর ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন, অবসরের বয়সসীমা কমানোসহ ৪০টিরও বেশি দাবি-দাওয়া ছুড়ে দিয়েছে।
শনিবার (৮ ডিসেম্বর) উগ্র ডানপন্থী ও বামপন্থী দুই পক্ষের আন্দোলনকারীরাই রাস্তায় নামার ঘোষণা দিলে ফ্রান্সজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে জোরদার করা হয়। এদিন আগের সপ্তাহের মতো অতোটা ভয়াবহ মাত্রায় না হলেও বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। এদিন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। প্রায় ১ হাজার মানুষকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তারপরও অব্যাহত রয়েছে বিক্ষোভ।
এ পরিস্থিতিতে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এদুয়া বলেছেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা ‘চালিয়ে যেতে হবে’। তিনি বলেন, ‘কোনও কর ব্যবস্থাই আমাদের জাতয়ি ঐক্যকে বিপন্ন করতে পারে না। আলোচনা, কাজ ও কাছাকাছি আসার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এখন সে জাতীয় ঐক্য পুনঃনির্মাণ করতে হবে।’
ইয়োলো ভেস্ট আন্দোলন শুরু হয় গত নভেম্বরে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে প্রশমিত করতে জ্বালানির কর বাড়ায় ফরাসি সরকার। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেছেন, এতে চাপ পড়েছে মূলত নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। এর প্রতিবাদে আন্দোলন সংগঠিত হয়। আইন অনুযায়ী, বেশি আলো প্রতিফলিত করে এমন এক ধরনের বিশেষ নিরাপত্তামূলক জ্যাকেট গাড়িতে রাখতে হয় ফরাসি চালকদের। এর রঙ সবুজাভ হলুদ। আন্দোলনকারীরা এই জ্যাকেট (ভেস্ট) পরে বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের নাম হয়ে যায় ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারী।
ফরাসি সরকারের অভিযোগ,আন্দোলনটি সংক্ষুব্ধ সাধারণ ফরাসিদের দ্বারা সংঘটিত হলেও, এখন সেটি চরম ডানপন্থী এবং নৈরাজ্যবাদীদের দখলে চলে গেছে। তারা সহিংসতা ও অস্থিরতা তৈরি করছে। আন্দোলনের মুখে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত বাতিল করলেও,‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীরা এখন নতুন নতুন দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। কর হার কমানো,বর্ধিত হারে নূন্যতম আয় নিশ্চিত করা,জ্বালানির মূল্য আরও কমানো, অবসরকালীন সুবিধা বাড়ানো এবং ফরাসি প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের মতো দাবি এখন যুক্ত হয়েছে তাদের তালিকায়।