জাতিসংঘে নিযুক্ত বিদায়ী মার্কিন দূত নিকি হ্যালি বলেছেন, খাশোগি হত্যায় পার পেতে পারে না সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে এটি সম্প্রচারিত হয়।
সাক্ষাৎকারে নিকি হ্যালি বলেন, ‘আমার মনে হয় সৌদিদের সঙ্গে তাদের কঠিনভাবে কথা বলা দরকার, যাতে তাদের জানাতে পারি আমরা এ ঘটনা (খাশোগি হত্যাকাণ্ড) উপেক্ষা করবো না। এ বিষয়ে আমরা তোমাদের কোনও ছাড় দেবো না। এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি করবেন না।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত এই মার্কিন দূত খাশোগি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে সংবাদমাধ্যমে নাম আসা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দেশটির সরকারপ্রধান হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, খাশোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি সরকার এবং দেশটির সরকারপ্রধান এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) সবাই দায়ী। তারা ছাড় পেতে পারে না; না কোনও ব্যক্তি, না সরকার। তাদের ছাড় পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
এর আগে মার্কিন সাময়িকী দ্য আটলান্টিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিকি হ্যালি বলেন, খাশোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়া উচিত নয়। এভাবে সমর্থন দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য নয়।
দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন খাশোগি। ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক খাশোগি সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত এই সাংবাদিক সৌদি আরবে ফেরার বিষয়ে রিয়াদের চাপ অগ্রাহ্য করে আসছিলেন। প্রথমে রিয়াদের পক্ষ থেকে খাশোগিকে হত্যার কথা অস্বীকার করা হলেও তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলো সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ হাজির করতে থাকে। এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ওঠে। একপর্যায়ে খাশোগি কনস্যুলেট ভবনে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে স্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে এ হত্যার সঙ্গে যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নাকচ করে আসছেন। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার জেরে সৌদি আরবের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জোরালো হয়ে উঠলেও তাতে সায় দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করে আসছেন, দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরও অনেক উপায় রয়েছে। অস্ত্র বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী হবে বলেও মনে করেন তিনি। তবে ট্রাম্পের এ অবস্থানকে সমর্থন দিতে পারছেন না হ্যালি।
আটলান্টিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিকি হ্যালি বলেন, খাশোগি হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে সমর্থন দিতে পারে না। তার ভাষায়, ‘সৌদি আরবের সরকারি কর্মকর্তারা কনস্যুলেটের ভেতরে এ কাজ করেছে। আমরা তাদেরকে ছাড় দিতে পারি না, কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ হত্যাকাণ্ডকে উপেক্ষা করতে পারি না, আমরা কখনও বলতে পারি না যে এটা ঠিক আছে, আমরা কখনও হিংস্র আচরণকে সমর্থন করতে পারি না এবং এগুলো আমাদের বলতে হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের অক্টোবরের গোড়ার দিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূতের দায়িত্ব থেকে আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন নিকি হ্যালি। এ বছরের শেষ নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব ছাড়বেন তিনি। জানুয়ারিতে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন ট্রাম্প মনোনীত হেদার নোয়ার্ট।