X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
রয়টার্সের বিশেষ অনুসন্ধান

সু চির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগীকে প্রকাশ্যে হত্যা, নেপথ্যে সেনাবাহিনী

বিদেশ ডেস্ক
১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:৫৬আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:৩৮
image

এক বিশেষ অনুসন্ধানে প্রায় এক বছর আগে ঘটা সু চি-ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবীর হত্যাকাণ্ডকে সামনে এনেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মিয়ানমারের রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীর প্রভাব কমাতে সংস্কারের ডাক দেওয়া ওই আইনজীবীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তিন সাবেক সেনাকর্মকর্তার যোগসাজশে খুন হয়েছিলেন আইনজীবী কো নি। হত্যাকাণ্ডটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা দাবি করে ওই তিনজনের মধ্যকার সংযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বর্তমান সেনা নেতৃত্বের সংশ্লিষ্টতাও অস্বীকার করছে মিয়ানমার। তবে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রাসঙ্গিক সাক্ষাৎকার ও নথি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দাবি করেছে, হত্যাকারীদের নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এদের অন্তত একজন বর্তমান সেনা নেতৃত্বের অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আইনজীবী কো নি

কো নি মিয়ানমারের বিখ্যাত আইনজীবীদের একজন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশটির সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এবং সামরিক প্রভাব থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য অং সান সুচির রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে হত্যা করা হয় ইয়াঙ্গুন বিমান বন্দরে। সেখানে দাদাকে নিতে এসেছিল তার ২ বছর বয়সী ছোট্ট নাতি। গাড়িতে ওঠার আগ মুহূর্তেই ভিড়ের ভেতর থেকে গোলাপি শার্ট পরা এক লোক এসে কো নির মাথায় পিস্তল ঠেকায়। ট্রিগারের এক চাপে উড়ে যায় তার ঘিলু। রাস্তায় রক্তে লেপ্টে পড়ে থাকে কো নির নিথর দেহ। এসবই ঘটে তার ছোট্ট নাতিটির সামনে।

পুলিশি তদন্তে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকারীকে। সে জানায় চাপে পড়ে আদেশদাতার কথায় সে গুলি করেছে। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে তিন সন্দেহভাজন আদেশদাতা ও অর্থায়নকারীর নাম। এদের তিনজনই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। দুইজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। একজন থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়, এরা সবাই সাবেক কর্মকর্তা, বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত নয়।

ইয়াঙ্গুনে চলা বিচারে অভিযুক্ত তিন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মধ্যে আটক দুইজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে। বিচার প্রক্রিয়া কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা। মিয়ানমারের আনুষ্ঠানিক ভাষ্য, সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বর্তমান সেনা নেতৃত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। তাদের দাবি, তারা উগ্র জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল আর বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করত। তাদের মধ্যে কোনও যোগসাজশ ছিল না। তবে অভিযুক্ত তিন সেনা কর্মকর্তার একজনের বিষয়ে রয়টার্স যথেষ্ঠ পরিমাণ নথি সংগ্রহ করতে পেরেছে, যেসবের মধ্যে রয়েছে আদালত ও বাণিজ্যিক নথি। এসব থেকে জানা গেছে, মিয়ানমারের সামরিকতন্ত্রের সঙ্গে অভিযুক্তের গভীর সম্পর্কের তথ্য। ওই কর্মকর্তার নাম জেয়ার ফিয়ো।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা লিয়ান বাওয়ি একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। তার ভাষ্য, কো নির হত্যার সন্দেহে যে তিন সামরিক কর্মকর্তা অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছ। জেয়ার ফায়ো, সাবেক সেনা কর্মকর্তা অং উইন খিন এবং মিয়ানমার সেনাপ্রধানের অধীনে দীর্ঘদিন কাজ করা আরেক সেনা কর্মকর্তা একে অপরকে ভালোভাবেই চিনতেন। তারা বিচ্ছিন্ন তৎপরতা চালাননি, যা সরকারি ভাষ্য। আদালতে তাদের পূর্বপরিচয়ের বিষয়ে একটি ছবি জমা দেওয়া হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট তিনজন এক সঙ্গে অবসর কাটাচ্ছেন।

হাতে পাওয়া প্রাসঙ্গিক নথি বিশ্লেষণ করে রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জেয়ার ফিয়ো কর্মরত ছিলেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখায়। ২০০৪ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি নেন। তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। ওই বয়সেই তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প পেতে থাকে। একদিকে তিনি যেমন পুলিশ ব্যারাক বানানোর কার্যাদেশ পেতে থাকেন তেমনি মিয়ানমারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও যেতে থাকে বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যাদেশ। নথিগুলো থেকে আরও জানা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী জেয়ার ফায়োকে তাদের যোগাযোগ সরঞ্জাম ব্যবহার করতে দিয়েছিল।

হত্যাকাণ্ডের পর ফিয়োকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন ইয়াঙ্গুনের একটি বৌদ্ধ উপাসনালয় থেকে গ্রেফতার করা হয় তখন তার পরনে ছিল বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের পোশাক। সেখানে বাৎসরিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ফিয়ো আদালতকে বলেছেন, তিনি আরও বেশি করে বৌদ্ধ ধর্মের অন্তর্নিহিত বক্তব্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি আরও বলেছেন, সেনাবাহিনীতে থাকাকালে তিনি প্রশিক্ষক হিসবে কাজ করেছেন। প্রশিক্ষণার্থীদের হত্যার কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি। আন্তর্জাতিক পরিসরে ঘটা হত্যাকাণ্ডের বিশ্লেষণও পেতেন তার শিক্ষার্থীরা। ফিয়োর আইনজীবী দাবি করেছেন, তিনি সেনাবাহিনীর যোগাযোগ সরঞ্জাম ব্যবহারের কোনও সুযোগ পাননি এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে এখন তার কোনও যোগসূত্র নেই। ফিয়ো শুধুমাত্র পুলিশের জন্য কয়েকটা ব্যারাক নির্মাণ করেছেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, জেয়ার ফিয়ো যে সেনাবাহিনীর যোগাযোগ সরঞ্জাম ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছিলেন, তা থেকেই প্রমাণিত হয় তার যোগাযোগ খুবই উচ্চ পর্যায়ে। ফায়োর বন্ধুদের মধ্যে রয়েছেন সেনা সমর্থিত ‘ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির’ সংসদীয় উপ-প্রধান। তিনি নিজে আবার মিয়ানমার সেনাপ্রধানের অধীনে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।

/এএমএ/বিএ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ মাওবাদী নিহত
সর্বশেষ খবর
‘সামরিক বাহিনীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইন কর্মকর্তাদের পেশাগত মানোন্নয়ন জরুরি’
সামরিক বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সেমিনারে বিমান বাহিনী প্রধান‘সামরিক বাহিনীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইন কর্মকর্তাদের পেশাগত মানোন্নয়ন জরুরি’
ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা, ২৮ কর্মীকে বহিষ্কার করলো গুগল
ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা, ২৮ কর্মীকে বহিষ্কার করলো গুগল
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির জন্য বাড়ছে হাহাকার
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির জন্য বাড়ছে হাহাকার
চট্টগ্রামে তিন ভাইবোনকে হত্যা: ২ জনের মৃত্যুদণ্ড
চট্টগ্রামে তিন ভাইবোনকে হত্যা: ২ জনের মৃত্যুদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট