X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেনাবাহিনীর ওপর প্রভাব সৃষ্টিতে অক্ষম সু চি: মাহাথির

বিদেশ ডেস্ক
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:০৮আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:১৭
image

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি সে দেশের সেনাবাহিনীর ওপর প্রভাব সৃষ্টিতে অক্ষম। মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সু চিকে তাদের সহযোগীর ভূমিকা না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মাহাথির। থাইল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নেশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে  মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে মাহাথির বলেছেন, মিয়ানমারকে ও এর মূল নেত্রী অং সান সুচিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবশ্যই চাপে ফেলতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে আসিয়ানকে।
সেনাবাহিনীর ওপর প্রভাব সৃষ্টিতে অক্ষম সু চি: মাহাথির

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা স্যাটেলাইট ইমেজ আর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা-ধর্ষণ-ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত তুলে আনলেও মিয়ানমার ওইসব অভিযোগকে ‘অতিকথন’ কিংবা ‘গুজব’ আখ্যায়িত করে আসছে। সু চি নিজেও সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে থাইল্যান্ডের দ্য নেশন পত্রিকাকে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন ড. মাহাথির মোহাম্মদ।

শনিবার থেকে থাইল্যান্ড সফরে রয়েছেন ড. মাহাথির। সেখানে গিয়ে দ্য নেশন পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন,  কেবল তিনি নিজে নন, বহু বিদেশী অনেক নেতা অং সান সুচির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের প্রশ্নে সরব হওয়ার জন্য। ‘সুচি যখন ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সামরিক জান্তার অধীনে অবিচারের শিকার হয়েছিলেন তখন অন্য দেশগুলো যেমন তাকে রক্ষার জন্য সমর্থন জানিয়েছিল, তেমনই সুচির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য। এক সময় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন অং সান সুচি। কিন্তু এখন তিনি সরকারের একজন উচ্চ পর্যায়ের সদস্য। সেনাবাহিনীর ওপর কোনো প্রভাব বিস্তারে তিনি অক্ষম।’ বলেছেন মাহাথির। সু চিকে সেনাবাহিনীর সহযোগীর ভূমিকা না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাহাথির বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর সহযোগীর ভূমিকা নেওয়া উচিত নয় মাহাথিরের। এক সময় তারা সু চির প্রতি  অন্যায় করেছে আর এখন করছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে।’

সেনাবাহিনীর ওপর প্রভাব সৃষ্টিতে অক্ষম সু চি: মাহাথির

সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে গত বছর আগস্টে রাখাইনে শুরু হওয়া সেনা-অভিযানে হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে থাকে মৌসুমী বাতাসে। মানবাধিকার সংগঠনের স্যাটেলাইট ইমেজ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন আর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে শূন্যে ছুড়তে থাকে সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। এমন বাস্তবতায় নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার পাশাপাশি জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পালিয়ে আসতে না পারা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা এখন অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত। তারা রয়ে গেছেন রাখাইনে নির্মিত ক্যাম্পে। জাতিসংঘ বেশ কিছুদিন আগেই জানিয়েছে, তাদের অবস্থা বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের থেকেও খারাপ। 

সাক্ষাৎকারে মাহাথির বলেছেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকারের কাছে আপিল করতে পারি। তারা সাড়া না দিয়ে  নৃশংসতা অব্যাহত রাখলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের নির্যাতন ও অবিচার বন্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপকে অবশ্যই সমর্থন করা উচিত আসিয়ানের।   যেসব সরকার তার নাগরিকদের প্রতি সুবিচার ও যথাযথ আচরণ করে না, তাদের ওপর কীভাবে চাপ সৃষ্টি করা যায়, আসিয়ানকে তা শিখতে হবে। আসিয়ান যদি এসব নির্যাতিত মানুষের ওপর গণহত্যাকে অনুমোদন করে, তাহলে বোঝা যাবে, আমাদের দায়িত্ব আমরা যথাযথভাবে পালন করছি না।’

রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক বুলডোজার চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত নষ্ট, সামরিক ঘাঁটি নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’  নির্মাণ চলমান রেখেই মিয়ানমার বলে যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চলমান রয়েছে। প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে আসছেন সু চি। বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা ছিল নভেম্বরে। তবে তার আগ মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। সবশেষ ডিসেম্বরে এ নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের কথা। এ নিয়ে কোনও অগ্রগতির খবর জানা যায়নি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আর মানবাধিকার সংস্থা এরইমধ্যে অভিযোগ তুলেছে, মিয়ানমার আসলে প্রত্যাবাসনের ভান করছে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি শরণার্থী রোহিঙ্গাদের একাংশ আশ্রিত হয়েছে মালয়েশিয়াতেও। তাদের কথা বলতে গিয়ে ড. মাহাথির বলেছেন, রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চেয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু তারাও ফিরে যেতে রাজি নয়। তাদের অবস্থান দীর্ঘমেয়াদী হচ্ছে। তবে তারা মালয়েশিয়ার নাগরিক হবেন না। তাদেরকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত রাখা হবে।

/বিএ/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
সর্বশেষ খবর
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, মোকাবিলায় কী করছে ডিএনসিসি
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, মোকাবিলায় কী করছে ডিএনসিসি
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি