X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে নির্বাচনকেন্দ্রিক অনলাইন প্রচারণাকে ঘিরে গুজব ও সহিংসতার আশঙ্কা

বিদেশ ডেস্ক
২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৪৪আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৩৫
image

আগামী বছরের মে মাসে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা নিরূপণের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাও এটি। অনলাইন প্রচারণায় আগে থেকে পারদর্শী বিজেপি জোটের সঙ্গে এবার অনলাইন প্রচারণা যুদ্ধে নেমেছে কংগ্রেস। এরইমধ্যে অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে সফলতাও পেয়েছে দলটি। মনে করা হচ্ছে এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে ফেসবুক, টুইটার ও হোয়াটসঅ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারতে আসন্ন নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নজিরবিহীন ব্যবহার হবে। তবে নির্বাচনে এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তুমুল অপব্যবহার হওয়ারও আশঙ্কা জানিয়েছেন তারা। বলেছেন, এসব মাধ্যমে নানা উত্তেজনাপূর্ণ গুজব ও ভিডিও ছেড়ে বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা উসকে দেওয়া হতে পারে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

কংগ্রেসের একটি অনলাইন প্রচারণা ও মনিটরিং কেন্দ্র
ভারতে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি। এর মধ্যে ৫০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। দেশটিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০ কোটি। আর হোয়াটস অ্যাপ মেসেজিং সার্ভিস ব্যবহার করে ২০ কোটি মানুষ। সেখানে লাখ লাখ টুইটার ব্যবহারকারীও রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে প্রযুক্তিপ্রেমী মোদি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রচারণার কাছে হার মেনেছিল কংগ্রেস। ওই নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর সময় মোদি তার ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একের পর এক টুইট করেছেন। তার দল বিজেপি ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়েছে। অপরদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন সবে ২০১৫ সালে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসতে দেরি হলেও এরইমধ্যে বেশ ভালোই অগ্রগতি করেছে কংগ্রেস।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ডিকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগবিষয়ক অধ্যাপক উশা এম. রড্রিগুয়েজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের আসন্ন নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডাটা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। দুই দলই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এবং নির্বাচনে নজিরবিহীনভাবে এর ব্যবহার হবে।’

ডাটা পোর্টাল ইন্ডিয়া স্পেন্ড জানিয়েছে, গত বছর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর ও বার্তা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ গুজবই ছিল শিশু অপহরণ গ্যাং সংক্রান্ত। অতীতেও যে রাজনৈতিক মতভেদজনিত মৃত্যুর ঘটনা কম প্রাণঘাতী ছিল তা নয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক মিলান বৈষ্ণব ভারতের নির্বাচনি প্রচারণা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ডিসকোর্স এরইমধ্যে তেতো হয়ে উঠেছে এবং তা বমি হয়ে বের হয়ে আসবে।’

ভারতের দুই বড় দলই গুজব ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং একে অপরকে দোষারোপ করে যাচ্ছে। এরইমধ্যে তাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে যুদ্ধরেখা টানা হয়ে গেছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক নীতিমালা ও দলের হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদী মতাদর্শকে আক্রমণ করে যাচ্ছে কংগ্রেস। অপরদিকে কংগ্রেসকে জনসংশ্লিষ্টতাবিহীন অযোগ্য লিবারেল হিসেবে অভিহিত করে আসছে বিজেপি।

ভারতে বেড়েছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় সাড়ে ১৫ কোটি মানুষের কাছে স্মার্ট ফোন ছিল। এখন দেশটির ৪৫ কোটি মানুষের কাছে স্মার্ট ফোন আছে; যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।

জয়পুরে একটি পুলিশ মনিটরিং কেন্দ্র
এ মাসেই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত তিনটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। এ তিন রাজ্যের একটি হলো রাজস্থান। সেখানে কংগ্রেসের অনলাইন প্রচারণা চালানোর একটি শিবির পরিদর্শন করে রয়টার্স। বার্তা সংস্থাটি জানায়, দেয়ালে কিছু টেলিভিশন স্ক্রিন লাগানো ছিল। বিভিন্ন সংবাদভিত্তিক চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলো সেইসব স্ক্রিন দেখে নির্বাচন করা হতো। তিন সদস্যের অডিও, ভিডিও এবং গ্রাফিক বিশেষজ্ঞের একটি দল প্রচারণার অনুষঙ্গগুলোর নকশা করতো এবং তা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছাড়া হতো। দলীয় কর্মীদের নির্দেশনা দিতে অন্য স্বেচ্ছাসেবকরা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতো।  

অনলাইন প্রচারণায় কংগ্রেসের যতোই অগ্রগতি হোক না কেন মোদিকে টেক্কা দেওয়া অতো সহজ কাজ নয়। আন্তর্জাতিকভাবে টুইটারে মোদির অনুসারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৫০ লাখ আর ফেসবুকে ৪ কোটি ৩০ লাখ। অপরদিকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর টুইটার অনুসারীর সংখ্যা মাত্র ৮১ লাখ আর ফেসবুক অনুসারীর সংখ্যা ২২ লাখ। জয়পুরে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেন্টার পরিদর্শনের অনুমতি চেয়ে সফল হয়নি রয়টার্স। তবে দলটির রাজস্থান আইটি ইউনিটের সদস্য ময়াঙ্ক জৈন জানিয়েছেন, তারা কংগ্রেসের মতো একইরকম করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালান। নিজের মোবাইল ফোনে বিজেপির কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ দেখিয়ে জৈন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপারে কংগ্রেসের এখন খানিকটা বোঝাপড়া হয়েছে। তবে তাদের স্বেচ্ছাসেবী জনবল নেই।’

২০১৪ সালে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা বিশেষ করে বিজেপি নেতারা টুইটার ও ফেসবুক বেশি ব্যবহার করেছিলেন। এবার সেখানে যোগ হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপও। একসময় বিধানসভা নির্বাচনে জয়পুর শহর ও এর পার্শ্ববর্তী টংক শহরে জনসমক্ষে বক্তৃতাদান ও পোস্টার প্রচারণার মতো পুরনো পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হতো। আর এখন সেখানে চলে হোয়াট’স অ্যাপ প্রচারণা। রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রচারণার অংশ হিসেবে সেখানে বেশ কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছিল কংগ্রেস ও বিজেপি।

রাজস্থানে ৯০ হাজার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ পরিচালনা করেছে কংগ্রেস। আর বিজেপি জানিয়েছে, তারা সেখানে সরাসরি ১৫ হাজার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করতো আর কর্মীরা আরও ১ লাখ গ্রুপে প্রচারণা চালিয়েছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপে প্রচারণা নিয়ে বিতর্ক আছে। ভারতে শিশু অপহরণজনিত একটি ভুয়া মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ার পর এ প্ল্যাটফর্মটি নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ কিংবা স্বাধীন সত্য অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠানের যাচাই বাছাই ছাড়াই হোয়াটসঅ্যাপে একসঙ্গে শত শত ব্যবহারকারীর গ্রুপে টেক্সট, ফটো ও ভিডিও আদান-প্রদান করা যায়। জয়পুরে অনলাই কন্টেন্ট মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা নিতিন দ্বীপ ব্লাগান বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপই এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’

একজন ব্যবহারকারী কয়জনকে মেসেজ পাঠাতে পারবেন তা এখন সীমিত করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। একসঙ্গে ২০ জনের বেশি মানুষকে মেসেজ পাঠানো যাবে না। তবে ভারতে তা আরও সীমিত করে পাঁচজনের মধ্যে নামিয়ে আনা হয়েছে।

সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ ব্রাজিলে নির্বাচনকালীন হাজার হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের নির্বাচনেও একই কাজ করা হতে পারে।

রাজস্থান নির্বাচনের সময় পুলিশ ১০ সদস্যবিশিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং ইউনিট মোতায়েন রেখেছিল। এ ইউনিট নির্বাচন সংক্রান্ত টুইট ও ফেসবুক পোস্টগুলো শনাক্ত করতো। মনিটরিং রুমের ভেতরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা স্ক্রিনে এ পোস্টগুলো দেখা যেতো এবং তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিল্টার হয়ে নিরপেক্ষ, ইতিবাচক ও নেতিবাচক এ তিন বিভাগের যেকোনওটিতে চলে যেতো। নেতিবাচক পোস্টগুলো বেশি মনযোগ দেওয়া হতো। এগুলোকে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে যাচাই করা হতো এবং কখনও কখনও পরবর্তী তদন্ত ও ব্যবস্থার জন্য তা জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হতো। ওই মনিটরিং ইউনিটের দাবি, কোনও অনলাইন পোস্টকে কেন্দ্র করে যেন সহিংসতা না হয়, তা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য ছিল।

/এফইউ/
সম্পর্কিত
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
সর্বশেষ খবর
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা