গুপ্তহত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের অভিযোগ এনে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডের অভিযোগকে বিবেচনায় নিয়ে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার একটি ইউনিট ও দুই ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও ইউনিটটি ইইউ’র সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত হবে এবং তাদের আর্থিক সম্পদ জব্দ করা হবে। তেহরান অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, ইরান ও ইইউ’র সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ করাই অভিযোগের উদ্দেশ্য।
২০১৮ সালের জুনে নেতৃস্থানীয় এক বিরোধী সমাবেশে ইরানের ব্যর্থ বোমা হামলা প্রচেষ্টার অভিযোগ তোলে ফ্রান্স। ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাকে এ ঘটনায় দায়ী করে দুই ব্যক্তি ও মন্ত্রণালয়ের একটি ইউনিটের বিরুদ্ধে তাদের নিষেধাজ্ঞা চলমান। অক্টোবরে ডেনমার্ক দাবি করে, ইরানি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের গুপ্তহত্যার নীলনকশা ব্যর্থ করেছে তারা। এবার সেই ধারাবাহিকতায় নেদারল্যান্ডের পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তিকে গুপ্তহত্যার অভিযোগ তোলা হলো।
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির ৩ বছরের মাথায় প্রথমবারের মতো এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বের হয়ে গেলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তি বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের পক্ষ থেকে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি প্রত্যাহার করার প্রস্তাব এসেছিল। তবে গোয়েন্দা ইউনিট ও ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি কার্যকর রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইইউ।
মঙ্গলবার ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফ ব্লক বলেছেন, তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ‘কঠোর ইঙ্গিত’ রয়েছে যে ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডের আলমের নগরী ও ২০১৭ সালে হগ-এ ডাচ নাগরিকদের ওপর গুপ্তহত্যা হত্যা চালানোয় ইরান জড়িত। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দুটি ঘটনাতে খুন হওয়া ব্যক্তি ইরানের বংশোদ্ভূত এবং তারা ইরানের শাসক বিরোধী ছিলেন। ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইরানের দুই দূতাবাস কর্মীকে বহিস্কার করেছিল নেদারল্যান্ড। গত অক্টোবর থেকে প্যারিসে একটি বিরোধী গ্রুপের র্যালিতে বোমা বিস্ফোরনের পরিকল্পনায় ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাকে প্রকাশ্যে অভিযুক্ত করে ফ্রান্স। জুনে ইরানের জাতীয় প্রতিরোধ কাউন্সিলের (এনসিআরআই) একটি বৈঠক প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র রাজনীতিবিদেরা অংশ নেন। ওই বৈঠকে বোমা হামলার পরিকল্পনা নস্যাতে সাহায্য করে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, লুক্সেমবার্গ ও জার্মানি। ইউরোপের সীমান্ত থেকে সন্দেহভাজনদের আটকের মধ্য দিয়ে এই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়।
ডেনমার্কও তার দেশে ইরানের বিরোধীদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তোলে। ইইউ-র সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেস স্যামুয়েলসন। ইইউ নিষেধাজ্ঞাকে ‘বিশাল বিজয়’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন এধরণের আক্রমণ যে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ তার প্রতি ‘খুব পরিস্কার বার্তা’ এই নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া এক ব্যক্তি হলেন ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান সাইদ হাসেমি মোগাদাম। এরইমধ্যে ফ্রান্স তার সম্পদকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। বিগত কয়েক মাসে আলবেনিয়াও ইরানের সিনিয়র কূটনীতিকদের বহিস্কার করেছে। সন্ত্রাসী পরিকল্পনায় জড়িত থাকার দায়ে এসব কূটনীতিককে বহিস্কার করা হয়েছে।