লাখ লাখ উইঘুর মুসলমানের আটকাবস্থাকে চীনের নিকৃষ্টতম মানবাধিকার হরণের ঘটনা আখ্যা দিয়েছেন একজন ব্রিটিশ রাজনীতি বিশেষজ্ঞ। সে দেশের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সামনে উপস্থাপিত বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, মাও সে তুং পরবর্তী যুগে এর থেকে ভয়াবহ কোনও মানবাধিকার হরণের ঘটনা চীনে ঘটেনি। উল্লেখ্য, কথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব পরবর্তী চীনে মাও-এর শাসনামলে কয়েক কোটি মানুষ হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়।
চীনে প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলমানের বাস। তাদের প্রতি চীনের আচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে বেইজিং। গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় শিনজংয়ের বাস্তবতাকে ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়ে ওই অঞ্চল সফরের প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছিল। যুক্তরাজ্য সরকারও এনিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে চীনকে তাদের মনোভাব পরিবর্তনের তাগিদ দিয়েছে।
ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে লন্ডন স্কুল অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের পরিচালক স্টিভ তিসাং বলেন, চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজং প্রদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর বেইজিংয়ের অভিযানকালীন ‘ব্যাপক’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে যুক্তরাজ্যর কোনভাবেই নীরব ভূমিকা পালন করা উচিত হয়।
তিসাং বলেছেন, কোনও একটা দেশের নাগরিকদের মধ্যে যদি মূল জনস্রোতের বাইরের ভিন্ন কোনও নৃগোষ্ঠীর মানুষ থাকে আর সেই গোষ্ঠীর প্রতি ১০ জন মানুষের একজন যদি শিবিরে বাস করে, তাহলে বুঝতে হবে সেখানে ভয়াবহ মানবাধিকার হরণ চলছে। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা শিনজংয়ে যে পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখছি তা ১৯৭৬ সালে চেয়ারম্যান মাও যুগ শেষ হওয়ার পর থেকে ১৯৮৯ সালে কঠোর সামরিক অভিযানের সময়েও সেই পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে দেখা যায়নি’।
উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পুনঃশিক্ষাকেন্দ্র নামে পরিচালিত এইসব ভয়াবহ আটককেন্দ্রের কথা অস্বীকার করে আসছিল চীন। অক্টোবরে প্রথমবারের মতো এসবের অস্তিত্ব স্বীকার করে তারা দাবি করতে থাকে, ছোটখাটো অপরাধের জন্য এসব কেন্দ্রে আটক রেখে তাদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুং এর শাসনামলে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনজনিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। ২০১০ সালে সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির গোপন নথির সূত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন, মাও সে তুং এর শাসনামলে অন্তত চার কোটি মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনের কারণে প্রাণ হারিয়েছে।