X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবরোধের মধ্যেও যেভাবে টিকে আছে কাতারের অর্থনীতি

বিদেশ ডেস্ক
১১ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৫৩আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৩০

সৌদি আরবের নেতৃত্বে চারটি আরব দেশের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অবরোধ আরোপের পরও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছে কাতার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুসারে, অবরোধে ১৯ মাস পরও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সচল রাখতে সমর্থ হয়েছে দেশটি। এই পরিস্থিতির সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে কাতার তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির ওপর ভর করে টিকে আছে কাতার

সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগে কাতারের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের জুনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রতিবেশী সৌদি আরব, বাহরাইন, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে কাতারকে ১৩টি শর্ত দেয় তারা। এসব শর্তের মধ্যে ছিল, ইরানের সঙ্গে সহায়তা বন্ধ, আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করা। তবে এসবের কোনও শর্ত মানতে অস্বীকার করে আসছে কাতার। আর সেকারণে ১৯ মাস পরেও বলবৎ রয়েছে সেই নিষেধাজ্ঞা।

কাতারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন দেশটি দুটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হয় বলে জানিয়েছেন এক বিশেষজ্ঞ। লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইন্সটিটিউটের রিসার্চ ফেলো মাইকেল স্টিফেন বলেন, ‘কাতারকে দুটি বড় লড়াই মোকাবিলা করতে হতো। একটি হলো বিশ্বমতকে আশ্বস্ত করা যে, তারা বিন লাদেনের মতো সন্ত্রাসীদের সমর্থন দিচ্ছে না। আর অন্যটি হলো তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা দেখানো। যাতে দেখানো যায় কাতার বিনিয়োগের ভালো জায়গা এবং কাতার বিদেশিদের সরাসরি বিনিয়োগের জন্য শর্ত সহজ করছে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আগে কাতারের আমদানির ৬০ শতাংশেরও বেশি আসতো নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী চারটি দেশের মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে কাতারের খাবার আসতো এসব দেশ হয়ে। ফলে নিষেধাজ্ঞার পরই কাতার সরকারকে দ্রুত তুরস্ক ও ইরানের মধ্য দিয়ে বিকল্প খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও মনোযোগ দিতে হয় দেশটিকে। দ্রুত দশ হাজারেরও বেশি গরু আমদানির মাধ্যমে দুধ সরবরাহ নিশ্চিত রাখা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাতারের সাবেক এক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বিবিসিকে বলেন, কাতার নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ কাতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাতারকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো, পশ্চিমা খাবার কোম্পানির কাছ থেকে মজুদ কেনা ভালো হবে নাকি দীর্ঘমেয়াদে খাবার সরবরাহ নিশ্চিতের চেষ্টা করা ভালো হবে।

কাতারের বিনিয়োগ তহবিল আল রায়ানের সিনিয়র পরিচালক আকবর খান বলেন, অনেকের প্রত্যাশার চাইতেও ভালোভাবে সরকার এই সংকট মোকাবিলা করতে পেরেছে। তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ হলো সরকার নিশ্চিত করতে পেরেছে নাগরিকদের জীবন যেনও আক্রান্ত না হয়। এই অবরোধ আমাদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে কিন্তু ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি।’ নিষেধাজ্ঞার পর গরু আমদানি করে কাতার

অনেকে মনে করেন, কাতার অবশ্য সময়েরও সহায়তা পেয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের তিন মাস পর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ৭০৪ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত গভীর সমুদ্র বন্দর হামাদ বন্দর চালু করে কাতার। এই বন্দরের মাধ্যমে বড় বড় জাহাজে পণ্য আমদানির সুবিধা পায় দেশটি। এই বন্দর চালু হওয়ার আগে কাতারকে কোনও কিছু আমদানি করতে প্রতিবেশীদের ওপর নির্ভর করতে হতো। অন্য দেশ থেকে পণ্য প্রথমে প্রতিবেশী দেশে আমদানি করার পর সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে কাতারে পণ্য নিয়ে আসতে হতো।

এর পাশাপাশি খাবার এবং ভোগ্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের অঞ্চলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরির জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কাতার। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গত বছর তারা মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস ও রাজস্ব বিষয়কমন্ত্রী স্টিভেন ম্নুচিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছে, বোয়িং এর যাত্রীবাহী বিমান কিনতে শত শত কোটি ডলারের অর্ডার দিয়েছে কাতার এয়ারওয়েজ। এছাড়া সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কাতারের বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে।

জার্মানির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরালো করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কাতারের বাণিজ্য কর্মকর্তারা। আকবর খান বলেন, এসব বৈঠকের একটি উদ্দেশ্য হলো এটা জানানো যে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাদের বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে। বাণিজ্য দ্বিপাক্ষিক। ফলে এটি শুধু কাতারের অর্থনৈতিক সক্ষমতা তুলে ধরাই নয়, বরং এটাও তুলে ধরা যে কাতারে বিদেশি কোম্পানি স্থাপনের সুযোগ ক্রমশ বাড়ছে। সুসংহত হচ্ছে কাতারের অর্থনীতি

কাতারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবে সরকার শ্রম আইন, বেসরকারিকরণ, বিশেষ অর্থনেতিক জোন, বিদেশি মালিকানার সীমা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। এসব সংস্কারের মাধ্যমে কাতারে বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিচালনা আরও সহজ হবে।

অবকাঠামোগত সমস্যায় বড় ধরনের বিদেশি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অনেকেই এখনও এসব সংস্কারে আস্থা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন কাতারের সাবেক এক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই উপদেষ্টা বলেন, কাতারের আমলাতন্ত্র ভয়ঙ্কর। ফলে এখানকার বাজার খুব ছোট, সীমিত প্রতিযোগিতা এবং উচ্চমূল্য রয়েছে।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাস রিজার্ভ থাকার কারণে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে পেরেছে কাতার। প্রাথমিকভাবে খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের বিকল্প ব্যবস্থা করতে কষ্ট হলেও পরে তারা তা ঠিক করে নিতে পেরেছে। এলএনজির সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ কাতার। ২০১৭ সালে দেশটি আট কোটি ১০ লাখ টন গ্যাস রফতানি করেছে। এটি বিশ্বের মোট রফতানির ২৮ শতাংশ। এছাড়া কাতার দিনে প্রায় ৬ লাখ ব্যারেল তেল রফতানি করে। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে গ্যাসের ওপর জোর দিতে গিয়ে তেল উৎপাদন সীমিত করে ফেলেছে তারা। দেশটি বলছে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে  নিষেধাজ্ঞার কোনও সম্পর্ক নেই।

জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হওয়া অব্যাহত রয়েছে। আইএমএফ’র হিসাবে ২০১৭ সালে কাতারের অর্থনীতি বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০১৮ সালে এটি ২ দশমিক ৪ শতাংশ আর ২০১৯ সালে তিন দশমিক ৪ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

লন্ডনের ক্যাপিটাল ইকোনোমিস্টের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক অর্থনীতিবিদ জেশন কাতারের গ্যাস রফতানি টুভে বলেন, অন্য উপসাগরীয় দেশের তুলনায় কাতারের বহুমাত্রিক বাণিজ্য খুবই দুর্বল। তিনি বলেন, কাতারের জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। সরকার সহজেই কর্মক্ষম সব নাগরিককে পাবলিক সেক্টরে নিয়োগ করতে পারে।

স্টিফেন বলেন, কাতার না চাইলে দেশটির অর্থনীতিকে বহুমুখী বাণিজ্য-বান্ধব হবে না। সত্যিকার অর্থে আরও বেশি গ্যাস উত্তোলন করেই কাতার টিকে থাকতে পারবে। গ্যাসের টাকা সবকিছু ঠেকিয়ে দিতে পারবে।

/জেজে/এএ/
সম্পর্কিত
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা