পার্লামেন্ট সদস্যরা ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে তার পরিকল্পনাকে সমর্থন না দিলে ব্রিটেনের জন্য বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন প্রশ্নে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির দুইদিন আগে আইনপ্রণেতাদের সমর্থন চাইতে গিয়ে এ সতর্কবার্তা দেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে। আগামী মঙ্গলবার (১৫ জানিুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য এ ভোটাভুটিতে থেরেসা মে-এর পরাজয়েরই আভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে জোটটির সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন থেরেসা। সে ব্রেক্সিট চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদন করানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করা নিয়ে বার বারই হোঁচট খেয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্বিমতকে কেন্দ্র করে পদত্যাগ করেছেন দুই দুইজন ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী। অন্য মন্ত্রণালয়েরও কয়েকজন সরে দাঁড়িয়েছেন। পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও। তুমুল বিরোধিতার মধ্যে থেরেসার ব্রেক্সিট চুক্তিটি পার্লামেন্টে অনুমোদন পাওয়া না পাওয়াজনিত অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।
ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটিকে সামনে রেখে সানডে এক্সপ্রেসে একটি নিবন্ধ লিখেছেন থেরেসা। সেখানে তিনি পার্লামেন্ট সদস্যদেরকে তার পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রেক্সিটের জন্য যারা ভোট দিয়েছেন তাদের রায়কে উপেক্ষা না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের কিছু করলে তার ফল বিপর্যয়পূর্ণ হবে এবং তা হবে গণতান্ত্রিক আস্থার অমার্জনীয় লঙ্ঘন।
থেরেসা মে লিখেছেন, ‘এ সপ্তাহে পার্লামেন্টের প্রতি আমার খুব সাদাসিধে একটি বার্তা আছে। খেলায় না মেতে থাকার কথা ভুলে যান, দেশের জন্য যা ভালো হবে তা করুন।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্য। গত বছর নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবিত চুক্তি অনুমোদন করেছেন সংগঠনটির নেতারা। ২৬ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রসহ ৬০০ পৃষ্ঠার ওই চুক্তিটি বাস্তবায়িত হতে গেলে অবশ্যই তাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতে হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে।
গত ১১ ডিসেম্বরই ব্রেক্সিট চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ভোটাভুটির কথা থাকলেও টোরি এমপি ও লেবার পার্টির এমপিদের কাছ থেকে পরাজয়ের আভাস পাওয়ার পর সে ভোটাভুটি বাতিল করেন থেরেসা। এখনও প্রধানমন্ত্রী মে’র ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতা করে যাচ্ছেন এমপি’রা। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ২০ জন এমপিও সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী জাস্টিন গ্রিনিংও রয়েছেন।তবে অনুমোদন না পেলে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করা হতে পারে। একে নো ডিল ব্রেক্সিট নামে ডাকা হচ্ছে। তবে এ প্রশ্নেও রয়েছে বিরোধিতা। নো ডিল ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে থেরেসা মে যেন বিপাকে পড়েন তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ব্রেক্সিট বিরোধীরা। শুধু বিরোধীরাই নয়,নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারাও এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন,তারা নো ডিল ব্রেক্সিট প্রশ্নে থেরেসার পাশে নেই।
কোনও চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার বিরোধিতাকারী এমপিরা গত ৮ জানুয়ারি অর্থ বিল সংশোধনের পক্ষে ভোট দেন। ৩০৩-২৯৬ ভোটে লেবার নেতা কুপার উত্থাপিত প্রস্তাবটি পাস হয়। এ সংশোধনী অনুযায়ী,চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের পর কর আইনে পরিবর্তন আনতে হলে ব্রিটিশ সরকারকে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। কর আইন পরিবর্তনে সরকার প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে না। এ সংশোধনীর কারণে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে না। তবে ব্রেক্সিটের কর সংক্রান্ত আইনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনতেও (ইইএ’র জায়গায় ইউকে লিখতেও) সরকারকে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে থাকতে হবে। এর নেপথ্য ভূমিকা পালনকারী আইনপ্রণেতাদের আশা,সংশোধিত বিলটি পাস হওয়ায় ব্রেক্সিট ঠেকাতে আইনসভার মাধ্যমে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।