যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যবধানে পার্লামেন্টে পরাজিত হওয়ার পর আস্থা ভোটের মুখে পড়েছেন থেরেসা মে। মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৪৩২ আইনপ্রণেতা। আর পক্ষে ভোট পড়ে ২০২টি। ২৩০ ভোটের বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ের পর বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন থেরেসা মে’র সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই ভোটাভুটি যুক্তরাজ্যকে আগাম নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
২০১৬ সালের এক গণভোটের রায় অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। পরবর্তী সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে জোটটির সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মে। সেই খসড়া চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদনের বাধ্যবাধকতায় ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে আইনপ্রণেতাদের তুমুল বিরোধিতার মুখে ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করেন প্রধানমন্ত্রী মে। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয় সেই ভোটগ্রহণ। ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির সমর্থন সত্ত্বেও বিশাল ব্যবধানে হেরে যায় থেরেসা মে’র প্রস্তাব।
বিশাল ব্যবধানে থেরেসা মে’র পরাজয়ের পর তার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে এই সরকারের নির্ভেজাল অযোগ্যতার বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার সুযোগ পাবে পার্লামেন্ট। তবে বুধবারের আস্থা ভোটে মে’কে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির নেতা আরলিন ফস্টার। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘সরকারকে আরও ভালো একটি চুক্তি নিশ্চিত করার সুযোগ দেব আমরা’।
বিবিসি লিখেছে, সাধারণত এ ধরণের বড় পরাজয়ের সরকারের বৈধতা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে থাকেন। তবে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির পর এক বিবৃতিতে মে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আইনপ্রণেতাদের তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্ট তার কথা বলেছে আর সরকার শুনেছে’। আস্থা ভোটে তার সরকার টিকে গেলে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে আন্তঃদলীয় আলোচনার প্রস্তাব দেন তিনি।
ভোটাভুটির পর থেরেসা মে’র সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘মানুষের আশার চেয়েও বড় পরাজয়’ ছিলো এটি আর এর অর্থ হলো মে’ চুক্তির মৃত্যু ঘটেছে। তবে তিনি বলেন, এই ফলাফল প্রধানমন্ত্রীকে ব্রাসেলসে (ইইউ এর সদর দফতর) ফিরে গিয়ে আরও ভালো চুক্তির দরকষাকষির বিপুল শক্তি যুগিয়েছে। বুধবারের আস্থা ভোটে থেরেসা মে’কে সমর্থন দেওয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।